সম্বুদ্ধ দত্ত
১৬৯৮ সালের ১০ নভেম্বর সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার তেরোশ টাকার বিনিময়ে কলকাতা, গোবিন্দপুর এবং সুতানুটি এই তিনটে গ্রামের প্রজাসত্ব ইংরেজদের কাছে হস্তান্তর করে। (মনে রাখা দরকার বিক্রি নয়) এই ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। তবে ইংরেজের এই প্রজাসত্ব লাভ কিন্তু মোটেও সহজ ছিলনা। সাবর্ণ পরিবার এই তিনটে গ্রাম কিছুতেই সেদিন ইংরেজদের হাতে তুলে দিতে সম্মত ছিলনা। এই হস্তান্তরের বিরুদ্ধে তাঁরা দিল্লির সুলতানের কাছে দরবার পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু বাংলার নবাবের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই তাঁরা এই গ্রাম তিনটের প্রজাসত্ব ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়। ইংরেজ রাজত্বের সূচনা বিশেষ করে কলকাতার ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে অনিবার্যভাবেই সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের কথা উঠে আসে। সুতরাং ইংরেজ রাজত্বের সূচনা এবং কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের বর্তমান সদস্য দেবর্ষি রায়চৌধুরী তাঁর নিজের বাসগৃহে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ঐকান্তিক উৎসাহ ও সহযোগীতায় তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন সাবর্ণ সংগ্রহশালা। শুধু গড়েই তোলেননি প্রতিদিন সংগ্রহশালা দর্শনার্থীদের এবং বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীদের অবিভাবকের মতো ব্যক্ত ও বিশ্লেষন করে চলেছেন সংগ্রহশালায় রক্ষিত সম্পদের বিবরণ এবং সেই সময়কালের ইতিহাস। পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বাংলায় ছড়িয়ে থাকা সাবর্ণ পরিবারের বিভিন্ন শাখার কৃতি সন্তানদের সামাজিক অবদানের কথা। জোব চার্নক কলকাতায় পদার্পণের বহু আগেই কিন্তু কলকাতায় বসতি তৈরি হয়েছে। নদী পথে বানিজ্য কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বণিকরা এখানে বানিজ্য করতে আসছে। আর্মেনিয়ানরা তো ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে, উপাসনার গির্জা তৈরি করেছে। এই তথ্যগুলো উপস্থাপন করে সাবর্ণ পরিবার দীর্ঘ লড়াই করে আদালতে প্রমাণ করেছে জোব চার্নকের হাত ধরে কলকাতা গড়ে ওঠেনি। সুতরাং ২৪ আগস্ট কলকাতার জন্মদিন এমন ধারণা সর্বতো ভ্রান্ত। অতএব কলকাতার কোন জন্মদিন হতে পারে না। কলকাতা গ্রাম থেকে কালের নিয়মে ধীরে ধীরে শহরের রূপ পেয়েছে।
সিঙ্গুর থেকে সিংহল। বাংলার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের সেতুবন্ধন, দেবর্ষিবাবুর মুখে ইতিহাসের এমন নানা কথা শুনতে শুনতে মন চলে যায় সুদূর থেকে সুদূর অতীতে। এখানে না এলে অনেক অজানার মধ্যে অজ্ঞাত থেকে যেত কলকাতার প্রথম পাকা রাস্তার কথা। কলকাতার প্রথম পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছিল কালীক্ষেত্র কালীঘাট থেকে বরিশা পর্যন্ত। ব্রিটিশ যে রাস্তার নাম দিয়েছিল ‘পিলকিংস রোড’। জানা গেল আজকের হালিশহর (হাভেলি শহর) তৈরির আদি কথা। সারর্ণ রায়চৌধুরী বংশের পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন (পাঁচু শক্তি থান) হালিশহরের সৃষ্টি কর্তা। এখানকার কালীকাতলা ঘাট, বুড়ো শিবের ঘাট, সিদ্ধেশ্বরী ঘাট, বকুলতলা ঘাট, বুড়ো শিবের মন্দির থেকে রামপ্রসাদের পঞ্চবটির মতো আরও বহু দ্রষ্টব্য সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশধররা নির্মাণ করে গেছেন। কালীক্ষেত্র কালীঘাট এবং করুণাময়ী কালী মন্দিরের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে আছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার। অতএব আদি কলকাতা থেকে পরবর্তীতে তথাকথিত কলকাতা সৃষ্টির সত্য ইতিহাস জানতে গেলে একবার যেতেই হবে বেহালা বরিশার সাবর্ণ সংগ্রহশালায় । সাবর্ণ সংগ্রহশালায় রয়েছে সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের আদি পরিচয়। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির বাদশাহ জাহাঙ্গীরের থেকে লক্ষীকান্ত গঙ্গ্যোপাধ্যায় বিশাল জমিদারি লাভ করেন।
সপ্তগ্রামের অধীন আনোয়ারপুর, হালিশহর, ব্যারাকপুর থেকে ডায়মন্ডহারবার পর্যন্ত ছিল জমিদারীর ব্যপ্তি। আজকের ডায়মন্ড হারবারের লক্ষ্মীকান্তপুর কিন্তু জমিদার লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের নামে নামাঙ্কিত। এক সময় এই পরিবারে অধীনে নয়টি কোলিয়ারি এবং মাইন্স ছিল। এখানে প্রদর্শনীর জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ১৮৯০ সালের একটা কম্পাস এবং ১৭ শতাব্দির পৈতে তৈরির ‘তকলি’। ১৮১০ সালের প্রাচীন এক পাখা৷ এই পাখা ব্যবহার করতেন পরিবারের সদস্যা হারিনীদেবী। রাজাবাবু গৌরীকান্ত রায়চৌধুরীর ব্যবহৃত মার্বেলের একটি অতি সুন্দর রেকাবি এখানে সংরক্ষিত আছে। সেকালে জমিদাররা সর্বসাধারণের কাছে রাজা বলে সম্বর্ধিত হতেন। এই ধারা বজায় রেখে গৌরীকান্ত রায়চৌধুরী ছিলেন প্রজাদের কাছে শ্রদ্ধেয় রাজাবাবু। রাজাবাবু গৌরীকান্ত কলকাতার উপকন্ঠে একটি বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানে এক বিশাল হাট বসার ব্যবস্থা করেন। এই কারণেই রাজাবাবুর নামে এই অঞ্চলের নাম হয় রাজারহাট। যা আজকের একটি সম্ভ্রান্ত জনপদ রাজারহাট উপনগরী।
সাবর্ণ সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে ১৬০৯ সাল থেকে শুরু করে বেশ কিছু বিভিন্ন সময়ের ও আকারের ইট। এই ইট গুলোর আকারের বিভিন্নতা বাংলার স্থাপত্যের ক্রম বিবর্তনের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। এই ইটগুলোর মধ্যে আশ্চর্য আকারের কিছু শিবলিঙ্গের অনুকরণে ইটও রয়েছে। ১৭১০ সালের একটা পাথরের বহু প্রাচীন ফলকে ‘সাবর্ণভীলা’ লেখা ফলকের দেখা মেলে। এই ‘সাবর্ণভীলা’ ছিল উত্তরপাড়ার রত্নেশ্বর রায়চৌধুরীর বাড়ি। বাংলা শিল্প এবং সাহিত্যে এই বাড়ির উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে । এই বাড়িতে ব্যতিক্রমী চিন্তা, ভাবনা ও মানসিকতায় পুষ্ট সাহিত্যিক মলয় রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্ট্যোপাধ্যায়, দেবী রায় এই চারজন মিলে ‘হাংরি জেনারেশন আন্দোলনের’ সুচনা করেন। পরবর্তীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় থেকে আরও বেশ কিছু মহান ব্যক্তি এই আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন। এই আন্দোলন সেকালে যথারীতি আলোড়ন তুলেছিল। এই বাড়িতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সুনীল তাঁর নীরা চরিত্রটি এই বাড়িতে বসেই রূপায়ণ করেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘একা এবং কয়েক জন’ প্রকাশে রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যা অপূর্বময়ী দেবীর অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। উপন্যাসটি অপূর্বময়ী দেবীর আর্থিক সহয়তায় প্রকাশিত হয়েছিল। অপূর্বময়ী দেবী ছিলেন পালামৌর ভূমিকন্যা। পালামৌর জঙ্গলের পটভূমিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’ রচনা করেন।
পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে গল্পটি চলচ্চিত্র আকারে প্রকাশ পায়। সিনেমাটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসের চিরঅমর হয়ে আছে। এখানে আরও একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, সিনেমায় সুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রটা ছিল বাস্তবে সাবর্ণ পরিবারের সদস্য সমীর রায়চৌধুরীর। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর প্রথম স্ত্রী বিয়োগের পর সাবর্ণ পরিবারের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের জামাতা। বাংলা চলচ্চিত্র, সংগীত, খেলাধূলা এমন কি আধ্যাত্মিকতার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা বাংলার সমাজ জীবনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এই পরিবারের কৃতি সন্তান সমামধন্য গীতিকার প্রণব রায় বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রে অসংখ্য বিখ্যাত গান লিখেছেন, রচনা করেছেন বহু বিখ্যাত ছবির চিত্রনাট্য। এমনকি তাঁর লেখা গল্প নিয়ে হিন্দি সিনেমাও তৈরি হয়েছে। একইভাবে এই পরিবারের শিল্পী, গায়ক রতিকান্ত রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলা সংগীত জগতের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। স্বামী যোগদানন্দের একটা ছবি এখানে সজ্জিত রয়েছে।
স্বামী যোগদানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল যোগীন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী। স্বামী যোগদানন্দ হলেন যোগীন মহারাজ। শ্রীরামকৃষ্ণ এই যোগীন মহারাজকেই সারদা মায়ের দেখভালের সমস্ত ভার অর্পণ করেছিলেন। এছাড়াও এই পরিবারের আর এক বিখ্যাত সদস্যর ছবির এখানে দেখা মেলে। জগদীশ রায়চৌধুরী। জগদীশ রায়চৌধুরী ১৯৩২ ও ১৯৩৩ সালে অবিভক্ত ভারতের বঙ্গ প্রদেশের বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। এই সংগ্রহশালায় পরিবারের পূর্বপুরুষদের ছবির মধ্যে সব থেকে পুরনো অভয় রায়চৌধুরী ছাড়াও তারাকুমার রায়চৌধুরী, যোগীন মহারাজ এবং কামাক্ষ্যা রায়চৌধুরীর বহু পুরোনো ছবি রয়েছে। পুরোনো ছবির মধ্যে আর একটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল সে সময়ের হালিশহরের ছবি।
সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত রয়েছে প্রণব রায় সম্পর্কিত মূল্যবান বই| একইভাবে রয়েছে ‘বঙ্গীয় সাবর্ণ কথা কালীক্ষেত্র কলিকাতা’ নামের ইতিহাস সম্বলিত ভবানী রায়চৌধুরীর রচনা বই। এই বইটি থেকে কলকাতা এবং বাংলার নানা অঞ্চল গড়ে ওঠার সঙ্গে সেখানকার ইতিহাস এবং সাবর্ণ পরিবারের আধ্যাত্মিকতার নানা কাহিনী জানা রায়। সূতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলতে হয় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার জমিদারীর পাশাপাশি বাংলার শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, ক্রিয়া এবং আধ্যাত্মিক জগতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। সাবর্ণ সংগ্রহশালায় রাখা সেকালের ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন সামগ্রী দেখে আজও মনে বিষ্ময় জাগায়। ১৮১০ সালের এমনই একটা চাল রাখার প্রকান্ড পোড়ামাটির