জলপাইগুড়ি থেকে হুগলি, দূরদুরান্তের রোগীদের ভরসাস্থল হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ‘সেবাশ্রয়’। প্রকল্প সূচনার প্রথম দশদিনে আড়াই লক্ষ মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান এবং বারো দিনের মধ্যে তিন লক্ষের বেশি মানুষের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে সেবাশ্রয়ে। প্রত্যেক ক্যাম্পে প্রতিদিন গড়ে উপস্থিত হচ্ছেন তিন শতাধিক মানুষ। অভিষেকের ভাষায়, ‘কেবল একটি বিধানসভা থেকে এতো মানুষ নিজ ভোটাধিকারও প্রয়োগ করেন না, যত মানুষ সেবাশ্রয়ে আসছেন।’ বিগত চোদ্দো দিনে যে সকল রোগী সেবাশ্রয়ের শিবিরে হাজির হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একাধিক রোগীর বেশ জটিল সমস্যা। সেই তালিকায় রয়েছে জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই শিশু, যাঁদের শ্রবণযন্ত্রে সমস্যা এবং খানাকুলের এক শিশু বিরল রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফিতে আক্রান্ত। এই তিন শিশুর পরিবারই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁদের শিশুদের চিকিৎসার খরচ বহনের জন্য। সেই আবেদন সাড়াও দিলেন অভিষেক।
বুধবার সাংসদ জানিয়েছেন, ‘জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং খানাকুলের তিন শিশুর সমস্যা শুনে আমি আমাদের চিকিৎসক টিমের সঙ্গে কথা বলেছি। এর মধ্যে জলপাইগুড়ি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই শিশুরই কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট দরকার। ইতিমধ্যেই আমরা কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি, তারা দেবে। না দিতে পারলেও আমরা ব্যবস্থা করব। এই ধরনের সার্জারিতে ১০-১২ ঘন্টার সময় লাগে। নির্দিষ্ট যন্ত্রের ব্যবস্থা হয়ে গেলেই ছুটির দিন দেখে এই সার্জারি করা হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে।’ পাশাপাশি অভিষেক আরও জানান, ‘খানাকুলের শিশুটির জন্য টানা দশদিনের ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এখানেই তার বাবা-মায়ের থাকার বন্দোবস্তও করা হয়েছে। ফিজিওথেরাপিতে সে সুস্থ না হলে আমরা ব্যতিক্রমী চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নেব।’
উল্লেখ্য, বুধবার ফলতা বিধানসভার হরিণডাঙ্গা বিডিও অফিস মাঠের সেবাশ্রয় স্বাস্থ্য মডেল শিবির-সহ আরও দুই মেডিক্যাল শিবির পরিদর্শন করেন অভিষেক। তাঁর সঙ্গে এদিন উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর খান, অভিষেকের সহকর্মী সুমিত রায়, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ভার্তেন্দু শর্মা, বিশিষ্ট চিকিৎসক অভীক ঘোষ। পরিদর্শন পর্ব শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেবাশ্রয়ের উদ্দেশ্য তুলে ধরে ফের সাংসদ বলেন, ‘সেবার মাধ্যমে মানুষকে আশ্রয় প্রদান, এটিই আমাদের লক্ষ্য। কোনও মানুষকে যেন খালি হাতে ফিরতে না হয়। চিকিৎসক থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে কুর্নিশ।’
তবে সেবাশ্রয়ে ভিড় মানেই রাজ্যে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ত্রুটিপূর্ণ, তা সম্পূর্ণ ভুল। এ প্রসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার পিএইচসি, মেডিক্যাল কলেজ, রাজ্য এবং গ্রামীণ হাসপাতাল, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাব সেন্টার ইত্যাদি নির্মাণের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জোরদার করেছে। আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে বুথ স্তর পর্যন্ত নেমে মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।’ এরই সঙ্গে সেবাশ্রয়কে কেন্দ্র করে নিজ বৃহৎ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন সাংসদ। তাঁর ভাষায়, ‘এখন ছ’টি বুথ পিছু একটি ক্যাম্প হচ্ছে, আগামীদিনে আমাদের প্রচেষ্টা হবে একটি বুথেই একটি ক্যাম্প। এটাই জীবন, স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্যই লড়তে হবে।’