• facebook
  • twitter
Monday, 20 January, 2025

সরকারি চাকরির সাতসতেরো

গত সপ্তাহের ডাব্লুবিসিএসের পার্সোনালিটি টেস্টের উপর পাতা-জুড়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আমরা দারুণ সাড়া পেয়েছি। সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে, পড়ুয়া-পরীক্ষার্থী, এমনকি প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকেও। আপনাদের ব্যাপক সাড়ায় আমরা অভিভূত হওয়াতে জানাই কৃতজ্ঞতা। টিম ‘সরকারি চাকরির সাতসতেরো’ সমস্ত পাঠক/পাঠিকাকে জানাচ্ছে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা, সঙ্গে তাঁদের সাফল্য কামনা। গত ষষ্ঠ পর্বে জানানো হয়েছিল নাগরিকত্ব লাভের নিয়ম-কানুন। এবারের বিষয় — ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকত্ব বিলোপের নানারকম। জানালেন অভিজ্ঞ শিক্ষা-পরামর্শক এবং ভারতীয় নিরীক্ষা ও হিসাব দফতরের আধিকারিক অনিন্দ্য কিশোর।

ফাইল চিত্র

(পর্ব – ৮)

সংবিধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ

উত্তর আমেরিকা মহাদেশের কানাডার মতো, ভারতীয় সংবিধানে একক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা চালু। এ দেশের জনগণের প্রত্যেকের জন্য সমান-অধিকারের (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যাতে, প্রত্যেকের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের অনুভূতি প্রচার করা যায় এবং একটি একক ভারতীয় জাতি গঠন করা যায়। তা সত্ত্বেও, সুদূর এবং সাম্প্রতিক অতীতেও সাম্প্রদায়িক-দাঙ্গা, শ্রেণিসংঘাত, এবং বর্ণ-সংঘর্ষের সাক্ষী থেকেছে এ দেশের জনগণ।

ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা (নির্বাচিত কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার) থাকা সত্ত্বেও, এটি একক নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে। ভারতের নাগরিকরা শুধুমাত্র সমগ্র রাষ্ট্র বা দেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবেন। ভারতে আলাদা ভাবে রাজ্য-নাগরিকত্বের কোনও অস্তিত্ব নেই। অপরদিকে, অন্য ফেডারেল রাষ্ট্রগুলি, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ডে দ্বৈত নাগরিকত্ব ব্যবস্থা দেখতে পাওয়া যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রতিটি ব্যক্তি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, বরং তিনি যে নির্দিষ্ট রাজ্যের বাসিন্দা, সেই রাজ্যেরও নাগরিক। ফলে, তিনি উভয়ের প্রতি (দেশ এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য) আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং জাতীয় সরকার দ্বারা প্রদত্ত সমস্ত অধিকারগুলি এবং রাজ্য সরকার দ্বারা প্রদত্ত অন্য অধিকারগুলিও সমান ভাবে উপভোগ করেন। বিশেষজ্ঞের মতে, এই পদ্ধতিতে বৈষম্যের সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই সমস্যাটি ভারতে প্রচলিত একক নাগরিকত্বের পদ্ধতিতে এড়ানো গেছে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।

ভারতে, সমস্ত নাগরিকরা, তাঁরা যে রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন বা বসবাস করছেন তার পরোয়া না করেই, সারা দেশে সমান রাজনৈতিক এবং নাগরিক অধিকার উপভোগ করে থাকেন। অধিকার উপভোগ করার ক্ষেত্রে, কোনও বৈষম্য করা হয় না। তবে, বৈষম্যের অনুপস্থিতির এই সাধারণ নিয়মটিরও কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।

নাগরিকত্ব বিলোপ
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ অনুযায়ী, নীচের তিনটি পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব বিলোপ হতে পারে। যেমন – পরিত্যাগ, অবসান এবং বঞ্চিতকরণ।

পরিত্যাগের মাধ্যমে

• ভারতের পূর্ণবয়স্ক এবং সক্ষম কোনও নাগরিক, তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব পরিত্যাগ স্বেছায় ঘোষণা করতে পারেন। সেই ঘোষণা নিবন্ধিত হওয়ার পর, সেই ব্যক্তি ভারতের নাগরিকত্ব হারাবেন বা তাঁর নাগরিকত্বের বিলোপ ঘটবে। তবে, এই নিয়মটি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধরত কোনও দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
• যখন একজন ব্যক্তি তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন, তখন সেই ব্যক্তির প্রতিটি নাবালক সন্তানও ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাবেন। তবে, সেই সন্তান/সন্তানেরা আঠারো বছর বয়সে অর্জন করার পরে, তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পুনরায় গ্রহণ করতে পারেন আবেদনের মাধ্যমে।

অবসানের মাধ্যমে
• যখন একজন ভারতীয় নাগরিক ইচ্ছাকৃতভাবে (সচেতন ভাবে, স্বেচ্ছায় এবং কোনও জবরদস্তি, অতিরিক্ত প্রভাব বা বাধ্যবাধকতা ছাড়াই) অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন, তখন তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের স্বাভাবিক-পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে, এই নিয়মটি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধরত কোনও দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

