• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

গান স্যালুটে বিদায় তাপস পাল’কে

মঙ্গলবার ভাের রাতেই আসে সেই দুঃসংবাদ। সেই সরল হাসিমুখের 'সাহেব' আর নেই। চলে গিয়েছে তাপস পাল।

তাপস পালের অন্তিম শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমবেদনা প্রকাশ করলেন তাপস পালের উদ্দেশে। (Photo: IANS)

মঙ্গলবার ভাের রাতেই আসে সেই দুঃসংবাদ। সেই সরল হাসিমুখের ‘সাহেব’ আর নেই। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে হেরে গিয়েছেন তিনি। চলে গিয়েছে তাপস পাল । তারপর থেকেই তাঁকে ঘিরে থাকা বিতর্কের কাটা সরিয়ে শােকের গোলাপ পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ছে শহরের আনাচে কানাচে। গলফ ক্লাব রােডের আবাসনে, টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায়, ফুল উপচে পড়া রবীন্দ্রসদনে, কেওড়াতলা শ্মশানে সর্বত্র ছেয়ে যাচ্ছে সেই শােক।

একসময় যে অভিনেতাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য বহু মানুষ দৌড়ত, সেভাবেই অন্তিম যাত্রার আগে বহু মানুষ এলেন তাপস পালকে শেষ বিদায় জানাতে। সেই সময় কী তাঁর পরিচয়? তিনি বহু সুপারহিট ছবির অভিনেতা? নাকি বিধানসভা ও লােকসভায় পরপর জেতা রাজনীতিক? সেলুলয়েডের ‘প্রিয়’ অভিনেতা নাকি রাজনীতির ‘অপ্রিয়’ নেতা সে প্রশ্নের উত্তর ঝাপসা হয়ে রয়ে গেল চোখের জলে।

মঙ্গলবার রাতেই মুম্বই থেকে কলকাতার গলফ ক্লাব রােডের বাড়িতে আনা হয় তাপস পালের মরদেহ। বুধবার সকালে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ােয় শায়িত রাখা হয় তাঁর নিথর দেহ। যেখানে তাঁর উত্তমকুমারের পরবর্তী যুগে বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ভাঙাচোরা দেউটিতে নতুন করে আলাে জেলে দেওয়া আশির দশক থেকে। এদিন স্টুডিওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অগণিত মানুষের ভিজে চোখের তারায় জ্বলছিল মােমবাতি।

স্টুডিওপাড়া থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় তাপস পালে মরদেহ আনা হয় রবীন্দ্রসদনে। শায়িত রাখা হয় সকলের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য। সেখানে গিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, মন্ত্রী ও গায়ক ইন্দ্রনীল সেন, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী, অশােক বিশ্বনাথন, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, ভরত কলের মতাে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা চোখের জলে বিদায় জানালেন তাদের প্রিয় অভিনেতাকে।

নন্দনের সামনে তাপস পালকে শেষ শ্রদ্ধা জানান অভিনেতা সােহম চক্রবর্তী। তাপস পালের নিথর শরীরের ওপর স্তুপ হয়ে উঠতে থাকে ফুলের মালা, পুড়তে থাকে গন্ধবিধুর ধুপ। রবীন্দ্রসদনে এদিন তাঁকে বিদায় জানাতে এলেন কত মানুষ, যাঁদের সঙ্গে হয়তাে কিছুটা দুরত্ব ঘনিয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুই যে বুঝিয়ে দেয় কোথা বিচ্ছেদ নাই।

এদিন তাপস পালের অন্তিম শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমবেদনা প্রকাশ করলেন তাপস পালের উদ্দেশে। তাঁর অকালপ্রয়াণের নেপথ্যে বিরােধী রাজনীতির প্রতিহিংসার আগুনের আভাস দিলেন। কিন্তু ততক্ষণে তাপস পালের প্রাণহীন শরীরটা অপেক্ষায় রয়েছে অন্তিম আগুনের। সেই আগুন ছুঁতে রবীন্দ্রসদন থেকে কেওড়াতলা শ্মশানের পথে তাঁর মরদেহ নিয়ে শেষযাত্রার মিছিল শুরু হয়। যার পুরােভাগে ছিলেন মন্ত্রী অরবপ বিশ্বাস, মেয়র ফিরহাদ হাকিমসহ তৃণমূল নেতারা।

কেওড়াতলা শ্মশানে যখন তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয়, তাকে দেখতে সেখানে ছিল বহু অনুরাগীর ভিড়। সতীর্থ কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, ভরত কল টলিগঞ্জের বহু পরিচিত মুখ এদিন উপস্থিত হয়েছিলেন কেওড়াতলায়।

অবেশেষে কেওড়াতলায় বেজে উঠল গান স্যালুটের বিদায় সুর। শুন্যে ছোড়া গুলির ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেল অভিমানের শবটুকু ধোঁয়াশা। নামিয়ে রাখা বন্দুকে ভূমিস্পর্শ করল সব অভিযােগের তীর। তারপর ধীরে ধীরে শুরু হল তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং তা শেষও হয়ে গেল একসময়। সেইসঙ্গে তাঁকে ঘিরে থাকা সব বিতর্ক শেষ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। তাপস পালের জীবনে সুপারস্টারের আলাে কিংবা কালিমালিপ্ত রাজনৈতিক জীবনের কালাে সব তুচ্ছ হয়ে গেল সেই আগুনের ছোঁয়ায়।