• facebook
  • twitter
Wednesday, 19 March, 2025

স্বচ্ছ তালিকায় সুষ্ঠু ভোট

স্বচ্ছ ভোটার তালিকা। স্বচ্ছ ভোট। এটা চায় সবাই— আমি, আপনি এবং রাজ্যবাসী। কিন্তু ভোটার তালিকা কি স্বচ্ছ হওয়ার জো আছে?

ফাইল চিত্র

স্বচ্ছ ভোটার তালিকা। স্বচ্ছ ভোট। এটা চায় সবাই— আমি, আপনি এবং রাজ্যবাসী। কিন্তু ভোটার তালিকা কি স্বচ্ছ হওয়ার জো আছে? তালিকায় অবলীলায় থেকে যাচ্ছে ভুয়ো ভোটাররা— অনেকেই বলেন ভূতেরা। এদের তাড়িয়ে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে, ভোটার তালিকা কি আদৌ স্বচ্ছ হয়েছে? ভূতেরা নেই সেখানে? সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচন হবে অবাধ এবং সুষ্ঠু— তা হবে স্বচ্ছ ভোটার তালিকার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সঠিক ভোটার তালিকার দাবিই করা হয়, কিন্তু তা সঠিক হয় না।

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরাট এক সমাবেশে তৃণমূরে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে উদাত্ত আহ্বান— ভোটার তালিকা সাফাই করার কাজে এখন থেকেই নামতে হবে। কারণ ২০২৬ বিধানসভার ভোটের ঘণ্টা বাজানো হয়েছে। এই ভোটও হবে আবার খেলা— এই খেলায় আমরাই জিতব। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পেয়ে তৃণমূল চতুর্থ বারের জন্য সরকার গড়বে। তবে এবারের খেলায় গোল করতে বলটা একটু জোরে মারতে হবে। ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ নিয়ে কয়েকদিন হল সরব হয়েছে তৃণমূল। তাই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তিনি গর্জে উঠে বললেন, ভোটার তালিকা থেকে ভূতদের তাড়াতে হবে। এ কাজে গড়িমসি করলে চলবে না। এখন থেকেই কাজে নামতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি অভিযোগ আনেন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, গুজরাত, হরিয়ানা এবং অপর কয়েকটি রাজ্যের মানুষদের এ রাজ্যের ভেটের তালিকায় ঢুকিয়েছে। তিনি তাঁদের নামও বলে দেন।

মমতা বলেন, এটা বাংলা দখল করার খেলা, আমরা তা করতে দেব না। তাই তিনি সভায় বলেন, ‘আপনারা সজাগ থাকুন— ভূতদের তাড়াতে হবে। তার জন্য এবার বড় খেলা। এ খেলায় জিতে প্রমাণ করতে হবে এই বাংলার মানুষ তৃণমূলকেই চায়। তৃণমূলই তাদের সুখ-দুঃখের সাথী। এই সূত্রে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিবকে এই পদে বসানো হয়েছে।
ভোটার তালিকায় সংশোধন বা সংযোজনের প্রক্রিয়া চলে রাজ্য প্রশাসনেরই তত্ত্বাবোধনে— এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ সহ কয়েকটি জেলার নাম উল্লেখ করে ভোটার তালিকায় বহিরাগতদের নাম ঢোকার অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু এ কাজ বেআইনি। সুতরাং ২০২৬ নির্বাচনে ভোট হবে স্বচ্ছ ভোটার তালিকার ওপর নির্ভর করে— এবং তা হবে ভুয়ো ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী পুনর্বার বলেন, এটা বাংলা দখল করার খেলা। আমরা তা করতে দেব না। ভোটার তালিকায় এই গোলমার ধরতেদলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কমিটি সঠিক দায়িত্ব পাবন করবে।

যখনই রাজ্যে নির্বাচন আসে, সে লোকসভারই হোক অথবা বিধানসভা— তখন ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারদের নাম দেখে সরব হন সব দলের নেতারা। কিন্তু এ পর্যন্ত, রাজ্যে যত নির্বাচন হয়েছে, কোনও নির্বাচনেই স্বচ্ছ ও নির্ভুল ভোটার তালিকার ওপর নির্ভর করে হয়নি। কেউ ভোটার তালিকা থেকে ভুয়ো ভোটারদের ভাড়াতে পারেনি। ২০২৬ নির্বাচন এখন অনেক দূরে হলেও, ভোটার তালিকা নিয়ে সব পক্ষই আবার প্রশ্ন তুলেছে। যাঁরা মৃত, তাঁদের নামও ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছে। তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে যেহেতু বাদ দেওয়া হয়নি, তাঁদের নাম করে অন্যরা ভোট দিচ্ছে।

দীর্ঘ বামফ্রন্টের শাসনকালে অনেকগুলি নির্বাচন হয়েছে। তখনও ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু স্বচ্ছ ভোটার তালিকা বাম জমানাতেও হয়নি। তখনও ভোটার তালিকায় অসংখ্য ভুয়ো ভোটারদের নাম দেখা গেছে এবং তারা ভোট দিয়েছে। সীমান্ত জেলাগুলিতে— যেমন মালদা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর জেলাগুলিতে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ে। যে দল সেখানে শক্তিশালী, সেই দল ওই অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার তালিকায় ঢোকানোর জন্য সবরকম চেষ্টা করে। তাঁদের নামে আধার কার্ড, রেশন কার্ড তৈরি করে দেয়। বাংলাদেশের ওই অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যায়। তাঁদের ভাষা বাংলা, আচার-আচরণও বাঙালিদের মতো। সুতরাং পুলিশের পক্ষে তাদের চিহ্নিত করা দুরূহ ব্যাপার। সুতরাং তারা ভোটার তালিকায় সহজেই স্থান পায়। এই প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন হল— কিন্তু সুরাহার কোনও ব্যবস্থা এ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ উঠেছে— কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, এই রাজ্যে ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম রয়েছে—একই নাম একাধিক জায়গায় রয়েছে। এই ভুয়ো ভোটারদের নামগুলি বাদ দেওয়ার কথা অনেকবার বলেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করে কে? কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দপ্তর, যা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে। পুর নির্বাচনে মৃত মানুষের নামে ভোট পড়েছে। তাতে লাভবান কারা? তাঁর কটাক্ষ সর্ষের মধ্যেই ভূত। ‘এখন ভূত বলছে ভূত তাড়াব’। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘কারচুপি করার ক্ষমতা তাদের আছে, যারা সরকারে আছে।’ সুতরাং কারচুপির অভিযোগ অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে কী লাভ?

News Hub