বঞ্চিতকরণের মাধ্যমে
কেন্দ্রসরকার দ্বারা ভারতীয় নাগরিকত্বের বাধ্যতামূলক পরিসমাপ্তি ঘটবে, যদি –
ক) কোনও নাগরিক জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করে থাকেন;
খ) কোনও নাগরিক ভারতীয় সংবিধানের প্রতি অবিশ্বাস প্রদর্শন করেন;
গ) কোনও নাগরিক বেআইনিভাবে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধের সময় ব্যবসা বা যোগাযোগ করেছেন;
ঘ) নিবন্ধন বা স্বাভাবিকীকরণের পাঁচ বছরের মধ্যে কোনও নাগরিক অন্য কোনও দেশের কারাগারে দুই বছর ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন এবং
ঙ) কোনও নাগরিক ভারতের বাইরে সাত বছর অবিরত বসবাস করেছেন।

গ্রন্থ সহায়তা: ইন্ডিয়ান পলিটি; লেখক – এম লক্ষ্মীকান্ত, ম্যাকগ্রহিল ইন্ডিয়া প্রকাশনী।

বহু-বৈকল্পিক নির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
১) কোন আইন দ্বারা ভারতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হয়?
ক) নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫০।
খ) নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫।
গ) ভারতীয় সংবিধান।
ঘ) বিদেশিদের আইন, ১৯৪৬।
২) ভারতীয় নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করার জন্য কী প্রয়োজন?
ক) ভারতীয় নাগরিক হওয়া।
খ) পূর্ণবয়স এবং সক্ষম থাকা।
গ) বিদেশি পাসপোর্ট ধারণ করা।
ঘ) ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে হওয়া।
৩) নাগরিকত্ব হারানোর/বিলোপের কোন পদ্ধতি নীচে নেই?
ক) পরিত্যাগ।
খ) অবসান।
গ) বঞ্চিতকরণ।
ঘ) বাতিল।
৪) ভারত ভ্রমণের জন্য, কোন শর্তে একজন পিআইও কার্ডধারী কোনও ভিসার প্রয়োজন নেই?
ক) যদি তাঁরা নাবালক হয়।
খ) যদি তাঁদের বসবাসের সময়কাল ১৮০ দিনের কম হয়।
গ) যদি তাঁদের বৈধ বিদেশি পাসপোর্ট থাকে।
ঘ) যদি তাঁরা ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে করেন।
৫) পিআইও কার্ডের জন্য যোগ্য কে বা কারা?
ক) যে কোনও বিদেশি নাগরিক।
খ) আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চিন, নেপাল এবং ভুটানের নাগরিক।
গ) ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক।
ঘ) শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে বিবাহিত ব্যক্তিরা।
৬) প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পিআইও কার্ড পেতে আবেদন ফি কত?
ক) ৫,০০০ টাকা।
খ) ৭,৫০০ টাকা।
গ) ১০,০০০ টাকা।
ঘ) ১৫,০০০ টাকা
৭) যদি একজন পিআইও কার্ডধারীর ভারতে বসবাসের সময়কাল ১৮০ দিন অতিক্রম করে, তা হলে তাঁদের কী করতে হবে?
ক) অবিলম্বে ভারত ত্যাগ করতে হবে।
খ) বিদেশিদের আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসে (FRRO) নিবন্ধন করতে হবে।
গ) ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে।
ঘ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে অবহিত করতে হবে।
৮) নীচের কোন কারণে নাগরিকত্ব-বিলোপ হয়ে যেতে পারে?
ক) ১৭ বছর বয়সে অন্য দেশের নাগরিকত্ব লাভ করা।
খ) নিবন্ধন বা স্বাভাবিকীকরণের পাঁচ বছরের মধ্যে বিদেশে দুই বছরের জন্য বন্দী হওয়া।
গ) প্রায়ই ভারতের বাইরে ভ্রমণ করা।
ঘ) বিদেশি নাগরিক হওয়া সন্তানের জন্মদাতা।
(এম সি কিউ ধরনের নমুনা প্রশ্নপত্রের উত্তর থাকবে আগামী সংখ্যায়। গত ষষ্ঠ পর্বের উত্তর নীচে দেওয়া হল। এই প্রস্তুতিপর্ব তোমাদের কেমন লাগছে, আরও কী কী বিষয়ে জানতে চাও – আমাদের ইমেল করে জানাও। Email: [email protected])

গত সপ্তাহের উত্তর
১ খ) দ্বিতীয় অংশ; ২ ক) ধারা ৫; ৩ খ) অভিবাসনের পর থেকে অবিরত ভারতে বাস করে থাকে; ৪ খ) ধারা ৬; ৫ ঘ) কর্মসংস্থান; ৬ খ) অন্য দেশের নাগরিকত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণের কারণে নাগরিকত্ব হারানো; ৭ খ) ভারতীয় পার্লামেন্ট; ৮ গ) অনুচ্ছেদ ৮; ৯ খ) অনুচ্ছেদ ১১ এবং ১০ খ) এটি সম্পর্কিত যাদের প্রতিবেশী দেশ।