মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির কাছে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয় উত্থাপন করবেন। একথা উল্লেখ করে হােয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আমেরিকার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। আগামী সােমবার ট্রাম্পের ভারত সফর শুরু হচ্ছে।
হােয়াইট হাউজে এক পদস্থ মার্কিন অফিসার সাংবাদিকদের কাছে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর প্রকাশ্য বক্তব্যে এবং বৈঠকে আমেরিকার অভিমত প্রকাশ করবেন। তিনি এসব বিষয়ের সঙ্গে বিশেষভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন। সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে মােদির সঙ্গে আলােচনা করার কোনও পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে অফিসারটি ওই মন্তব্য করেন।
সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন এই প্রথম ভারতে নাগরিকত্বের পরীক্ষায় ধর্মকে ইস্যু করা হয়েছে। ভারত সরকারের বক্তব্য, ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে মুসলিম অধ্যুষিত তিনটি দেশ থেকে যারা ২০১৫ এর আগে পালিয়ে এসেছে সরকার তাদের সহায়তা করবে। অপরদিকে সমালােচকদের বক্তব্য, এই আইনে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে এবং এতে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লংঘিত হয়েছে।
সাংবাদিকদের কাছে ওই মার্কিনি অফিসার বলেন, ‘আমাদের বিশ্বজনীন মূল্যবােধ ও আইনের শাসন তুলে ধরার অঙ্গীকার রয়েছে। ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। সেই ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য আমরা ভারতকে উৎসাহিত করে যাব।’ সিএএ ও এনআরসি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে কয়েকটি বিষয় তুলেছেন আমরাও তা নিয়ে ভাবছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী মােদির সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এইসব বিষয় নিয়ে আলােচনা করবেন। ভারত তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য তুলে ধরবে ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মর্যাদা দেবে তার দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। অবশ্য ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মর্যাদাদান এবং সমস্ত ধর্মকে সমান চোখে দেখার কথা ভারতের সংবিধানেই বলা আছে। ফলে প্রেসিডেন্টের কাছে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আলােচনায় এসব উঠবে বলে আমি নিশ্চিত।’
ভারতের একটা জোরালাে গণতান্ত্রিক ভিত্তির কথা উল্লেখ করে ওই অফিসার বলেন, ধর্মীয়, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দেশ ভারত। বস্তুত চারটি বড় বিশ্ব ধর্মের জন্মই ভারতে। প্রধানমন্ত্রী মােদি নির্বাচনে জয়লাভ করার পর প্রথম ভাষণে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাৰ্কি অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ভারত ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রাখবে এবং আইনের শাসনে সবাইকে সমান চোখে দেখবে তার দিকেই সারা বিশ্ব নিশ্চিতভাবে তাকিয়ে আছে।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সফর শুরুর আগে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মার্কিন কমিশন সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনকে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় করে ভারত সম্পর্কে একটি নথি প্রকাশ করেছে। মােদি সরকার যখন দেশের একটা ‘ভালাে’ মুখ তুলে ধরতে চাইছে, যার জন্য বস্তিগুলিকে পর্যন্ত পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে তখন কমিশন তার নথিতে সিএএ ও আসন্ন নাগরিকপঞ্জিজনিত সমস্যার কথা তুলে ধরেছে।
এই কমিশন হচ্ছে একটি স্বাধীন সরকারি সংস্থা। সারা বিশ্বে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি হুমকির খবর জানানাে, তদারকি ও বিশ্লেষণের দায়িত্ব দিয়ে মার্কিন কংগ্রেসই এই সংস্থা গঠন করেছে। এই কমিশন মার্কিন সরকারে কাছে বিদেশ নীতির বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে। ধর্মীয় নির্যাতন বন্ধ করা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসের প্রসার ঘটানােই তাদের কাজ।
কমিশনে রিপোর্ট বলা হয়েছে, বিজেপি’র মুসলিম বিরােধী মনােভাব দেশের আইনকে প্রভাবিত করছে। এনআরসি’র তালিকা থেকে বাদ পড়লেও অ-মুসলিমদের ক্ষেত্রে সিএএ একটা রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করবে। কিন্তু যারা বাদ পড়বে তাদের জন্য কোনও প্রতিকারের ব্যবস্থা বিজেপি সরকার রাখেনি।