আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। মানব স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে, ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এবং জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বর্তমানে, স্বাস্থ্যসেবায় জলবায়ু অর্থায়ন খুবই অপর্যাপ্ত। বিশ্ব জলবায়ু অর্থায়নের মাত্র ০.৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে পৌঁছেছে। এটি চাহিদা এবং সম্পদের মধ্যে বিশাল ব্যবধান তৈরি করে ফেলেছে। এই বিষয়টিই সম্প্রতি জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির অভিযোজন গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৩-এ হাইলাইট করা হয়েছে।
এটি মোকাবিলা করার জন্য, মূলধন পদ্ধতির ধারাবাহিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা সামাজিক বিনিয়োগ, দাতব্য এবং মিশ্রিত অর্থ থেকে বিনিয়োগের প্রভাব, আর্থিক উপকরণগুলির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। এই ধারাবাহিকতা আর্থিক লাভের পাশাপাশি সামাজিক ও পরিবেশগত লাভের সংমিশ্রণ পর্যন্ত বিস্তৃত।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, একটি বহুমুখী কৌশল অপরিহার্য। এছাড়া প্রয়োজন নীতি ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো। সরকারকে অবশ্যই এমন নীতি তৈরি করতে হবে যা, জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্যসেবা সমাধানে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে।
বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো, প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য প্রযুক্তির মতো, জলবায়ু-স্বাস্থ্যের উপরও সর্বোচ্চ প্রভাব রয়েছে এমন ক্ষেত্রগুলিতে কৌশলগতভাবে বর্তমানে সম্পদ বরাদ্দ করতে হবে।
অভিযোজন প্রচেষ্টা সম্প্রসারণের জন্য গবেষণা, সমর্থন এবং অংশীদারদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে, একটি সমন্বয়মূলক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেট্রিক্স ইন্টিগ্রেশন এখন আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। অর্থাৎ জলবায়ু তহবিলে স্বাস্থ্যসেবা মেট্রিক্স অন্তর্ভুক্ত করা এবং এর বিপরীতে সামগ্রিকভাবে জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে হবে। জলবায়ু সংকট ভারতে স্বাস্থ্যসেবার পক্ষে বর্তমানে বেশ ঝুঁকি তৈরি করেছে। তাই অভিযোজন কৌশলগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং আর্থিক সংস্থানগুলিকে সারিবদ্ধ করে, একটি স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়তে হবে।
জলবায়ু প্রভাবের বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো রক্ষা করে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা গড়ে তুলতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি অবশ্যই সম্প্রদায়-কেন্দ্রিক সমাধানের সঙ্গে, হাতে হাত মিলিয়ে করতে হবে। জলবায়ু অভিযোজন প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে স্থানীয় জনগণের ক্ষমতায়ন জরুরি। এর মাধ্যমেই তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য চাহিদা পূরণ হবে।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের, বিশেষত যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রথম সারিতে রয়েছেন- তাঁদের কল্যাণে বিনিয়োগ করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য কার্যকরভাবে রক্ষার জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, যাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থান গড়ে ওঠে।
ইনফোডেমিকের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে লড়াই করার জন্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার কৌশলগুলি অবশ্যই প্রথাগত আইইসি পদ্ধতির বাইরে এসে প্রয়োগ করতে হবে। জটিল স্বাস্থ্যহানিকর সংকেতগুলি সহজতর করতে ও সচেতনতা বাড়াতে, স্থানীয় এবং ডিডিটাল প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এর ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যগুলি সহজলভ্য হবে এবং কার্যকর হবে। এই ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে, স্বাস্থ্য বাজেট করা উচিত। এটাই সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রতি স্থিতিস্থাপকতা, সমতা এবং বিশ্বাসকে চালিত করতে পারে। ফলে ২০২৫-এর বাজেটের থেকে প্রত্যাশা অনেক। কতটা তার পূরণ হয়, সেটাই দেখার।