রােজ রেকর্ড ভাঙছে করােনাভাইরাসের খবর। মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৫০০ ছুঁতে চলেছে। আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে ৬৩ হাজার জন।
বৃহস্পতিবার মারণ ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে আরও ১২১ জনের। এর ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪৮৮। তবে ওই একদিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বৃহস্পতিবার আরও ৫০৯০ জন করােনায় আক্রন্ত হয়েছেন।
এত দিন শুধুমাত্র বিশেষ ‘কিট’ দিয়ে করা পরীক্ষায় শরীরে ভাইরাস ধরা পড়লেই সেই ব্যক্তিকে আক্রান্ত হিসেবে ঘােষণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এই কিটের প্রবল সঙ্কট দেখা দেওয়ায় চিনা প্রশাসন বুধবার থেকে নভেল করােনাভাইরাস পরীক্ষার নতুন নিয়ম চালু করেছে। এখন থেকে সিটি স্ক্যানের রিপাের্টকেও গ্রাহ্য করা হবে। এই ব্যবস্থা চালুর পর শুধুমাত্র উহান থেকেই কয়েক হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। একধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে মৃতের সংখ্যাও।
উদ্বেগের বিষয় হল, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি শহর থেকে পরিবর্তিত পরিসংখ্যান এসেছে। অন্য শহরগুলি তথ্য আপডেট করার পর পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রশাসনের এতদিনের কার্যকলাপ নিয়ে।
শুরু থেকেই একাধিক আন্তর্জাতিক মিডিয়া দাবি করে আসছে, আক্রান্ত এবং মৃতের সঠিক সংখ্যা চিন জানাচ্ছে না। নয়া পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসার পর সেই দাবি আরও জোরাল ভাবে উঠতে শুরু করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ভিক্টর শিয়ের বক্তব্য, এ থেকেই বােঝা যাচ্ছে যে চিনা প্রশাসন এত দিন এই ভাইরাস নিয়ে দু’ধরনের তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করছিল। একটি তথ্য ভাণ্ডার সাধারণের সামনে আনা হয়নি। বেজিং অবশ্য এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
এ দিকে, নতুন পরিসংখ্যান সামনে আসার পর বিধিনিষেধ আরও কড়া করে দিয়েছে চিন সরকার। হুবেই প্রদেশে জারি করা হয়েছে নতুন নির্দেশিকা। ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করছেন এমন মানুষ ছাড়া বাকিদের ঘর থেকে বেরনাে একেবারে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করলে তাঁদের হেফাজতে নেবে পুলিশ।
এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পরেই উহান প্রদেশের আঞ্চলিক প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে তিন জন রাজনীতিকের পদ গেল। ফলে রােগের সংক্রমণের পাশাপাশি এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতাের জারি রয়েছে। এ সবের মধ্যে উদ্বেগের খবর আসছে চিনের বাইরে থেকেও।
জাপান এ দিন সরকারি ভাবে স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এই দেশে এক ট্যাক্সিচালকেরও আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। আপাতত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে তাঁর যাত্রীদের সম্পর্কে। চালক জানিয়েছেন, তিনি কিছু দিন আগে এক চিনা নাগরিককে গন্তব্যে নিয়ে গিয়েছিলেন।
জাপানের উপকূলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজে এ দিন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। ইউরােপ থেকে নবম ব্যক্তির আক্ৰান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। তিনি লন্ডনের বাসিন্দা। গত কয়েক দিনে লন্ডনের টিউবে কয়েকবার যাতায়াত করেছেন। এই তথ্য পাওয়ার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যায় তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক চলছে প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে। জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসছে ইউরােপীয় ইউনিয়নের দেশও।