মালদহের তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় দলেরই টাউন সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও তাঁর সহযোগী স্বপন শর্মাকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এই দুই ধৃত মিলেই দুলালকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনকেই এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। নরেন্দ্রনাথ টাউন সভাপতির পাশাপাশি দলের হিন্দি সেলের জেলা সভাপতি পদেও রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ইংরেজবাজারের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার সুপারি দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানান, ধৃত ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মঙ্গলবার নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। রাতভর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার সকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। স্বপন এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। বোমাবাজি, খুন, দাঙ্গাহাঙ্গামায় তাঁর নাম জড়িয়ে আছে। সুপ্রতিমের কথায়, ‘ স্বপন এবং নরেন্দ্রনাথ দুলাল খুনে মূল চক্রী ছিলেন। এই খুনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। মোট চার দুষ্কৃতী ওই টাকা পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দু’জন এখনও পলাতক।’
বুধবার নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনকে আদালতে পেশ করানো হলে তিন দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। আদালতে পুলিশ দাবি করেছে, ফোনের কল রেকর্ডিং, টাকার লেনদেন ইত্যাদি দেখে ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে সরকারি আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল আদালতে এই খুনকে ‘রাজনৈতিক খুন’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
উল্লেখ্য, ২ জানুয়ারি ইংরেজবাজারের ঝলঝলিয়ার কাছে খুন হন তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল। তিন দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দুলালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঘটনার পর থেকেই দুলালের স্ত্রী চৈতালি সরকার অভিযোগ করছেন, তাঁর স্বামীকে খুনের পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। খুনের দিন রাতেই দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে এই ঘটনায় আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার এই ঘটনায় নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনকে গ্রেপ্তার করলেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ফরেন্সিক দল। তারা সেখান থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে। এরপর মঙ্গলবার এই ঘটনায় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও তাঁর দুই ভাই ধীরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও অখিলেশ তিওয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নরেন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত স্বপনকেও। জিজ্ঞাসাবাদের পর নরেন্দ্রনাথ ও স্বপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার পুলিশের ভ্যানে তোলার সময় তিনি বলেন, ‘বড় মাথা রয়েছে। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। বড় মাথার বিপদ।’
মামলায় দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রতিম সরকার। তিনি জানান, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও চলছে তল্লাশি। ৫০ লক্ষ টাকার সুপারি দেওয়া হলেও পুরো টাকাটা দুষ্কৃতীদের দেওয়া হয়েছে কি না সেই বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে দুলালের পুরনো শত্রুতা ছিল। ২০২২ সালে পুরভোটের সময় দুলালের অনুগামীরা নরেন্দ্রনাথের এক ভাইকে মারধর করেছিল। সেই থেকেই দুলালকে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ। মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশের ঘোষণার আগেই দুলাল–খুনে নরেন্দ্রনাথের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। তাঁর দাবি, আগেই দুলালকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ। এই খুনে তিনিই মূল অভিযুক্ত। তবে এই খুনকে রাজনৈতিক বলতে রাজি হননি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ।