• facebook
  • twitter
Thursday, 16 January, 2025

টাকা না পেয়েই মামাতো ভাইয়ের হাতে খুন দিদি, গলফগ্রিন কাণ্ডে ধৃত সাব্বির

বাজারে লাখ তিনেক টাকার দেনা। সেই দেনার শোধ করার জন্য পিসতুতো দিদির কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল সাব্বির (৩৮)।

ফাইল চিত্র।

বাজারে লাখ তিনেক টাকার দেনা। সেই দেনার শোধ করার জন্য পিসতুতো দিদির কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল সাব্বির (৩৮)। তা দিতে অস্বীকার করতেই বেঘোরে প্রাণ দিতে হল বছর চল্লিশের মহিলা নাফিজা খাতুনকে। গলফগ্রিনে মাঝ বয়সী মহিলাকে খুনকাণ্ডে ধৃত সাব্বির আলিকে জেরা করে এমনই তথ্য পেল কলকাতা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতা মধ্য বয়সী মহিলা নাফিজা আদতে সাব্বিরের পিসির মেয়ে। বাজারের দেনা মেটাতে মাঝে মধ্যেই নাফিজার কাছে ধার চাইত সাব্বির। তা নিয়ে ভাই-বোনের মধ্যে ঝামেলাও ছিল বিস্তর। এ দিনও ঠিক একই ভাবে ধার মেটানোর জন্য ১০ হাজার টাকা ধার চাইতে গিয়েছিল সাব্বির। তখনই রেগে ভাইয়ের মুখে ঘুষি মারে দিদি। বদলা নেওয়ার সূত্রপাত এখানেই। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে তুমুল বচসা এবং হাতাহাতি। নিজেকে মামাতো ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচাতে রান্না ঘর থেকে ছুরি নিয়ে আসে নাফিজা। তবে সেই ছুরি কেড়ে নিয়েছিল সাব্বির। আর তা দিয়েই রাগের মাথায় দিদির গলায় এবং মাথায় আঘাত করে অভিযুক্ত ভাই। তারপর দিদির দেহ যেন সহজে কারও নজরে না আসে, তা নিশ্চিত করতে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে সাব্বির। পুলিশের জেরার মুখে এমনটাই জানিয়েছে ধৃত সাব্বির আলি।

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত সাব্বির হরিদেবপুর থানা এলাকার নজরুল সরণির বাসিন্দা। ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক ব্যক্তির কাছে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ধার রয়েছে তার। মাঝে মধ্যে ফলস সিলিংয়ের কাজ করলেও বছরের বেশিরভাগ সময়ই বেকার থাকত সাব্বির। তবে ধারের টাকা মেটানোর জন্য ভাইপোকে মাঝে মধ্যে আর্থিক সাহায্যও করতেন নাফিজার মা খয়রুন্নিসা। তা নিয়েও রাগ ছিল মেয়ের।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল ৫টা নাগাদ অন্যান্য দিনের মতো নিজের চায়ের দোকানে যায় মৃতার মা। তারপর মাকে খাবার দিতে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দোকানেও গিয়েছিল নাফিজা। তারপর থেকেই মেয়ের আর কোনও খোঁজ পাননি ষাটোর্ধ্ব মা। দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ি গেলেও দেখা মেলেনি মেয়ের। পরে বিকেল চারটের দিকে বাড়ি ফিরে মেয়ের ঘরে ঢুকতেই দেখেন, লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে ঘর। মেঝেতে চাপ চাপ রক্তের দাগ। সেই রক্তের দাগ চলে গিয়েছে মেয়ের খাটের নিচে। সেই সূত্র ধরে খাটের নিচে দেখতেই আঁতকে ওঠেন মা। দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পরে রয়েছে মেয়ে। তারপরই সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ নিহত নাফিজার বোন এসে থানায় খবর দেয় খুনের কথা।

সেই মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গলফগার্ডেন থানার পুলিশ আধিকারিকেরা। নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশি কুকুর, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধি দল। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার বাড়ির সদস্য এবং অন্যন্যদের বয়ানের ভিত্তিতে আটক করা হয় তিন যুবককে। যাদের মধ্যে ছিল নাফিজার মামাতো ভাই সাব্বির। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারী আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও পরে নিজের মুখেই স্বীকার করে খুনের কথা।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, নাফিজাকে খুন করা হয়েছে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে, যা থেকে তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, মায়ের দোকান থেকে ফিরে এসেই খুন হন মহিলা। সেই সময় বাড়িতে ঢুকে তাঁর উপর চড়াও হয় ভাই সাব্বির। সূত্রের খবর, দিদিকে খুন করে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল ভাই। তারপর দিদিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না খবর পেতেই আবারও দিদির বাড়ি ফিরে আসে সে। নাটকীয় ভাবে দিদিকে খোঁজার চেষ্টা চালায় সাব্বির, এমনটাই দাবি পুলিশের। যা দেখে সন্দেহ হতেই আটক করা হয় সাব্বিরকে। তবে মূল অভিযুক্তের খোঁজ মিললেও, এখনও পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি মারণ অস্ত্রের। এই বিষয়ে উপনগরপাল (যাদবপুর) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত জানান, ‘ধৃত জেরার মুখে খুনের কথা স্বীকার করেছিল। তবে এখনও পর্যন্ত ধারালো অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে’।