• facebook
  • twitter
Wednesday, 8 January, 2025

মৎস্যজীবীদের মারধর করা হয়েছে বাংলাদেশে : মমতা

‘সমুদ্রসাথী’সহ একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা

নিজস্ব চিত্র

বাংলাদেশে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের মারধর করা হয়েছে বলে সোমবার গঙ্গাসাগরে গিয়ে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই মাস বাংলাদেশে বন্দি থাকার পর দেশে ফিরেছেন ৯৫ জন মৎস্যজীবী। সোমবার গঙ্গাসাগরে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রত্যেক মৎস্যজীবীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি মৃত ১ মৎস্যজীবীর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২ লক্ষ টাকার চেক। এছাড়াও মৎস্যজীবীদের জন্য একাধিক নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মমতা বলেন, ‘কয়েকজন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। জানতে পারলাম, তাঁদের মারধর করা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে গিয়ে হাতগুলি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। মোটা লাঠি দিয়ে তাঁদের মারা হয়েছে।’ তিনি জানান, মৎস্যজীবীদের কয়েকজনের কোমর থেকে পা পর্যন্ত চোট রয়েছে। তাঁরা জামাকাপড় পরে আছেন বলে চোট দেখা যাচ্ছে না। মমতা বিধায়ক মন্টু পাখিরাকে জখম মৎস্যজীবীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।

ভারতের জলসীমা পার করার বিষয়ে মৎস্যজীবীদের এদিন সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আপনারা কখনই সীমানার বাইরে যাবেন না। তাতে মাছ উঠলে উঠবে, না উঠলে না–উঠবে। আগে জীবন বাঁচবে। জীবন থাকলে অনেক মাছ পাবেন। এই যে দু’মাস জেলে ছিলেন, তাতে আপনার পরিবারের কষ্ট হয়নি? আপনাদের কষ্ট হয়নি? যাঁরা মার খেয়েছেন, তাঁদের কষ্ট হয়নি?’ যদিও সীমানা নিয়ে সতর্ক করেও মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নেন যে জলে অনেক সময় সীমানা স্থির করতে সমস্যা হয়। ঝড়ের কারণে অনেক সময় পথ হারিয়ে যায়। এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী চান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মৈত্রীর বন্ধন অটুট থাকুক। সেই কারণে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে চলে আসা একটি ট্রলারের মৎস্যজীবীদের ভালো করে যত্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা। তিনি জানান, ওই বাংলাদেশি ট্রলারের অনেক মৎস্যজীবী অসুস্থ ছিলেন। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি তাঁদের সব দিক থেকেই সাহায্য করে ভালোভাবে রাখা হয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি চান না দেশের বা বাংলার কোনও বদনাম হোক। উল্লেখ্য, ৯৫ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশ থেকে ফেরার পাশাপাশি এ দেশে বন্দি থাকা ৯০ জন মৎস্যজীবীকে পড়শি দেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধেই আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করার অভিযোগ উঠেছিল।

সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ ভারতীয় মৎস্যজীবীদের ট্রলারে চাপিয়ে গঙ্গাসাগরে নিয়ে আসা হয়। উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। গঙ্গাসাগরে এনে মৎস্যজীবীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করানো হয়। এরপর তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার গঙ্গাসাগর থেকে মৎস্যজীবীদের জন্য একাধিক নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়–জলের মরসুমে ২ মাস মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যেতে পারেন না। এই সময়ে জেলার মৎস্যজীবীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সমুদ্রসাথী’। এই প্রকল্পের আওতায় দুই মাস ৫ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা পাবেন প্রত্যেক মৎস্যজীবী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রায় দুই লক্ষ মৎস্যজীবী এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এছাড়াও ‘মৎস্যজীবী বন্ধু’ প্রকল্পের কথাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন। এই প্রকল্পের আওতায় মৃত্যুর পর মৎস্যজীবীদের পরিবার দুই লক্ষ টাকা আর্থিক সুবিধা পাবেন। ইতিমধ্যেই ২০০ জন এই পরিষেবা পেয়েছেন। ষাটোর্ধ্ব মৎস্যজীবীরা মাসে ১ হাজার টাকা করে পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও মৎস্যজীবীরা ঋণও পাবেন। ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি  পুকুর কাটা হয়েছে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী।