• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বাঙালি শ্রমিক বিতাড়ন

গায়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা সেঁটে দিয়ে বেঙ্গালুরুতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাসস্থান ভেঙে দেওয়ার পর তাঁরা পথে বসেছে।

এনআরসি-সিএবি'র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। (File Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

গায়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী তকমা সেঁটে দিয়ে বেঙ্গালুরুতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাসস্থান ভেঙে দেওয়ার পর তাঁরা পথে বসেছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এবং একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে তাদের বাড়িতে ফিরে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারও চিন্তিত। এভাবে বাঙালি শ্রমিকদের কর্মচ্যুত করে তাড়িয়ে দেওয়া শুধু অমানবিক নয়, অপ্রত্যাশিত। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

দেশের অথবা দেশের বাইরে বাঙালি শ্রমিকরা যেখানেই কাজ করে রুজি-রােজগার করতে যান, সে কাজে দক্ষতার পরিচয় দেন। ফলে বাঙালি শ্রমিকদের সুনাম রয়েছে। বেঙ্গালুরুতেও প্রচুর বাঙালি শ্রমিক কর্মরত তাঁরা অনেকদিন হল সেখানে আছে। হঠাৎ কী হল, তাঁদের বলা হল, তারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে এখানে এসেছেন এবং কাজ করছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তারা অনুপ্রবেশকারী— সুতরাং তাদের নিজদেশে ফিরে যেতে হবে। আর সেই কারণেই তাদের উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের থাকার বাড়িঘর ভেঙে দিয়ে জিনিসপত্র বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযােগ পাওয়া গেছে।

বেঙ্গালুরু শহরের কারিয়ামান্না এলাকায় প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বাস করছেন। এই মর্মে অভিযোগ করেছেন বিজেপির স্থানীয় বিধায়ক। এরপরই শুরু হয় তাদের আস্তানা (বস্তি) ভাঙার কাজ। প্রায় শ’খানেক ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। এই বাঙালি শ্রমিক বিতাড়ন কাজে হাত লাগিয়েছে পুলিশ ও বেঙ্গালুরু পুরসভার আধিকারিকরা। শ্রমিকদের ঘর ভেঙে দেওয়ার সময় তারা বলেন, তাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু পুলিশ এবং পুরসভার কর্তারা সেসব শুনতে নারাজ। তাঁদের বলা হয়, তারা বাংলাদেশ থেকে এখানে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে। সুতরাং তাদের আর এখানে থাকা চলবে না। এলাকা না ছাড়লে জেলে পাঠানাের হুমকি দিয়েছিল পুলিশ। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ মেদিনীপুর ও মালদার বাসিন্দা। তবে অনেকেই ফিরে এসে তাদের ওপর নিপীড়নের কাহিনি স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন০।

এই অবস্থা যখন চলছে, তখন বেঙ্গালুরু পুলিশের পদস্থ কর্তারা জানিয়েছেন, তারা শহরের ১৩টি এলাকা চিহ্নিত করেছেন, যেখানে বাংলাদেশ-অনুপ্রবেশকারীরা বসবাস করছেন। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক চলেছেন তার এলাকার মধ্যে মহাদেব পুরায় ছাউনিগুলিতে বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে বাস করছেন। নানা সমাজবিরােধী কাজ চলছে ওই ছাউনিগুলিতে। স্থানীয় প্রশাসনকে জানানাে হয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।

কিন্তু আশ্চর্যের, এরা যে বালাদেশি অনুপ্রবেশকারী এই প্রশ্ন এতদিন ওঠেনি। অথচ এই বাঙালি শ্রমিকরা অনেকদিন হল এখানে কর্মরত। পুলিশও তা জানত। হঠাৎ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে তাঁদের বাসস্থান ভেঙে দেওয়া শুরু হল? তাদের কাছে ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের যে কাগজপত্র ছিল, তাও দেখা হল না। অনেকেরই অভিযােগ, যেহেতু দেশে এখন সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন চালু হয়েছে, তাই প্রশাসন প্রমাণ করতে চাইছে বেঙ্গালুরুর কোনও কোনও স্থানে বাংলাদেশিরা রয়েছে অবৈধভাবে। সুতরাং তাঁদের চলে যেতে বলা হবে। অনুপ্রবেশকারীরা যে আছে, এটাই তার প্রমাণ। বিরােধীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যাদের কাছে নাগরিকত্ব প্রমাণের কাগজপত্র রয়েছে, তাদের জায়গা ছেড়ে চলে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাগরিকত্ব প্রমাণের নামে এই রকম জুলুম হয়তাে দেশের অন্যত্রও হবে। উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথের সরকার, নাগরিকত্ব আইন চালুকরে পাকিস্তান থেকে আসা মুসলিমদের একটি তালিকা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে। যােগী প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, গাজিয়াবাদ অঞ্চলে বহু মুসলমানের বাস। তারা কীভাবে সেখানে বাস করছে তা খতিয়ে দেখা হবে। বসবাসকারী মুসলিমদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে।