ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে
রুবীনা আজাদ
এক যে ছিল ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে
কাঁদতো শুধু লঙ্কা ভাজা খেয়ে।
ফ্রাই করে সে খেতো হাঁসের ছানা
সঙ্গে আরো সেদ্ধ মটর দানা।
সেই মেয়েটা কাঁদতো সারাদিন
চোখের কোণে লাগিয়ে ভ্সেলিন।
পাড়ার যতো কুকুর-বিড়াল নিয়ে
করতো ডিনার রেস্টুরেন্টে গিয়ে।
চিকেন-কাবাব, কাচ্চি বিরিয়ানি
ছানার পোলাউ, মিষ্টি, কোমল পানি,
মেনু দেখে নানান রকম খাবার
এক নিমেষে করতো তারা সাবাড়।
এই ভেবেছি মনে
সজল চক্রবর্তী
রাম গিয়েছেন বনে
লক্ষ্মণ তাঁর সনে।
বাবা চোখের জল ফেলেন
নিশ্চুপে ঘর কোণে।
কৈকেয়ী আর মন্থরাতে
স্বপ্ন দেখেন দিন ও রাতে,
ভরত বুঝি বসে গেলেন
এবার সিংহাসনে!
কিন্তু ভরত ধানাই-পানাই:
‘আমার মোটেও ইচ্ছেটা নাই!
কেন যে মা জড়াস আমায়
এই ঝামেলার কাজে?
আমি তো খুব সিধা-সাদাই!
দাদার কাজ করবে দাদাই।
সিংহাসনে বসবো না মা—
আছে দাদার খড়ম জোড়া যে!
রাজ্য ছেড়ে কই পালাবো?
খড়ম দিয়েই কাজ চালাবো,
সাজিয়ে সিংহাসনে।
আমি তো মা এই ভেবেছি মনে।’
মেঘের খেয়া
অপু চৌধুরী
মিষ্টি মেয়ে মেঘের খেয়া কীসের খোঁজে তুমি
ইচ্ছেমত যাচ্ছো ছুটে আসমানী নীল চুমি?
কার ইশারায় কোন সে মোহে মেলে তোমার ডানা
চলার পথে বর্ষা ডাকো ভূ-পৃষ্ঠে একটানা?
তুমি নাকি আঁকতে পারো নানান রঙের মেলা
সকালবেলা পশ্চিমে আর পূর্বে বিকেলবেলা
সাত সাতটি রঙ মিশিয়ে অর্ধ সানকি গোল
রঙ জড়ানো রংধনু আর বর্ষা মায়ের কোল?
গাঁয়ের বধূ দেখে তোমার— এসব ছোটাছুটি
উঠোন ঘাটায় কাদায় কাদায় খেলে লুটোপুটি
হুঁশ হারিয়ে যায় ছুটে যায় আনতে গরুর পাল
তুমি তখন হয়ে ওঠো বেজায় বেসামাল।
কখনও হও পেঁজা তুলো কিংবা ইলশেগুঁড়ি
সকাল-বিকাল-সাঁঝ বোঝো না খেলো লুকোচুরি
তোমার সাথে তাল মিলিয়ে কর্ণফুলীর কূলে
কদম-কেয়া সুবাস ছড়ায় পাপড়ি দুলে দুলে।
নটন ধীবর বৈঠা টানে কুরুত কুরুত সুরে
সুখ দেখে তার তুমি ও মেঘ কর্ণফুলী জুড়ে—
ঝরতে থাকো অঝোর ধারায় বান ডাকো তার তীরে
সুখের ভেতর দুঃখ ছড়াও ঝিরঝিরে ঝিরঝিরে।
আঁকা
তীর্থঙ্কর সুমিত
কাছিম মানে কচ্ছপ
শিখছিলো খোকা
মুখখানি ছোটো করে
হয়েছিল বোকা
তারপরে রেখা টেনে
আঁকছিলো ব্যাঙ
অবশেষে সেটা হলো
শেয়ালের ঠ্যাং।
ভাদ্র মাস
দেবাশিস দণ্ড
মেঘের জটা
জটায় ফাঁস
আটকে আছে
ভাদ্র মাস।
তালের আঁটি
মুক্তো-শাঁস
শাঁসের ভিতর
ভাদ্র মাস।
নতুন কলি
নতুন কাশ
কাশের পাখায়
ভাদ্র মাস।
কৃষ্ণ দীঘি
চাঁদের হাঁস
উড়ছে উড়ুক
ভাদ্র মাস।
খুকুর চোখে হাজার ভাবনা
চৈতালী দাস মজুমদার
ময়না পাখি ডাগর আঁখি
কেমন চেয়ে রয়,
গাছের ডালে নাচে তালে
কিসের বল না ভয়।
মেঘের কোলে বৃষ্টি দোলে
টাপুর টুপুর রব,
ছুটছে দেখি ছেলে-মেয়ে
এদিক ওদিক সব।
কচুপাতা মাথায় ছাতা
ঘুরব সবাই আজ,
যেথায় যাব পথ হারাবো
করবো সেথায় রাজ।
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে
গাছের পাতায় জল,
বৃষ্টি এলে কেমন মজা
বন্ধু তোরা বল।
হঠাৎ করে ওই শোনা যায়
শিয়াল ভায়ার ডাক,
আকাশ বুকে উড়ছে দেখো
ডাকছে কেন কাক?
অশনি এক সংকেত দেয়
বুকের মাঝে ভয়,
শিয়াল ভায়া হুক্কা হুয়া
বিশ্ব করবে জয়।
পথের ধারে রাত দুপুরে
গাইছে ওরা গান,
পুলিশ এসে বকে দিলো
ধরতে হলো কান।
মুখটি বুঁজে আর কতদিন
সহ্য করব আর,
সহ্যের ফল অনেক মিঠা
তুমিই গলার হার।
গাছের গল্প
মৃণালকান্তি ভট্টাচার্য
বড় বড় গাছের নিচে
ছোট গাছের জুড়ি,
সকাল সাঁঝে গল্প কত
হাসির ফুলঝুরি।
বড় পাতার ফাঁক গলে
যেই সূর্যি মারে উঁকি,
ছোট পাতায় পুষ্টি জোগায়
রোদের আঁকিবুঁকি।
টিপটিপ যেই বৃষ্টি নামে
আপন ধরাতলে,
লতা, গুল্ম, বৃক্ষরাশি
ভরে ফুলে ফলে।
নানান ঋতুর হরেক রঙে
নব নব সাজ,
হওয়ার টানে দোলায় মাথা
ভুলে সকল কাজ।
ঝড় বাদলের ধাক্কা সবই
বড় গাছই সয়,
আগলে রাখে মায়ের মত
ছোট গাছের ভয়।