• facebook
  • twitter
Monday, 13 January, 2025

আইটিসি সংগীত সম্মেলন ২০২৪

অন্তিম সন্ধ্যার অনুষ্ঠান ছিল সান্ধ্যকালীন। শুরু হয় একাডেমির একসময়ের স্কলার অনঘা ভাটের কণ্ঠসঙ্গীতে। গাইলেন রাগ শ্রী আশ্রয়ে খেয়াল ও পরে একটি আভং।

নিজস্ব চিত্র

নভেম্বরের উনত্রিশ ও ত্রিশ এবং ডিসেম্বরের পয়লা তারিখ— এই তিনদিন ধরে হয়ে গেল আইটিসি সংগীত সম্মেলন, আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির টালিগঞ্জ লন প্রাঙ্গণে। শীত পড়তেই এই অধিবেশনে প্রতি বছরের মতন নামজাদা শিল্পী, প্রবীণ-নবীন গাইয়ে-বাজিয়েদের ভিড়, অ্যাকাডেমির স্কলারদের উপস্থিতি এবং শ্রোতা দর্শকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশিষ্ট অতিথি এবং গুরুদের উপস্থিতিতে করা হলো মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। এ বছরের আইটিসি সম্মান লাভ করলেন অ্যাকাডেমির গুরু ও বিশিষ্ট কন্ঠসংগীত শিল্পী পন্ডিত উল্লাস কোশলকার।

প্রথম সন্ধ্যার প্রথম শিল্পী ছিলেন একাডেমির স্কলার শ্রেয়া চ্যাটার্জি। পরিবেশন করলেন রাগ শুদ্ধ কল্যাণ (বিলম্বিত একতাল ও দ্রুত ত্রিতাল), পরে ঠুংরি “কৌন যতন সে প্রীত”। মেওয়াতি ঘরাণার বিশিষ্ট বেহালা বাজিয়ে বিদুষী কলা রামনাথের বাজনাপর্ব ছিল এই সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ। রাগ গোরখ কল্যাণ আধারে গত পরিবেশন করেন । প্রথমে আওচার, তারপর বিলম্বিত (একতাল) ও দ্রুত (ত্রিতাল) এবং পরে আরেকটি দ্রুত ত্রিতাল, শেষে ছিল ঝালার সুচারু উপস্থাপনা। সওয়াল-জবাবের উপস্থিতি ভাল লাগায়। মুগ্ধতা মাখানো এই পরিবেশন পর্বে তবলায় সহযোগ প্রদান করেন আরেক বিশিষ্ট শিল্পী পন্ডিত অভিজিৎ ব্যানার্জি। এই সন্ধ্যার সমাপন ঘটে একাডেমির গুরু পন্ডিত উল্লাস কোশলকারের কন্ঠসঙ্গীত পরিবেশনায়। শুরু করেন রাগ মালগুঞ্জি দিয়ে (যা তিনটি রাগের সংমিশ্রনে তৈরি)। বিলম্বিত (তিলওয়াড়া), মধ্যলয় (ত্রিতাল); পরে শোনালেন রাত নট-বেহাগ ও পরেজ কালিনাড়াতে পরিবেশনা। উপভোগ্য এই পর্বে সহযোগী ছিলেন- পন্ডিত যোগেশ সামসি (তবলা) ও গৌরব চ্যাটার্জি (হারমোনিয়াম)।

দ্বিতীয় সন্ধ্যা শুরু হয় সাবিনা মুমতাজ ইসলাম ও সংযুক্ত চ্যাটার্জি বিশ্বাসের দ্বৈত কন্ঠ পরিবেশনে। আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমীর একসময়ে স্কলার থাকা এই দুজনে পরিবেশন করলেন রাগ পূর্বী আধারে বিলম্বিত (একতাল) “নয়না মোরি পার করো”, মধ্যলয় (ত্রিতাল) “আজমের ওয়ালে খোয়াজা” এবং শেষে “তু করিম তু রহিম” (একতাল)। এরপরে ছিল ঠুংরি (পঞ্চম সে গারা) “কোই যাও সাইয়া কো লে আও” এবং শেষে একটি দাদরা “তড়পে বিন বালম মোরা জিয়া”। অনন্য সহযোগে ছিলেন- অশোক মুখার্জি (তবলা) ও রূপশ্রী ভট্টাচার্য (হারমোনিয়াম)। এরপর ছিল একাডেমির গুরু অয়ন সেনগুপ্তের সেতারে রাগ ঝিঁঝিট উপস্থাপনা; আলাপ- জোড় – ঝালা, পরে গতকারি।

একাডেমির গুরু পদ্মভূষণ পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী কণ্ঠনিবেদন পর্ব ছিল এই সন্ধ্যার অন্যতম আকর্ষণ । রাগ চন্দ্র-কৌশিকী (গুরু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সৃষ্ট এই রাগ) চয়ন করেন। এরপর রাগ বাগেশ্বরী এবং পরে গাইলেন একটি ঠুংরি। সহযোগী ছিলেন পন্ডিত যোগেশ সামসি (তবলা) ও জ্যোতির্ময় ব্যানার্জি (হারমোনিয়াম)। এরপর ছিল বিদুষী (পদ্মশ্রী) শুভা মুদগলের কন্ঠসংগীত পরিবেশনা। গাইলেন রাগ ছায়ানট এবং পরে নায়েকি-কানাড়া। শোনা গেল তিলং রাগে ঠুংরি এবং শেষে দাদরা। তাঁর সহযোগে ছিলেন – অনীশ প্রধান (তবলা) ও সুধীর নায়েক (হারমোনিয়াম)। হিন্দুস্তানি ও কর্নাটকী রাগ সংগীতের দুই রিদমশিল্পী ওজাস আডিয়া (তবলা) ও গিরিধার উডুপার (ঘটম)
যুগলবন্দী ছিল এরপরের অনুষ্ঠান। নির্বাচন করেছিলেন ত্রিতাল (আদিতাল)। তারপর ছিল রাকেশ চৌরাশিয়ার বংশীবাদন। সঙ্গে ছিলেন সত্যজিৎ তলোয়ালকর (তবলা)। দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপন ঘটে পন্ডিত উদয় ভাওয়ালের ধ্রুপদ সংগীতে । প্রভাতী আবহে প্রথমে চয়ন করেছিলেন রাগ ভৈরব। আলাপ, তারপর ঝাঁপতালে দাদরা “শিব আদি মদ অন্ত”, ও পরে গাইলেন সুলতালে “নারায়ণ হরি তুম”। সমাপন করেন ভৈরবীতে “জগত জননী জ্বালামুখী মাতা সরস্বতী” (তেওড়া তাল) পরিবেশনে। পাখোয়াজে ছিলেন- প্রতাপ আবধ।

অন্তিম সন্ধ্যার অনুষ্ঠান ছিল সান্ধ্যকালীন। শুরু হয় একাডেমির একসময়ের স্কলার অনঘা ভাটের কণ্ঠসঙ্গীতে। গাইলেন রাগ শ্রী আশ্রয়ে খেয়াল ও পরে একটি আভং। সহযোগী ছিলেন বিভাস সাংহাই (তবলা) ও গৌরব চ্যাটার্জি (হারমোনিয়াম)। এরপর ছিল স্কলার কৌস্তুভ রায়ের সরোদে রাগ মারবা উপস্থাপনা । তবলায় ছিলেন জয়ন্ত সরকার। তারপর ছিল একাডেমীর অপর গুরু ব্রজেশ্বর মুখার্জির কন্ঠ নিবেদন পর্ব। চয়ন করেছিলেন রাগ গাওতি ও পরে সোহিনী আধারে ঠুংরি। এই অধিবেশনের অন্তিমলগ্নের আকর্ষণ ছিল বিশিষ্ট শিল্পী পন্ডিত বুধাদিত্য মুখার্জির সেতারবাদন। শোনালেন রাগ পুরিয়া ধানেশ্রী ও পরে মিশ্র পিলু। অত্যন্ত উপভোগ্য এই পর্বের তবলা সহযোগিতায় ছিলেন সৌমেন নন্দী।