লােকসভা নির্বাচনের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উঁচু গলায় বলেছিলেন আমি মুসলিম তােষণ করি। বৃহস্পতিবার ভারত সেবাশ্রমের মঞ্চে তাঁর পূর্ব মন্তব্য থেকে সরে এলে মমতা বললেন, কেউ কেউ বলে আমি মুসলিম তােষণ করি। আসলে আমি মানবতার তােষণ করি।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে সরাসরি বিজেপির আক্রমণের কথা ছিল না। কিন্তু পরােক্ষে এদিন তিনি বিজেপির ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের সমালােচনা করে বলেন, আজকাল কেউ কেউ উদ্ভট ধর্মের কথা বলে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশটাকে ভাগ করতে চায়। সেই অনুযায়ী ভাবে যাদের পছন্দ করবে, তাদেরকে দেশে থাকতে দেবে, আর যাদের পছন্দ করবে না, তাদের দেশ থেকে বার করে দেবে। কিন্তু আমরা ওদের ধর্মে বিশ্বাসী নয়।
বৃহস্পতিবার ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দের একশাে পঁচিশতম জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান সব ধর্মের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। মমতা এদিন সবাইকে সম্ভাষণ করে বলেন, প্রণবানন্দের জন্মদিনে এখানে সমস্ত ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ এসেছে। এটাই পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি।
এদিন মমতা টেনে আনেন, তাঁর শিকাগাে শহরে স্বামীজির আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করার অনুষ্ঠান বাতিল করার কথা। মমতা এদিনে বলেন, আমাকে শিকাগাে থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। পরে আমাকে জানানাে হয়, সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। আমি কিছু মনে করিনি। কারণ, আমি বুঝেছিলাম ওদের শিকাগাে অনুষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এর পরেই মমতা মুসলিম তােষণের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, তিনি মােটেও মুসলিম তােষণ করেন না। তিনি মানবতার তােষণ করেন। মমতার এই বক্তব্যের সমালােচনা করে রাজনৈতিক মহল। কারণ লােকসভা নির্বাচনের ফলাফলে মেরুকরণের জন্য বিজেপি এই রাজ্য থেকে আঠেরােটি আসন পেয়ে যায়।
লােকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনে হিন্দু-মুসলমান হয়েছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের পক্ষে মুসলিমরা হাত খুলে ভােট দিয়েছে, এই ভাবনা থেকে তিনি বলেছিলেন, আমি ইফতারে যাব। হ্যাঁ আমি তাে মুসলিম তােষণ করি। যে গরু দুধ দেয়, তার লাথিও খাব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বক্তব্যের পরে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। এবার পুরভােটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবতারই জয়গান করলেন।