• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

জেএনইউ ফিরল বিশ্বভারতীতে

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঢুকে বামপন্থী ছাত্র নেতাদের উপর হামলার ঘটনায় দুই ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করল শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ।

বিশ্বভারতীতে ছাত্রের ওপর হামলা করার অভিযোগে পুলিশ দু'জনকে গ্রেফতার করেছে। (Photo: Indrajit Roy/IANS)

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ঢুকে বামপন্থী ছাত্র নেতাদের উপর হামলার ঘটনায় দুই ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করল শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। তারা কোন দলের সঙ্গে যুক্ত তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে গ্রেফতারের আগে থেকেই দুই ছাত্রনেতা দাবি করেছে যে, তারা টিএমসিপি’র সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এসএফআইয়ের উপর হামলার ঘটনায় তারা কেন এবিভিপি’র উপর দায় চাপিয়ে নিজের কাঁধে নিল সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। এদিকে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবিতে শান্তিনিকেতন থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিশ্বভারতীতে সিএএ’র সমর্থনে আলােচনাসভায় যােগ দিয়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তারই প্রতিবাদে পাল্টা এবিভিপি নেতারা বামপন্থী ছাত্রনেতাদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযােগ করেন তারা। উভয় পক্ষের এই বিবাদ কয়েকদিন আগে থেকেই সংবাদ শিরােনামে। কিন্তু এই দুইয়ের মাঝে তৃণমূল ছাত্রপরিষদ নিজেদের জানান দিতে ময়দানে নেমে পড়ে।

জানা গেছে, এসএফআই নেতাদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ যাদের এদিন গ্রেফতার করেছে তাদের একজনের নাম অচিন্ত্য বাগদি। তিনি আগে থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্য বলে বারবার দাবি করে এসেছেন। তারই সঙ্গী সাবির আলিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু এই দুই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা হঠাৎ কেন গ্রেফতার হলেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।

এসএফআইয়ের দাবি, হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত এবিভিপি। কিন্তু এদিকে নিজেদের তৃণমুল ছাত্র পরিষদ সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে পলিশের কাছে ধরা দিলেন তাঁরা। টিএমসিপি সদস্য অচিন্ত্য বাগদি বলেন, হামলাকারীরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। হস্টেলে যারা ঢুকেছিল তারা বহিরাগত। তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্য।

অন্যদিকে অভিযুক্ত এবিভিপি সদস্য অপূর্ব সরােদের বক্তব্য, হামলার ঘটনায় তারা জাড়িত নন। এসএফআই প্রমাণ করুক তা না হলে ক্ষমা চেয়ে নিক যে মিথ্যা অভিযােগ করেছে। সব মিলিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে উত্তপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়। বিবাদ মেটাতে রীতিমতাে বিপাকে পুলিশ আধিকারিকরা। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিবাদ কিভাবে মাথাচাড়া দেবে তা নিয়ে চিন্তায় পুলিশ।

ছাত্র আন্দোলনের জেরে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীয় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। এনআরসি এবং সিএএ বিরােধী আন্দোলনের জেরে বেশ কিছুদিন থেকেই বিশ্বভারতীর পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশ এনিয়ে নানাভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দিল্লির জেএনইউ-র ছাত্রছাত্রীদের দিক থেকেও একইভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জেএনইউ-র ছাত্রী নেত্রী ঐশী ঘােষের উপরে হামলার পরে এই আন্দোলনের তীব্রতা উপাসনাগৃহের সামনে থেকে বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে ছাত্রছাত্রীরা মিছিলও করে। যাতে অনেক অধ্যাপক, অধ্যাপিকা এবং বিশ্বভারতীর কর্মীও অংশগ্রহণ করেন। যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এক সময় জেএনইউর পড়ুয়া ছিলেন।

