• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ডিলিট পেলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাবর্তনে বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল

কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও গেট থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল রাজ্যপালকে। এদিনও সেইরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নজরুল মঞ্চে রাজ্যপালের গাড়ি এগোতেই।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে সাম্মালিক ডিলিট তুলে দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সােনালী চক্রবর্তী। (Photo: IANS)

অর্থনীতিতে নােবেল জয়ের পরে সাম্মালিক ডিলিট নিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও ছাত্র বিক্ষোভের জেরে সেই সমাবর্তন মঞ্চে হাজির হতে পারেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। গ্রিনরুমে বসেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিলিট উপাধিতে স্বাক্ষর করতে হয়েছে রাজ্যপালকে। তবে এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হলেও তা তেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে।

এদিন বিকেলে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন নােবেলজয়ী। সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কাজের অনেক সুযােগ রয়েছে। আমিও রাজ্যের জন্য কাজ করতে চাই।

মঙ্গলবার দুপুরে নজরুল মঞ্চে আচার্য তথা রাজ্যপালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যাওয়া নিয়ে রাজ্যে যে অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছিল, তা যে নােবেলজয়ীকে তেমন হতাশ করেনি অভিজিৎ বিনায়কের এই মন্তব্য ছিল তারই প্রমাণ। তবে মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যপালের উপস্থিতি নিয়ে ছাত্রবিক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছিল।

কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও গেট থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল রাজ্যপালকে। এদিনও সেইরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় নজরুল মঞ্চে রাজ্যপালের গাড়ি এগােতেই। উপাচার্য সােনালী চক্রবর্তী পড়ুয়াদের শান্ত করতে বারবার অনুরােধ জানান। শেষ পর্যন্ত পড়ুয়াদের কথা মেনে সমাবর্তন মঞ্চে আচার্য তথা রাজ্যপালের পরিবর্তে উপাচার্যের হাত থেকেই সাম্মালিক ডিলিট নিতে হয় নােবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে গণ্ডগােলের আশংকা করে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপক্ষে কারও নাম ছিল না। তবে সােমবারই জানা গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণ স্বীকার করে রাজ্যপাল সমাবর্তনে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী কেউই সেখানে যাবেন না। তবে প্রাথমিকভাবে আচার্যেড়ই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে সাম্মানিক ডিলিট তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্যপালের গাড়ি নজরুল মঞ্চের সামনে পৌঁছতেই পরিস্থিতি বদলে যায়।

সেখানে প্রবেশ করার আগেই রাজ্যপালকে ঘিরে প্রবল বিক্ষোভ দেখাতে আরম্ভ করে পড়ুয়াদের একাংশ। সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরােধিতায় তারা গাে-ব্যাক স্লোগান দিতে থাকে। কালাে পতাকা, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন দেখানাে হয়ে তাঁকে। এইরকম বিশৃঙ্খলার মধ্যেই রাজ্যপাল কোনওরকম নজরুল মঞ্চের গ্রিন রুমে পৌঁছতে পারেন। সেখানেই রাজ্যপাল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিলিট-এ শংসাপত্রে স্বাক্ষর করেন। তারপর আর রাজ্যপাল সমাবর্তনের মঞ্চে আসেননি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সােনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ুয়াদের শান্ত হতে বারবার অনুরােধ করেন। বলেন, অ্যাকাডেমিক প্রােসেশনে উনি (রাজ্যপাল) থাকবেন না। আমিই ডিলিট তুলে দেব অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে রাজ্যপাল নজরুল মঞ্চ থেকে বেরিয়ে ফিরে যান রাজভবনে। নজরুল মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার আগে রাজ্যপাল বলেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের হাতে ডিলিট দিতে পারলাম না। এজন্য আক্ষেপ থাকবে।

এই অনুষ্ঠানের পরেই মা’কে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে যান নােবেলজয়ী। সেখানে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পরে তিনি সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে জানিয়েছেন, কলকাতায় কাজ করতে চাইলে কেউ বাধা দেবে। এখানে কাজের অনেক সুযােগ আছে। আমারও অনেক ভাবনা রয়েছে। আমিও রাজ্যের জন্য কাজ করতে চাই। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে রাজ্যের প্রকল্পগুলি সম্বন্ধে জেনেছি। সেগুলাে নিয়ে পড়াশুনাে করব। তারপর নিজের চিন্তাভাবনার কথা জানাব।

তবে এদিন সিএএ, এনআরসি বা এনপিআর নিয়ে প্রশ্ন করলেও কোনও উত্তর দিতে চাননি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের জন্য অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু করার এই প্রতিশ্রুতি থেকে বােঝা যায়, এদিন সমাবর্তনের অপ্রীতিকর ঘটনা রাজ্য সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি তাঁর ওপর।

তবে এদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ঘটনায় অনেক শিক্ষাবিদেরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য চিন্ময় গুহের মতে পড়ুয়াদের এভাবে বিক্ষোভ দেখানাে সমর্থন করা যায় না। সমাবর্তনের অনুষ্ঠান মঞ্চ প্রতিবাদ দেখানাের জায়গা নয়। আবার কেউ কেউ বলছেন, সিএএ, এনআরসি, এনপিআর ইস্যু তাে প্রতিবাদ করার মতােই। আর এই নিয়ে তাে দেশজুড়েই প্রতিবাদ জানাচ্ছে পড়ুয়ারা।