• facebook
  • twitter
Wednesday, 22 January, 2025

আরজি করের রায় নিয়ে বিস্মিত দিল্লির নির্ভয়ার বাবা

তাঁর কথায়, ‘আরজি করের ঘটনার পর যে চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁরা সুরক্ষিত নন। একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, শাস্তি পেয়েছেন সেই এক জনই।

ফাইল চিত্র

কলকাতার আরজি কর মামলার রায় নিয়ে হতাশ দিল্লির গণধর্ষণ-কাণ্ডে নির্যাতিতার বাবা। ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় একজন না একাধিক ব্যক্তি জড়িত, সেই প্রশ্নও তুললেন। তাঁর মতে, এমন ঘটনা একজনে ঘটাতে পারে না, আরও কেউ জড়িত। সোমবার আরজি কর মামলায় শাস্তি ঘোষণার সময় শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস জানান, তিনি মনে করেন এই ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়! এ নিয়েও প্রশ্ন তুলে ইলাহাবাদ থেকে ফোনে নির্ভয়ার বাবা জানান, আরজি কর-কাণ্ড যদি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা না হয়, তবে কোন ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’? পাশাপাশি রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নির্ভয়ার বাবা।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন নির্ভয়া। তাঁর মা-বাবা বর্তমানে প্রয়াগরাজে, মহাকুম্ভ দর্শনে রয়েছেন । সেখান থেকেই ফোনেই নির্ভয়ার বাবার প্রশ্ন ‘কী ভাবে একজন শুধু ধরা পড়ল? তদন্তকারীদের জানা দরকার, ঘটনার পর প্রমাণ লোপাটের কী কী চেষ্টা হয়েছিল। কেন ঘটনাস্থল সাফাই করা হল? ঘটনাস্থল থেকেই তো প্রমাণ মেলে।’ নির্ভয়ার বাবা মনে করেন, ‘কেন এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়, বিচারকের তা পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত। কোন ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরলতম মধ্যে পড়বে, তাও বলা দরকার।’ তবে বিচারক দাস মঙ্গলবারের রায়েই স্পষ্ট করেছেন কেন তিনি আরজি কর-কাণ্ডকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলে মনে করেন না।

মৃত্যুদণ্ড  না-দেওয়ার কারণ হিসাবে বিচারক দাস সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার কথা উল্লেখ করেন। বচ্চন সিংহ বনাম পঞ্জাব সরকারের ১৯৮০ সালের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ‘ঐতিহাসিক’ রায়ের কথা বলেন বিচারক। তিনি জানান, ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের কিছু নীতি-নির্দেশ রয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সেই নীতি-নির্দেশে উল্লিখিত কঠোর মানদণ্ডের সঙ্গে আরজি করের ঘটনাকে মেলানো যায় না। তাই এই অপরাধকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনা বলা চলে না। রায় দেওয়ার সময় অন্য মামলার কথা উল্লেখ করা নিয়ে নির্ভয়ার বাবার বক্তব্য, ‘আমার মনে হয়, সব বিচারকেরই উচিত নিজের কেসের উপর বিচার করে রায় দেওয়া। সেই কেস বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা কি না, তা দেখা।’ তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে তাঁর দাবি, ‘কেউ যদি ঘটনাস্থল সাফাই করে, তবে সেখান থেকে প্রমাণ মিলবে কীভাবে? পুলিশ যতটা প্রমাণ জোগাড় করতে পারবে, তার ভিত্তিতেই কারও শাস্তি হবে।’ তা বলতে গিয়েই তিনি টেনে এনেছেন নির্ভয়া-কাণ্ডে পুলিশি তদন্তের কথা। নির্ভয়ার বাবার কথায়, ‘সে সময় তদন্তকারী অনেক পুলিশ আধিকারিকের পদোন্নতি হওয়ার বদলে পদাবনতি হয়েছিল। কারণ ওই পুলিশ আধিকারিকেরা সঠিক তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেননি।’ নির্ভয়ার বাবার দাবি, এর ফলে সরকার চাপে পড়ে। শাস্তিস্বরূপ ওই আধিকারিকদের পদাবনতি হয়। যদিও এ বিষয়ে সরকারি কোনও প্রতিক্রিয়া সে সময় প্রকাশ্যে আসেনি।

বিচারকের রায়ে মন ভেঙেছে বলেও জানান নির্ভয়ার বাবা। কেন তিনি বিষয়টা ঠিক বলে মনে করছেন না, তারও ব্যাখ্যা দেন। তাঁর কথায়, ‘আরজি করের ঘটনার পর যে চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁরা সুরক্ষিত নন। একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, শাস্তি পেয়েছেন সেই এক জনই। আরও দু-তিন জন ধরা পড়লে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মনে সাহস বাড়ত।’ নির্ভয়ার বাবার আক্ষেপ, ‘আরও যাঁরা অপরাধী, তাঁরা বেঁচে গেলেন।’

আরজি কর-কাণ্ডের রায়ে বিচারক দাস এ-ও জানান, মৃত্যুদণ্ড তখনই দেওয়া উচিত, যেখানে সংস্কারের কোনও জায়গা নেই। এক্ষেত্রে সংস্কারের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলেই নির্দেশনামায় উল্লেখ করেন বিচারক দাস।

বিচারক দাস মনে করেন, ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে উচিত ‘চোখের বদলে চোখ’ বা ‘দাঁতের বদলে দাঁত’ বা ‘নখের বদলের নখ’ বা ‘প্রাণের বদলে প্রাণ’-এর মতো প্রতিশোধমূলক প্রবৃত্তিগুলি থেকে সরে আসা। বর্বরতাকে বর্বরতা দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। বিচারক দাসের মতে, আদালত আইনি তথ্যপ্রমাণের উপর ভিত্তি করেই রায় দেয়। সংগঠিত অপরাধ নিয়ে সমাজ কী বলছে, মানুষের ভাবাবেগ কী, তা দূরে সরিয়ে রেখেই রায় দিতে হয় বিচারককে। আরজি কর মামলায় বিচারকের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হতে না পারলেও নির্ভয়ার বাবা বলেন, ‘বিচারকের রায় মেনে নিতে হয়। ন্যায় কখনও কেউ হয়তো পান না।’

আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মাকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেন নির্ভয়ার বাবা। তাঁর পরামর্শ, ‘লড়াই চালিয়ে যান। সরকারের কাছে আবেদন করুন, যাতে আরও অপরাধীদের ধরা যায়। লড়াই ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। ফাঁসির সাজা দেওয়াতে কিছু হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তা কার্যকর হয়।’