এরই মধ্যে ৮ জানুয়ারি রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিশ্বভারতীর কোর্ট মেম্বার স্বপন দাশগুপ্ত শান্তিনিকেতনের লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে বিশ্বভারতীর বক্তৃতা সিরিজে ‘দ্যা সিএএ ২০১৯ : আন্ডারস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড ইন্টারপিটিশন’ শীর্ষক বক্তৃতা দিতে এলে বিশ্বভারতীতে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। ওই অনুষ্ঠানে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে শ্রীনিকেতনে নিয়ে যাওয়া হলে বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীরা সেখানেও হাজির হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এমনকী অনেক রাত পর্যন্ত তিনি ও তার সঙ্গে থাকা বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিকও ঘেরাও হয়ে থাকেন।

ঘটনার জেরে কলকাতার রাজভবনে বসে রাজ্যের রাজ্যপাল তথা বিশ্বভারতীর রেকটর জগদীপ ধনকড় এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর প্রশাসনিক তৎপরতায় তারা ঘেরাও মুক্ত হন। এরপরই স্বপন দাশগুপ্ত কলকাতার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, বিশ্বভারতীর ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করায় বিতর্ক আরও দানা বাঁধে। বিশ্বভারতীর একটি সভাতেও বিশ্বভারতীর উপাচার্য ওই দিনের ঘটনায় তিনি কোনও প্রশাসনিক সহযােগীতা পাননি বলে অভিযােগ করেন।

ঘটনার জেরে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রফেসার ইনচার্জ অফ সিকিউরিটি অশােককুমার গুণ তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও তিনি এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। ওই পদে বসানাে হয়েছে অ্যাগ্রোনােমির অধ্যাপক গণেশচন্দ্র মালিককে।

এই ঘটনার জেরে এবার বিশ্বভারতীর এক ছাত্রকে মারধর করার অভিযােগকে কেন্দ্র করে আবারও নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্বভারতী। ১৫ জানুয়ারি রাতে বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র স্বপ্ননীল মুখােপাধ্যায়কে বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতনের বিদ্যাভবন ছাত্রাবাসের কাছে মারধর করা হয় বলে অভিযােগ ওঠে। তাকে শান্তিনিকেতন পিয়ারসন মেমােরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে গিয়েও তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযােগ।

স্বপ্ননীল মুখােপাধ্যায়ের অভিযােগ, তিন ছাত্র অচিন্ত্য বাগদী, সাবির আলি ও সুলভ কর্মকার তাকে হাসপাতালে ঢুকেও মারধর করেছে। ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রবেশ পথের সামনে বিভিন্ন ধরনের প্লাকার্ড ও মেঝেতে পােস্টার বিছিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে এবং তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানায়।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ অচিন্ত্য বাগদী ও সাবির আলিকে গ্রেফতারও করা হয়। বিচারক তাদের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাঁদের দশদিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক রঙও লেগেছে। আন্দোলনরত ছত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ছাত্রদের উপরে আগে এরা তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনেক আগেই প্রচারপত্র বিলি করে অচিন্ত্য বাগদীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্বভারতীর এবিভিপি’র পক্ষ থেকেও এই ঘটনার সাথে তাদের কোনও যােগ নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ জানিয়েছেন, বিজেপি’র কী এত ক্ষমতা আছে যে, বিশ্বভারতীতে ঢুকে হাঙ্গামা করবে? ওখানে তাে সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তর ওপরেই হামলা হয়েছে। কেউ অপরাধ করলে আইন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এবিভিপি’র সর্বভারতীয় সম্পাদক সপ্তর্ষী সরকারও বলেছেন যে, এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও কার্যকর্তা যুক্ত কারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট। বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তার তদন্ত হােক এবং সমগ্র ঘটনা সামনে আসুক।

অপরদিকে এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের সাথে যোগ নেই এমন ব্যক্তিও এই ঘটনার সাথে জড়িয়ে রয়েছে। আগে এরা তৃণমূল করলেও এখন এদের নতুন ঠিকানা হয়েছে বিজেপি। এইসব জঞ্জালদের বিজেপি ঠাই দিয়েছে। জেএনইউ-তেও এরা এসব করেছে। এদিকে এই ঘটনার জেরে বিভিন্ন দিক থেকেই বলা হচ্ছে যে, বিশ্বভারতীর পিয়ারসন মেমােরিয়াল হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তাই সেইসব ছবি খতিয়ে দেখে অপরাধীদের চিহ্নিত করে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কাজটা করুক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।