• facebook
  • twitter
Friday, 10 January, 2025

বাংলা গদ্যের ইতিবৃত্ত

পত্রিকা পরিচালনায় কিছুকাল রামমোহনের সহযোগিতা লাভ করেছিলেন। কিন্তু ভবানীচরণ ছিলেন প্রাচীনপন্থী, কাজেই আধুনিক ভাবাপন্ন রামমোহনের সঙ্গে সম্পর্ক অচিরে ছিন্ন হয়েছিল।

ফাইল চিত্র

হীরেন্দ্রনাথ দত্ত

পূর্ব প্রকাশিতর পর

রামমোহনের যখন আগমন তখন বাংলাগদ্যের কাঠামোটুকু মাত্র তৈরি হয়েছে, বয়স্ক মনের উপযোগী বিশেষ কিছুই তখনো রচিত হয় নি। সেই নড়বড়ে ভিতটুকুর উপর নির্ভর করেই রামমোহন দেশবাসীকে বেদ উপনিষদের কথা শোনাতেএলেন। বাংলা গদ্য এ যাবৎ শুধু ভাষাচর্চায় আবদ্ধ ছিল, এখন জ্ঞানচর্চায় লিপ্ত হল, পরে রামমোহন যখন তর্কযুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন তখন বাংলা গদ্য শক্তি চর্চায় অনেক পা অগ্রসর হল।

রামমোহন যুগের অপর এক গদ্য রচয়িতা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ নামে পত্রিকা সম্পাদনা করে তিনি প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। পত্রিকা পরিচালনায় কিছুকাল রামমোহনের সহযোগিতা লাভ করেছিলেন। কিন্তু ভবানীচরণ ছিলেন প্রাচীনপন্থী, কাজেই আধুনিক ভাবাপন্ন রামমোহনের সঙ্গে সম্পর্ক অচিরে ছিন্ন হয়েছিল। কুশলী লেখক ছিলেন, অনেকে মনে করেন রচনা কুশলতায় তিনি রামমোহনকে কিঞ্চিৎ ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনা ছাড়া কয়েকখানা পুস্তকপুস্তিকাও রচনা করেছিলেন। ভবানীচরণ রচিত ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবু বিলাস’ প্রভৃতি পুস্তকে তৎকালীন কলকাতার নাগরিক সমাজের ব্যাঙ্গাত্মক চিত্র বা নক্শা পাঠক সমাজে যথেষ্ট সমাদর লাভ করেছিল।

রামমোহন যা কর্ছেন তা শুধু দুঃসাহসিক নয়, বৈপ্লবিক বলতে হবে। বৈপ্লবিক এই কারণে যে, যে জিনিস ছিল অতি অল্পসংখ্যক সংস্কৃতজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ, রামমোহন তাকে সর্বসাধারণের নাগালের মধ্যে এনে দিলেন। স্বল্প সংখ্যকের মধ্যে যা আবদ্ধ তা স্বল্পায়ু হতে বাধ্য; তার প্রভাব প্রতিপত্তিও সীমাবদ্ধ। দেশীয় পণ্ডিত সমাজ চাননি যে শাস্ত্র গ্রন্থাদি সর্বসাধারণের গোচরে আসে। তাঁরা মনে করতেন শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠে অব্রাহ্মণের অধিকার নেই। ইয়োরোপেও এক সময় মুষ্টিমেয় লাটিন ভাষাভিজ্ঞ পণ্ডিতরাই বাইবল্ পাঠের সুযোগ পেতেন।

(ক্রমশ)