সুতপা ভট্টাচার্য চক্রবর্তী
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যের ৮০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হল…ট্রাম্পের ‘‘অতি-দক্ষিণ, বিলিয়নিয়ার এজেন্ডা’’ এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার উদ্দেশ্যে এই বিক্ষোভগুলি বিভিন্ন শ্রমিক শ্রেণি এবং নিচের দিকের সংগঠন দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। বিক্ষোভের আহ্বায়করা শ্রমজীবী মানুষের ওপর ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত আক্রমণের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন। শ্রমিক শ্রেণি জানিয়েছেন, ট্রাম্প নৃশংস গণ নির্বাসন অভিযানের মাধ্যমে অভিবাসী পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর পরিকল্পনা করছেন। আমরা রুখে দাঁড়াবো এবং এসব হামলাকে ‘না’ বলব। ট্রাম্প একজন বিলিয়নিয়ার, অন্যান্য বিলিয়নিয়ারদের সহায়তায় নির্বাচিত হন এবং বিলিয়নিয়ার শ্রেণির পক্ষে সরকার পরিচালনা করেন। সমস্ত শ্রমজীবী মানুষ, আপনি যেখানেই জন্মগ্রহণ করুন না কেন, কোটিপতি শ্রেণির বিরুদ্ধে সংহতি জানাতে একত্রিত হওয়া উচিত যারা আমাদের সকলকে লুট করতে এবং শোষণ করতে চায়’।
এরা আমেরিকান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেন না। ট্রাম্প নির্বাচনের সময় একটি অনৈতিক খেলা চালিয়েছিলেন। তার আসল এজেন্ডা হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার ধ্বংস করা, লাখ লাখ অভিবাসী পরিবারকে বিতাড়িত করা। ট্রাম্প পরিবেশ রক্ষার জন্য বিধিনিষেধ শেষ করে, হাজার হাজার সরকারি খাতের কর্মীকে বরখাস্ত করে এবং জাতীয় কোষাগারের বৃহত্তর অংশ সামরিক শিল্প ক্ষেত্রে স্থানান্তর করে সম্পূর্ণ কর্পোরেট অধিগ্রহণের পথ প্রশস্ত করার পরিকল্পনা করেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় অতি-ডানপন্থীদের উত্থান থামাতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্পূর্ণ ব্যর্থতা তুলে ধরে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিষ্ঠা অনুসরণ করে নয়, বরং শাসক শ্রেণী এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি বিশাল আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রোগ্রামকে পরাজিত করতে পারি যা জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশকে দরিদ্র করে বিলিয়নেয়ারদের সবকিছু দেয় তিনি বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের প্রতিবাদ জানাতে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভে নারী অধিকার, জাতিগত ন্যায়বিচারসহ নানা বিষয়ে সোচ্চার গোষ্ঠীর কর্মীরা রয়েছেন। প্রতিবাদকারীদের আশঙ্কা, রিপাবলিকান পার্টির এই নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে। বিক্ষোভকারীদের অনেকে গোলাপি টুপি পরেছেন। ২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের ক্ষমতাগ্রহণের সময় এই রঙের টুপি পরে বিপুলসংখ্যক মানুষ বিক্ষোভ করেছিলেন। তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। প্রতিবাদকারীরা যখন হোয়াইট হাউস ও ন্যাশনাল মলের পাশ দিয়ে লিংকন মেমোরিয়ালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন… ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে এবারের প্রতিবাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিপলস মার্চ’। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের অভিষেকের যে প্রতিবাদ হয়েছিল, সেটার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘উইমেন মার্চ’। তখন থেকে প্রতিবছর বিভিন্ন অধিকার গোষ্ঠীর উদ্যোগে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে… তবে এবার ২০১৭ সালের তুলনায় প্রতিবাদকারীর সংখ্যা কম। ট্রাম্পের কাছে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হেরে যাওয়ার পর দেশটির নারী অধিকার আন্দোলন বিভক্ত হয়ে পড়ায় এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবারের পিপলস মার্চে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে গোলাপি টুপি পরে পথ হাঁটছিলেন হাজার হাজার মানুষ… দেশ জুড়ে শ্রমিক কৃষক ক্ষেতমজুর সহ তিনশোর বেশি মানুষ উত্তাল এই বিক্ষভে সামিল হন।
নাগরিক অধিকার, পরিবেশ অধিকার ও প্রজনন অধিকার গোষ্ঠীগুলো এসব মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে থাকা হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেন। এবারও তিনি একজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতাগ্রহণের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অভিবাসন আইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান ঐতিহাসিকভাবে খোলা স্থানে হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ওয়াশিংটনে তীব্র ঠান্ডার পূর্বাভাস থাকায় কংগ্রেস ভবনের ভেতরে শপথগ্রহণ হবে।