হাঁড়ি রয়েছে। এই হাঁড়িতে ৬ মন চাল রাখা যায়। এর পাশাপাশি রান্না ঘরে ব্যবহারের নানা সামগ্রী যেমন জগ, বালতি, ১৯১০ সালের নুন রাখার পাত্র, মশলা পেশাই সামগ্রী, ২৫০ বছরের পুরনো অসাধারণ চিত্রিত একটা বিয়ের পিঁড়ি। ১৮৭৭, ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালে ব্যবহারের বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন বাতি স্তম্ভ এবং মোমদানি৷ সংগ্রহশালায় রাখা জমিদার গিন্নী কমলিনী দেবীর ব্যবহারের শখের ড্রেসিং টেবিল সেসময়ের ঐতিহ্যের বহন করে। ড্রেসিং টেবিলটি বার্মাটিক কাঠের সঙ্গে বেলজিয়াম গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। এখানকার একটি বেশ ছোট দাঁড়িপাল্লা দেখলে মনে নানা প্রশ্ন জাগে। এই প্রশ্নের নিরসনের করেন দেবর্ষি রায়চৌধুরী। জানা যায় দুলালচন্দ্র রায়চৌধুরী এই দাঁড়ি পাল্লার সাহায্যে বিভিন্ন ঔষধি পরিমাপ করে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ তৈরি করতেন। সংগ্রহশালার সংগ্রহে রয়েছে ৩০০ বছরের বেশি সময়ের পুরোনো একটা প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বালিয়ে আজও প্রতি বছর সাবর্ণ পরিবারের ‘আন্তজাতিক ইতিহাস উৎসবের’ শুভারম্ভ করা হয়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহের রবিবার থেকে টানা চার দিন এই উৎসব চলে।
সংগীতপ্রেমী সাবর্ণ পরিবারের উদ্যোগে একইভাবে প্রতিবছর ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যে আটচালা দুর্গা দালানে বসে ১৬৯৮ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে সাবর্ণ রায়চৌধুরী জমিদারদের প্রজাসত্বের অধিকার দেওয়া হয়েছিল জয়দীপ রায়চৌধুরী ও সন্দীপ রায়চৌধুরীর আঁকা সেই দুর্গা দালানের ছবি সংগ্রহশালার শোভা পাচ্ছে এবং এর পাশাপাশি ১৯২৫ সালের দুর্গা পূজার একটা ছবিও রাখা আছে। সাবর্ণ সংগ্রহশালার সবথেকে দুর্মূল্য যে সম্পদটি রয়েছে তা হল প্রজাসত্ব হস্তান্তরের সেই দলিল৷ মহাত্মা গান্ধীর উপর একটা গ্যালারি এখানে তৈরি করা হয়েছে। এই গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে গান্ধিজি সম্পাদিত হরিজন পত্রিকা এবং তাঁর মৃত্যুর পরের দিন ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারির ‘আনন্দ বাজার’ এবং ‘অমৃত বাজার’ পত্রিকা। পরাধীনতার সময় থেকে বর্তমান ভারতের জাতীয় পতাকার ক্রমবিবর্তন রূপের প্রতিকৃতির এখানে দেখা মেলে। সংগ্রহশালার একপাশে আজও সঞ্চিত আছে ৩০০ বছরের আগেকার বেশ কিছু অনির্ধারিত সময়কালের পুথি। নজর কাড়ে ১৯২৮ সালের একটা মানচিত্র। এই মানচিত্রটি সমস্ত বরিশা অঞ্চল সহ দক্ষিণবঙ্গ এবং দক্ষিণ কলকাতার প্রান্তিক অঞ্চলের অবস্থানকে নির্ণয় করে। পরাধীন ভারতের সময়কার চিত্রকর ড্যানিয়েল সাহেবের হাতে আঁকা কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলের ছবি। এই ছবিগুলোর মাধ্যমে কলকাতার সেই সময়ের আর্থ ও সামাজিক অবস্থা ধরা পরছে। দেবর্ষি রায়চৌধুরী এবং জয়দীপ রায়চৌধুরীদের মতো মানুষদের কাছে কলকাতাবাসী কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে দেবর্ষি রায়চৌধুরী যেভাবে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে কলকাতার ইতিহাসকে আগলে রেখেছেন তাতে কোন কৃতঞ্জতাই তাঁর পক্ষে যথেষ্ঠ নয়। সাবর্ণ সংগ্রহশালা পরিদর্শন করে শুধু একটি কথাই বলতে হয়, সাবর্ণ সংগ্রহশালা কোনো সাধারণ সংগ্রহশালা নয় এটি হল প্রকৃতপক্ষে কলকাতার ধাত্রীগৃহ।