• facebook
  • twitter
Sunday, 19 January, 2025

দ্য স্টেটসম্যান ভিন্টেজ কার র‍্যালিকে ঘিরে শহরবাসীর উন্মাদনা চরমে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই গাড়ির কারখানার উপর মিত্র বাহিনী বোমা ফেলে। এরপর মার্সিডিজ কোম্পানি কিছুদিন এই কারখানাটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ১৯৫২ সালে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

ফাইল চিত্র

কলকাতার রাজপথে দেখা যাবে ‘বাবু কালচার’। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে শীতের কলকাতাকে অনন্য উপহার দেয় দ্য স্টেটসম্যান। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ১৯ জানুয়ারি রবিবার রয়েল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবের (আরসিটিসি) মাঠে ৫৪তম কার র‍্যালির আয়োজন করেছে ‘দ্য স্টেটসম্যান’। অতীতকে সাক্ষী রেখে এই শহরের রাজপথে বেরিয়ে পড়বে রেনল্ট, ফ্রেরেস, স্টোয়ার, স্টুডিবেকার, রোলস রয়েস, বিভিন্ন মডেলের অস্টিন, টর্পেডো, ওলসলি, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড রোভার মোটর সাইকেল, প্যান্থার স্লোপ, ভেসপা ইত্যাদি ভিনটেজ ও ক্লাসিক গাড়িগুলি। এই গাড়িগুলির প্রত্যেকটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক একটি রূপকথা।

১৯৬৮ সালে এই রূপকথার গল্প বলা শুরু হয়েছিল তৎকালীন ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকার সম্পাদক ডেসমন্ড ডয়েগের উদ্যোগে। এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ফোর্ট উইলিয়ামের সেনা আধিকারিকরা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং করোনার কারণে কয়েক বছর এই কার র‍্যালি বন্ধ থাকলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কার র‍্যালি বর্তমানে ৫৩ পেরিয়ে ৫৪ বছরে পদার্পণ করেছে। এই র‍্যালিকে ঘিরে আম জনতার আগ্রহ এবারও রয়েছে চোখে পড়ার মতো। প্রতি বারের মতো এবারও এই র‍্যালির প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য ‘দ্য স্টেটসম্যান’ অফিসে ভিড় উপচে পড়ে।

‘দ্য স্টেটসম্যান’-এর সৌজন্যে এবারও যে হুডখোলা সবুজ কালো গাড়ি রাজপথে দেখা যাবে, তার বয়স ১১০ বছর। পশ্চিম মেদিনীপুরের মলিঘাট স্টেটের জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র চৌধরী গাড়ি কিনতে জার্মানিতে যান ১৯০৮ সালে। মেদিনীপুরের জলকাদা রাস্তাতে চলতে পারে এমন গাড়ি খুঁজতেই তিনি হাজির হলেন স্টোয়ার কোম্পানিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে ১৯১৩ সালে অক্টোবর মাসে কলকাতা বন্দরে চারটে কাঠের বাক্সে সেই স্টোয়ার গাড়িকে আনা হয়। গাড়িটিকে অ্যাসেম্বল করে দেওয়ার জন্য সঙ্গে আসেন দুজন জার্মান মেকানিক। গাড়িটি অ্যাসেম্বল করে দেওয়ার পর সেই গাড়ি চালিয়ে গাড়ির মালিক ঈশ্বরচন্দ্র চৌধুরী পৌঁছলেন মলি ঘাটে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বহু বিপ্লবীর পদস্পর্শে এই গাড়িটি ধন্য হয়েছে। এই গাড়িটি বর্তমানে প্রতাপ এবং আনন্দ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। চার সিলিন্ডারের এই গাড়িটি স্টার্ট নেয় ম্যাগনেটের মাধ্যমে। হেডলাইট অ্যাসিটিলিন গ্যাসে। বর্তমানে কাঠের চাকার পরিবর্তে রাবার হুইল লাগানো হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই গাড়ির কারখানার উপর মিত্র বাহিনী বোমা ফেলে। এরপর মার্সিডিজ কোম্পানি কিছুদিন এই কারখানাটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও ১৯৫২ সালে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এমনই এক গাড়ি দ্য স্টেটসম্যান ভিনটেজ কার র‍্যালিতে দেখা যাবে। যা সত্যিই মহাবিস্ময়! এমনই অনেক রূপকথাকে সঙ্গে করে ‘দ্য স্টেটসম্যান ভিনটেজ এন্ড ক্লাসিক কার র‍্যালি’তে অংশ নিতে চলেছে ১৮০-র বেশি গাড়ি। ইতিহাসকে ফিরে দেখার জন্য এই কার র‍্যালিকে ঘিরে ফের কলকাতার বুকে এক অন্য ধরনের উন্মাদনার সৃষ্টি হবে। র‍্যালির অন্যতম মিডিয়া পার্টনার ‘টিভি-৯’। দ্য স্টেটসম্যানের পক্ষ থেকে গোবিন্দ মুখার্জি জানান, ‘হাতে সময় কম, ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে দ্রুত প্রবেশপত্র সংগ্রহ করুন এবং আনন্দ উপভোগ করুন’।