কর্মক্ষেত্রে টানা বসে কাজ করা বর্তমানে একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। ক্রমাগত বসে থাকা নানা বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে নানা ব্যাধি সৃষ্টি করে, যা সরাসরি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ নিউরোলজির গবেষকদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায়, দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে উদ্ভূত জটিলতা হ্রাসে শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে, শারীরিক কসরত করেন যাঁরা, তাঁদের ডিমেনশিয়া, স্ট্রোক, উদ্বেগ, হতাশা এবং ঘুমের ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। চিনের সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি এবং গবেষণার একজন লেখক জিয়া ইউ বলেন, ‘এই গবেষণাটি ফিজিক্যাল ওয়ার্কআউট এর ভূমিকাকে, শারীরিক পরিস্থিতির পরিবর্তনযোগ্য কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে- যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এই রোগের ঘটনা হ্রাস করতে পারে।’
এই সমীক্ষাটি গড়ে ৫৬ বছর বয়সি ৭৩,৪১১ জনের উপর করা হয়েছিল যাঁরা টানা সাত দিন ধরে তাঁদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করার জন্য একটি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত ছিলেন।
শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময় শরীরের শক্তি বা শক্তি ব্যয়ের পরিমাপ করতে মেটাবলিক সমতুল্য (এমইটি) ব্যবহার করা হয়। পরিমাপের পর পাঁচটি রোগের বিকাশের সম্ভাবনাকে কম, মাঝারি থেকে জোরালো এই তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। দেখা গেছে যাঁরা টানা বসে বসে কাজ করেন, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৫৪% বেশি, তুলনায় যাঁরা তুলনায় কম সময় বসে কাজ করেন, তাদের এই রোগগুলির সম্ভাবনা ৫%।
যাঁদের কোনও রোগের সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে, তাঁদের গড় দৈনিক মাঝারি থেকে জোরালো শারীরিক ক্রিয়াকলাপে, শক্তি ব্যয় হয়েছে প্রতি কিলোগ্রামে ১.২২ কিলোজুল। যাঁদের ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ০.৮৫ কিলোজুল, যাঁদের ঘুমের ব্যাধির বিকাশ হতে পারে বলে অনুমান, তাদের ক্ষেত্রে শক্তি ব্যয়ের পরিমাণ ০.৯৫ কিলোজুল, স্ট্রোকের সম্ভাবনা রয়েছে যাঁদের তাঁদের শক্তি ব্যয়ের পরিমাণ ১.০২ কিলোজুল, হতাশার ক্ষেত্রে শক্তি ব্যয়ের পরিমাণ ১.০৮ এবং উদ্বেগের ক্ষেত্রে ১.১০ কিলোজুল।
যেহেতু এই গবেষণাটি অসংখ্য অংশগ্রহণকারীদের উপর পরিচালিত হয়েছিল এবং এমন ডিভাইসগুলির ব্যবহার হয়েছিল যা, ক্রিয়াকলাপের স্তরগুলির উদ্দেশ্যমূলক পরিমাপ সরবরাহ করে- এটি রোগের বিকাশ সনাক্ত করতে বিপুল সহায়তা করেছে।
জিয়া ইউ বলেন, ‘এটা খুবই আশাব্যঞ্জক যে, জীবনযাত্রার এই পরিবর্তনগুলি করতে এটি মানুষকে উৎসাহিত করেছে। ভবিষ্যতে এই রোগগুলির সম্ভাবনা হ্রাস করতে পারা যাবে।’