এইচএমপিভি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)-সহ নিউমোভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত। এটি একটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা সাধারণ সর্দি-কাশির মতো সংক্রমণ ঘটায়। এইচএমপিভি মরশুমি রোগ। সাধারণত শীতকালে এবং বসন্তের গোড়ার দিকে শ্বাসযন্ত্রের সিন্সিটিয়াল ভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ দেখা যায়। একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. নায়ার, স্টেটসম্যান পত্রিকাকে বলেছেন,‘এটি হালকা সর্দি থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া এবং ব্রঙ্কিওলাইটিসের মতো গুরুতর ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। যদিও এটি সব বয়সের মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে, এই রোগটি ছোট শিশু এবং বয়স্কদেরই বেশি হয়। শিশুরা তীব্র শ্বাসকষ্ট, কাশি, ধুম জ্বর-সহ গুরুতর উপসর্গ অনুভব করতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুরা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে এবং তাদের ডিহাইড্রেশনও হতে পারে।’
এইচএমপিভি অত্যন্ত সংক্রামক। ভাইরাসটির ইনকিউবেশন সময়কাল তিন থেকে ছয় দিন, যার মধ্যে কোনও ব্যক্তির উপসর্গ দেখা না গেলেও তা সংক্রামক হতে পারে। ভারত জুড়ে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১২টি এইচএমপিভি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
ড. নায়ারের মতে, ‘এইচএমপিভি কোনও নতুন ভাইরাস নয়। এটি বেশ কিছুদিন ধরেই রয়েছে, শীতকালে এর প্রকোপ শীর্ষে থাকে। বিগত বছরে শীতকালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং রোগীদের অধিকাংশই খুব বেশি জটিলতা বা তীব্রতা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠছেন। যেহেতু প্রতিবেশী দেশে (চিন) এই জাতীয় রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারতে খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করা হয়েছে- তাই সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
নায়ার আরও বলেছেন যে, ‘এইচএমপিভির জন্য কোনও নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই এবং প্রতিরোধই এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তি। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে বিশ্রাম এবং হাইড্রেশন। উপসর্গ কমাতে প্যারাসিটামল এবং অন্যান্য ব্যথা নাশকের মতো অ্যান্টিপাইরেটিক নেওয়া যেতে পারে। গুরুতর পরিস্থিতিতে অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। বাড়াবাড়ি অবস্থায় ব্রঙ্কোস্পাজমের কারণে হাইপোক্সিয়া, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাঁপানি বা সিওপিডি-র মতো অন্তর্নিহিত শ্বাসনালীর রোগে আক্রান্ত হতে পারে রোগীরা। মনে রাখবেন অ্যান্টিবায়োটিকের এখানে কোনও ভূমিকা নেই। এইচএমপিভি একটি ভাইরাল রোগ এবং অ্যান্টিবায়োটিক এতে সাড়া দেবে না।’
যেহেতু কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তাই এর বিস্তার রোধ করার প্রধান লক্ষ্য হল সতর্কতা। হাতের পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং পুষ্টি গ্রহণ করা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে। কোভিড এবং এইচএমপিভি উভয়ই ভাইরাল অসুস্থতা এবং শ্বাসযন্ত্রের লক্ষণগুলিকে সংক্রামিত করে। উভয়ই শ্বাসনালীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং অত্যন্ত সংক্রামক। কিন্তু কোভিড ১৯-এর একটি খুব দীর্ঘ ইনকিউবেশন পিরিয়ড ছিল এবং রোগীরা খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য সংক্রামিত ছিলেন। তাই কোভিডে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
কোভিড একটি নতুন ভাইরাস যেখানে চিকিৎসাই একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছিল। তুলনায় এইচএমপিভি একটি পুরানো ভাইরাস এবং এর প্রকৃতি অজানা নয়। কোভিড অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গেও জড়িত ছিল কিন্তু এইচএমপিভি মূলত শ্বাসযন্ত্র এবং শ্বাসনালীর সঙ্গে জড়িত। কিছু গবেষণায় এইচএমপিভি এবং কিডনির স্বাস্থ্যের মধ্যে সংযোগের দাবি করা হয়েছে। নায়ারের মতে, ‘এই ধরনের সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্য আরও প্রতিবেদন এবং গবেষণা প্রয়োজন। এমন কিছু রোগী থাকতে পারেন যাদের একেআই (অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি) থাকতে পারে। তবে এইচএমপিভিকে নেফ্রোটক্সিক ভাইরাল সংক্রমণ হিসাবে চিহ্নিত করার আগে, আমাদের অন্যান্য গবেষণার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’