• facebook
  • twitter
Sunday, 16 March, 2025

ওয়েব সিরিজে শোলাঙ্কির সঙ্গে রোহন

প্রেমদিবসে হইচইতে মুক্তি পাচ্ছে ‘বিষহরি’। রাজনন্দিনীর চরিত্রে শোলাঙ্কির সঙ্গে কথা বললেন দেবযানী লাহা ঘোষ।

প্রশ্ন : প্রেম দিবসে ভালোবাসা না ছড়িয়ে বিষহরি ছড়াচ্ছো?

শোলাঙ্কি : দারুণ বলেছো হা হা হা। এই বিষের মধ্যে দিয়েই এক অন্য ধরনের ভালোবাসা সকলের কাছে পৌঁছোতে চাই। বিষহরি আসলে মা মনসার আর এক নাম। আর তাঁনার বাহন সাপ। এই প্রেমদিবসে সৃজিত রায়ের পরিচালনায় আসছে বিষহরি। আর সেখানেই দারুণ একটা চরিত্রে আমি।

প্রশ্ন: এই সিরিজে তুমি কি সাপের সঙ্গে বসবাস করলে? টাইটেল কার্ডের মধ্যেই সাপকে সুন্দর ব্যবহার করা হয়েছে।

শোলাঙ্কি: মা মনসার বাহন হল সাপ। আর এই সিরিজে সে মূল প্রটাগনিস্ট। তাই তার উপস্থিতি এখানে অন্য মাত্রায়।

প্রশ্ন: বেহুলা লখিন্দরের গল্পে সাপের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। তবে এই সাপের মধ্যে দিয়েই সমাজের অনেক সম্পর্কের কথা উঠে আসছে। ট্রেলার দেখে তাই মনে হল।

শোলাঙ্কি: তুমি দারুণ কথা বলেছো। সাপ আসলে একটা নিরীহ প্রাণি। সে শুনতে পায় না। সব প্রাণি কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করে। তবে এখানে সাপ না, মানুষই বিষ ছড়াচ্ছে।

প্রশ্ন: বিষহরি ওয়েব সিরিজ টি একটি মার্ডার মিস্ট্রির গল্প। বর্তমান সময়ের একটি পরিবারের মধ্যে দিয়ে দেখতে পাচ্ছি সেই পুরাণের বেহুলা লখিন্দরের গল্পের আদলে?

শোলাঙ্কি : আমাদের মাইথোলজি কিন্তু ভীষণ স্ট্রং। তখনকার বিভিন্ন ঘটনাগুলো জানা থাকলে দেখবে আজকের সমাজে সেই ঘটনাগুলোর নানারকম প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পাই। পরিচালক শ্রীজিৎ রায় এখানে একটা নরমাল মার্ডার মিস্ট্রির গল্পের মধ্যে দিয়েই সমাজের আয়নাটা একটু তুলে ধরেছেন। আমরা যদি এখানে মনসার গল্পটা মনে করি। মা মনসার ক্রোধ যেটা বারবার অপমানিত হতে হতে…। যেহেতু সে নারী। তার জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও নানা মতভেদ রয়েছে। মনসামঙ্গল কাব্যটা কিন্তু আসলে বেহুলার একার গল্প নয়। এটা মনসার লড়াইয়ের গল্পও বটে। এখানে মনসার দিক থেকে গল্পটা অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে বিষহরির রহস্যকে জানতে হলে এই সিরিজটা দেখতে হবে।

প্রশ্ন: শুনেছি তুমি তো খুব খুঁতখুঁতে। এই চরিত্রটার মধ্যে তোমাকে কোন জিনিসটা ভীষণভাবে নাড়া দিল, যার জন্য তুমি এটা করতে রাজি হলে?

