কংগ্রেসের ডাকে সাড়া দেননি মমতা। তবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কংগ্রেসের শীর্ষনেতা পি চিদম্বরম মনে করেন, একবার মমতার পক্ষে বৈঠকে যাওয়া সম্ভব হয়নি ঠিকই, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার ডাকা হবে। চিদম্বরমের কথায়, ‘একবার আসেননি তাে কী হয়েছে? আবার ডাকলে নিশ্চয়ই আসবেন’। এভাবেই তৃণমুল সুপ্রিমােকে পাশে নিয়ে কেন্দ্রবিরােধী লড়াই জোরদার করার জন্য কংগ্রেস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার রাতে পার্ক সার্কাসে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনের প্রতিবাদে যে ধরনা চলছে, তাতে আচমকাই হাজির হন চিদম্বরম। শনিবার পি চিদম্বরম কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এনপিআর-এর ছদ্মবেশে এনআরসি চালু করতে চাইছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ থেকে দেশজুড়ে এনপিআর চালু করার জন্য কেন্দ্র তৎপর হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস এই আইন চালু করার বিপক্ষে। বিরােধী দলগুলিকে একত্রিত করে কংগ্রেস এই আইন যাতে চালু না হয়, তার জন্য সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যাবে। বিজেপি এখনও বিরােধী দলের শক্তি বুঝতে পারছে না। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে বুঝতে পারবে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রাজ্যে এসে পি চিদম্বরম বুঝিয়ে দিলেন কেন্দ্রবিরােধী লড়াই থেকে কংগ্রেস শুধু নয়, তিনিও যে সরবেন না, তা তাঁর মন্তব্যেই স্পষ্ট।
এদিকে চিদম্বরমের বার্তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনকে সামনে রেখে কংগ্রেস বিরােধী ঐক্য গড়ে তােলার জন্য কেন্দ্র-বিরােধী দলগুলির কাছে আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের সেই ডাকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি সেই সময় বাংলায় এসেছিলেন পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যােগ দিতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠকও করেন। পরে মিলেনিয়াম পার্কে পাের্ট ট্রাস্টের এক অনুষ্ঠানে মােদি-মমতাকে এক মঞ্চে দেখা যায়। এরপরই অনুষ্ঠানস্থল থেকে ধর্মতলায় রানি রাসমণি রােডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ধর্না মঞ্চে মমতা যান। সেই সময় কেন তিনি মােদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এই প্রশ্ন তুলে সরাসরি তৃণমূল সুপ্রিমমা চ্যালেঞ্জ করেন অতি বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা।
সেই সময় মমতা সাফ জানিয়ে দেন, নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন বাংলায় চালু করা যাবে না। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের ডাকা এনপিআর বৈঠকে দেশের অন্য সব রাজ্য যােগ দিলেও বাংলার কোনও প্রতিনিধিত্ব ছিল না। এ রাজ্যের বাম-কংগ্রেস চাইছে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনকে কেন্দ্র করে নিখাদ বিরােধিতা করুক তৃণমূল। অতি বাম ছাত্র সংগঠনেরও একই দাবি।
তৃণমূল অবশ্য বলছে, দেশের মানুষের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম থেকেই এনআরসি’র বিরােধিতা করে আসছে। ফলে বাম কংগ্রেসের কাছ থেকে এ বিষয়ে তৃণমূলের কোনও শেখার নেই। এখন দেখার আগামী দিনে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইনকে কেন্দ্র করে দেশবিরােধী ঐক্যতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ভূমিকা ঠিক কী হয়।