মার্কিন শর্ট সেলিং সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল আদানি গ্রুপের। এই সংস্থার রিপোর্টের জেরেই ভারতের আদানি গ্রুপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিকোলা এবং তাদের বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনেক সংস্থার কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ২০২৩ থেকে ভারতীয় শেয়ারবাজারে বড়সড় বিপর্যয় ডেকে আনে এই মার্কিন শর্ট সেলিং সংস্থা। সেই সংস্থাই এবার বন্ধ হতে চলেছে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা ন্যাথান অ্যান্ডারসন জানিয়েছেন যে তিনি এই ফার্মটি বন্ধ করতে চলেছেন।
বুধবার একটি ওয়েবসাইট পোস্টে ন্যাথান অ্যান্ডারসন লিখেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।’ ন্যাথান তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাঁর জীবন নয়, জীবনের একটা অধ্যায়। তাই চিন্তা–ভাবনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। হিন্ডেনবার্গ প্রতিষ্ঠাতা জানান, তিনি তাঁর ব্যাক্তিগত জীবনে সময় দিতে পারছিলেন না। জীবনে ভারসাম্য ফেরাতেই সংস্থা আপাতত বন্ধ করছেন তিনি। তবে এই সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কোন ‘শক্তি’র প্রভাব নেই বলে দাবি করেছেন ন্যাথান অ্যান্ডারসন। কিন্তু তাঁর হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব কাজ করেছে কি না তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের জেরে সমস্যায় পড়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানি। কারচুপি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো, বেআইনি আর্থিক লেনদেন, করদাতার তহবিল চুরির মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ এনেছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রকাশিত রিপোর্ট। অভিযোগের তদন্তে আদানি গোষ্ঠীকে সাহায্য করার অভিযোগ তোলা হয়েছিল বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির মাধবী পুরী বুচের বিরুদ্ধেও।
প্রসঙ্গত, কারচুপি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো এবং কর ফাঁকি-সহ বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এনেছিল ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ ২০২৩ সালে। এ নিয়ে কেন্দ্রকে ধারাবাহিক ভাবে নিশানা করেছিল বিরোধীরা। উঠেছিল জেপিসি তদন্তের দাবি। শেয়ার বাজারে আদানিকাণ্ডের প্রভাব খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। যদিও সেই তদন্তে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি আদানিদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার হিন্ডেনবার্গ বন্ধের ঘোষণার পরেই আদানিদের শেয়ারের দর চড়তে শুরু করে শেয়ারবাজারে। ১৬ জানুয়ারি তাঁর সংস্থাগুলির স্টকের দাম সব মিলিয়ে বেড়েছে প্রায ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সূচক আরও ঊর্দ্ধমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬.৬ শতাংশ বেড়ে আদানি এনার্জি সলিউশনের স্টকের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৩২ টাকা। আদানি পোর্টসের একটি শেয়ারের দাম হয়েছে ১ হাজার ১৯০ টাকা। এই সংস্থার স্টকে ৫.৫ শতাংশ ঊর্দ্ধগতি দেখা যায়। অম্বুজা সিমেন্টের স্টকের দাম বেড়েছে ৪.৫ শতাংশ। আদানির এই সিমেন্ট সংস্থার শেয়ারের দাম ৫৪৩ টাকায় পৌঁছে যায়। অন্যদিকে গ্রিন এনার্জি, আদানি এন্টারপ্রাইজ এবং আদানি টোটাল গ্যাসের মতো সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশেরও বেশি হারে। এককথায়, হিন্ডেনবার্গ বন্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শেয়ারবাজারে ঝড় তোলে গৌতম আদানির সংস্থা।