শোলাঙ্কি : একদম ঠিক। আসলে অনেক সময় অনেক চরিত্র করার ইচ্ছে থাকলেও সেই চরিত্রগুলো কিন্তু আমার কাছে আসে না। রাজনন্দিনীর আত্মবিশ্বাস। এই বোল্ডনেসটা আমাকে ভীষণভাবেই নাড়া দিয়েছে। চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গল্পটা মনকে নাড়া দিতে হবে। চরিত্রের মধ্যেই একটা স্পার্ক থাকতে হবে। এইগুলো না হলে আমি একটা চরিত্রের মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই না। এই চরিত্রটার মধ্যে আমি নিজের মিল খুঁজে পেয়েছি। রাজনন্দিনী চরিত্রটা কিন্তু ভগবান বিশ্বাস করে না। অথচ সে খুব যুক্তি- নির্ভর। সে সত্যি কথা বলে, স্পষ্ট কথা বলে। ভগবানে বিশ্বাস না করলেও সে যেহেতু বাংলার লোকাচার এবং পুরাণ এগুলো নিয়ে রিসার্চ করে তাই তার জ্ঞানটা কিন্তু অনেক বেশি।
ও যেটা বিশ্বাস করে সেটা ভয়ঙ্করভাবে বিশ্বাস করে। রাজনন্দিনীর আত্মবিশ্বাসটা আমাকে অনেক কিছু শেখাল।

প্রশ্ন: ২০২৫-এর শুরুটা তাহলে ভালই বলা যায়?

শোলাঙ্কি : হ্যাঁ, কারণ বছরের শুরুতেই এসেছে মৈনাক ভৌমিকের পরিচালনায় ছবি ভাগ্যলক্ষী এবং সেটা নিয়েও খুবই চর্চা হয়েছে। তারপরেই ওটিটিতে আসছে বিষহরি। আর এই চরিত্রটা আমার মনটাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করছি ২০২৫ অন্য কথা বলবে।

প্রশ্ন: এই সিরিজের মধ্যে দিয়েই রোহনের সঙ্গে তোমার প্রথম জুটি?

শোলাঙ্কি : হ্যাঁ একদম। এর আগে রোহনের সঙ্গে আমার সেরকম খুব একটা আলাপ ছিল না। এই সিরিজটা করতে গিয়েই আমার সঙ্গে প্রথম আলাপ। খুবই মজার একটি ছেলে। ভীষণই ভালো মানুষ। দেখলে যেমন মনে হয় খুব সিরিয়াস একটা ছেলে। ও কিন্তু আদৌ তা নয়। আমরা যে খুব বেশি যে স্ক্রিন শেয়ার করেছি তা নয়। এটা তো কোনো লাভস্টোরির গল্প বলছে না। আরজি কর ঘটনার পরেই এই শুটিংটা করেছি। বর্ষাকালে খুবই হেকটিক ছিল এই শুটিংটা। তবে এই সিরিজে অনেকে রয়েছেন। ময়নাদি, কৌশিক, শংকর চক্রবর্তী সহ আরো অনেকে। জমজমাট একটা বাড়ি যার আনাচে কানাচে নানা রহস্যের সমাধান কীভাবে হয় সেটাই দেখার।

প্রশ্ন : প্রেম দিবস তোমার কাছে কীভাবে আসে?

শোলাঙ্কি: (খুব হাসতে হাসতে) আমি আগেই বলে দিচ্ছি আমার প্রেম দিবসে কোনো প্ল্যান নেই। এই দিবসগুলো মনে করিয়ে দেয় জীবনে প্রেমের বড় অভাব। তবে আমার না এই দিনগুলোতে রাস্তায় বেরোতে ভীষণই ভালো লাগে। সরস্বতী পুজোর দিন মানে বিশেষ করে আমাদের প্রেমের দিন জোড়ায় জোড়ায় হাত ধরে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী গদগদ প্রেম সব। কত স্বপ্ন। বন্ধুকে বলছিলাম এইসব মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিবস, স্বপ্ন নিয়ে এরা একে অপরের হাত ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছে। কে থাকবে এদের সঙ্গে। আমার বন্ধু বলল, তুই কী নেগেটিভ। আমার এগুলো দেখতে খুব মজা লাগে। আসলে এদের দেখতে দেখতে নিজের স্কুল কলেজ জীবনে ফিরে যাচ্ছিলাম। এই সময়টা আমিও কাটিয়েছি। আমরা তো খুবই হুজুগে। আমাদের এই দিনগুলোর দরকার আছে বাণিজ্যের জন্য।

প্রশ্ন: দর্শকদের কী বলবে?

শোলাঙ্কি: এই সিরিজে সবচেয়ে মজার জিনিস হল কোনো ভিলেন নেই। কিন্ত কেউ একজন আছে। আজকের বেহুলাদের কথা জানতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে বিষহরি।