পুরভোটকে ঘিরে রাজনৈতিক পারদ ক্রমশ বাড়ছে। টিকিট পাওয়ার জন্য তদ্বির চলছে জোর কদমে। যাদের জয়ী হওয়ার সব চেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরকেই প্রার্থী পদ দেওয়া হবে, এমনটাই জানা যাচ্ছে শাসক দল সুত্রে। কলকাতা পুরসভায় টিকিট বিলির ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীর ভাবমূর্তি, তার সাংগঠনিক ক্ষমতা যাচাই করে প্রার্থীপদ দেওয়া হবে। পিকের রিপাের্টকে সামনে রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিজেপিও দেখেনিতে চাইছে। প্রার্থী তালিকা থেকে তৃণমূলের কোন কোন মুখ বাদ পড়ে। সত্যিকারের যদি কেউ বঞ্চিত হয় বিজেপিও গােপনে তার সঙ্গে যােগাযােগ রেখে কাজ করবে, এমনটাই জানা গিয়েছে। বাম কংগ্রেস নিজেদের মধ্যে আসন সমঝোতা দ্রুত সেরে ফেলার পক্ষপাতি।
এদিকে, পুরভােটকে সামনে রেখে পরে বিভিন্ন ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে যােগাযােগ রেখে চলেছে পিকে’র টিম, ছােট বড় দোকানের মালিকদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে পুরভােটে তৃণমূলের গ্রহণযােগ্য প্রার্থী কে কে হতে পারেন। যতদূর জানা গিয়েছে, প্রার্থী তালিকা তৃণমূলের চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘােষণা শুধুমাত্র সময়ের অযােগ্য।
আগামী ২ মার্চ নেতাজি ইন্ডােরে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে তৃণমূল সুপ্রিমাে তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য রাখার কথা। ইতিমধ্যে প্রশান্ত কিশােরের টিমের সদস্যরা জেলায় জেলায় যাচ্ছেন আগামী ২ মার্চের বৈঠকে কারা কারা থাকবেন তার আমন্ত্রণপত্র নিয়ে।
পুরভােটকে সামনে রেখে তৃণমূল সুপ্রিমো কি বলেন এখন সেটাই দেখার। এবারই প্রথম পুরভােটের দিনক্ষণ ঘােষণা হওয়ার আগে তৃণমূলের কলকাতা ও হাওড়ার প্রার্থী তালিকা ঘােষণা হওয়ার সম্ভাবনা। আগামী ১০ মার্চ পুরভােটের দিনক্ষণ ঘােষণা করে নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি ঘােষণা করতে পারে। তবে তার আগে ১০ মার্চ তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধিত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। পুরভােটকে সামনে রেখে পাঁচজনের একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করেছে তৃণমূল। শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি এই হাইপাওয়ার কমিটিতে রয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করবে জেলা কমিটি। পর্যবেক্ষকরা তাদের মতামত দেবেন। এক্ষেত্রে জটিলতা না কাটলে তা আলােচনা হবে তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে। শুধু পিকে’র টিমের রিপাের্টই নয়, গােপনে জেলা পুলিশও একটি রিপাের্ট তৈরি করছে। কোন কোন প্রার্থীর ভাবমূর্তি ভালাে, কে প্রার্থী হলে জয় সহজে আসবে সেই রিপাের্ট তৈরির কাজও চলছে। যদিও এই বিষয়ে শাসকদল ও জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা মুখ খুলতে নরাজ। দলের প্রতি অনুগত এবং জয় যিনি ছিনিয়ে আনতে পারবেন তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে তৃণমূল।
বেশ কয়েকটি জায়গায় পুরভােটকে সামনে রেখে বিজেপিও দেওয়াল লিখন শুরু করেছে। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় পুরভােটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই মাঠে নেমে গিয়েছে বিজেপি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ সম্পর্ক সম্প্রসারণের উপর জোর দিচ্ছেন। মস্তিষ্ক দিয়ে পুরভােট লড়তে চাইছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের মাইনাস পয়েন্টগুলি তুলে ধরে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য বিজেপি নিজের আইটি সেলকে প্রস্তুত করছে।
বাম-কংগ্রেস অবশ্য নিজেদের সংগঠনকে হাতিয়ার করে পুরভােটে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে চাইছে। যদিও এই লড়াইটা সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির। ১৮’টি লােকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল সাফল্য অনেকটা থিতিয়ে গিয়েছে। পুরভােটে ভালো ফল করতে না পারলে আগামী বিধানসভা নির্বাচন বিজেপির কাছে কঠিন হয়ে পড়বে। সেকথা মাথায় রেখে বিজেপিও মরিয়া হয়ে উঠেছে।
যদিও তৃণমূল কাউন্সিলররা নিজেদের জমি বিনাযুদ্ধে বিজেপিকে ছেড়ে দেবেনা। কারণ, পুরভোটে হেরে গেলে মান-মর্যাদার পাশাপাশি দলের কাছেও গুরুত্ব অনেকখানি কমে যাবে। যা পুনরূদ্ধার করা যথেষ্টই কঠিন। তাই এই ম্যাচ তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছে রীতিমত মরন-বাঁচন লড়াই। ফলে ফুরসত নেওয়ার সময় নেই। পাঁচ বছরের উন্নয়নের রিপোর্ট কাউকে সামনে রেখে মাঠে নামছে তৃণমূল নেতারা। এখন দেখার নাগরিকদের রায় কোনদিকে যায়।