• facebook
  • twitter
Sunday, 16 March, 2025

‘ভুতুড়ে’ ভোটার খুঁজতে পথে নামলেন ফিরহাদ

এই অভিযানকে বিজেপি 'নাটক' বলে কটাক্ষ করলেও, তৃণমূলের বক্তব্য, তারা শুধুমাত্র প্রকৃত ভোটারদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে চায়।

ভোট যত এগিয়ে আসছে, ভোটার তালিকা নিয়ে উত্তাপ ততই বাড়ছে রাজ্য-রাজনীতিতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এবার একেবারে ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে ময়দানে নেমেছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ, সর্বত্রই চলছে ভোটার তালিকা যাচাই অভিযান। শনিবার সকাল থেকেই এই কাজে নেমে পড়েন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব বিধানসভা কেন্দ্র তথা মেয়রের নিজস্ব ওয়ার্ড থেকে শুরু হয় এই অভিযান। একদিকে ভবানীপুরে ভোটার তালিকা হাতে একের পর এক বাড়ি যাচাই করছেন ফিরহাদ। অন্যদিকে দিনহাটার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটারদের পরিচয় মিলিয়ে দেখছেন উদয়ন গুহ।

নিজের এলাকায় ভোটার তালিকা যাচাই করতে নেমে এদিন ফিরহাদ বলেন, ‘আমি এই এলাকাতেই জন্মেছি, বড় হয়েছি। অথচ এমন কয়েকজনের নাম তালিকায় আছে, যাঁদের আমি কোনোদিন দেখিনি!’ তিনি আরও জানান, শুধু ভবানীপুর নয়, পুরো কলকাতা জুড়েই এই অভিযান চলবে। অন্যদিকে, এদিন উদয়ন গুহকেও দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে, তাঁদের ভোটার কার্ড যাচাই করতে এবং অনলাইনে ভোটার তালিকার তথ্য মিলিয়ে দেখতে। একইভাবে ভবানীপুরে ভোটার তালিকা হাতে বাড়ি বাড়ি যাচাই করেন ফিরহাদ হাকিমও। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি বোঝার চেষ্টা করেন, তালিকায় এমন কোনও নাম আছে কিনা, যা আসলে ভূতুড়ে।

শুধু কলকাতা বা দিনহাটা নয়, কোচবিহারেও তৃণমূলের একই তৎপরতা দেখা গেল। নাটাবাড়ি বিধানসভার জিরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮/২১৪ নম্বর বুথে ভোটারদের বাড়ি গিয়ে যাচাই করেন কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা পার্থ প্রতিম রায়। ভোটার কার্ডের অফলাইন-অনলাইন এপিক নম্বর মিলিয়ে দেখেন তিনি। শুধু তাই নয়, বুথ লেভেল অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। যাতে ভুলবশত কোনো মৃত ব্যক্তি বা ভূতুড়ে নাম ভোটার তালিকায় না থেকে যায়। পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদেরও সতর্ক করে তিনি বলেন, কারোর নাম অন্য কোথাও যুক্ত হয়ে আছে কিনা তা যেন সকলে নিজেরাই খতিয়ে দেখেন।

কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ভোটার তালিকায় ভূতুড়ে নাম ঢোকানো হচ্ছে। নেতাজি ইন্ডোরের কর্মিসভায় তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন, ‘ভূত তাড়ানোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ’। সেই অনুযায়ীই এবার পথে নামল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিটি বুথে এই খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। ফিরহাদ বলেন, ‘আমরা চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হোক, প্রকৃত ভোটারদের ভোটেই জয়ী হব। ভূতুড়ে ভোটারের প্রয়োজন নেই।’

তৃণমূল জানিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে ভোটার তালিকা বিশ্লেষণের রিপোর্ট তৈরি করা হবে। কোথায় কতজন ভুয়ো ভোটার, কতজন মৃত ভোটারের নাম রয়ে গিয়েছে, সব আলাদা করে রিপোর্ট তৈরি করা হবে। যদি দেখা যায়, কোনও নির্দিষ্ট এলাকায় ভূতুড়ে ভোটারের সংখ্যা বেশি, তাহলে সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে।

এই অভিযানকে বিজেপি ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করলেও, তৃণমূলের বক্তব্য, তারা শুধুমাত্র প্রকৃত ভোটারদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে চায়। এখন দেখার, এই যাচাই প্রক্রিয়া কতদূর গড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভূতুড়ে ভোটারদের তালিকা নির্বাচন কমিশনের হাতে পৌঁছয় কিনা।