সিএএ নিয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে বিরােধীরা। এই আন্দোলনের মাঝে লখনউতে তৃণমূলের চার প্রতিনিধি পাঠানাের সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রবিবার দুপুরে দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, নাদিমুল হক ও আবিররঞ্জন বিশ্বাস লখনউ বিমানবন্দরে পৌঁছন। সেখানে পৌঁছন মাত্রই তাঁদের ৫০ জন ঘিরে ধরে বলে অভিযােগ। বিমানবন্দর থেকে বেরােতে দেওয়া হয়নি কাউকেই।এঘটনার পরই দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে রানওয়েতে ধরনায় বসেন তারা।
এনআরসি বিরােধী আন্দোলন চলার সময় উত্তপ্ত হয়েছিল অসম। সে সময় সেখানেও তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যাওয়ার চেষ্টা করে এবং বাধা পায়। গুয়াহাটি বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছিল মহুয়া মিত্র সহ অন্যান্য প্রতিনিধিদের। সেই ঘটনার ফের পুনরাবৃত্তি ঘটল উত্তরপ্রদেশে। এদিন দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল লখনউ বিমানবন্দরে যাওয়ার পর পুলিশকর্মীরা ঘিরে ধরে আটক করে বলে জানান দীনেশ ত্রিবেদী। তিনি বলেন, জোর করে তাদের বাসে তুলে নেওয়া হয়। এরপর রানওয়েতে ধরনায় বসেছি। ইন্টারনেট পরিষেবা একেবারেই ভাল নয়, তাই কারও সঙ্গে যােগাযােগ করা সম্ভব হয়নি বলেন তিনি।
গত শুক্রবার থেকে উত্তরপ্রদেশে আন্দোলন চলছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানাে হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ৮ বছরের একটি শিশুসহ এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন অনেকেই।
এদিনের এ ঘটনার পর সংবাদ মাধ্যমকে দীনেশ ত্রিবেদী বলেন, অশান্তি পাকাতে আমরা যাইনি। মানবাধিকার লঙঘন হচ্ছে কি না, দেখতে এসেছিলাম। শান্তিপূর্ণ ভাবেই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিমানবন্দরে আমাদের আটকানাে হল। এ বিষয় নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এর আগে অসমেও আটকানাে হয়েছে। এখন উত্তরপ্রদেশে আটকাচ্ছে। আসলে এরা সত্যিটা জানতে দিয়ে চায় না।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে উত্তরপ্রদেশের ডিজিপি ওপি সিংহ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তৃণমূলের ওই প্রতিনিধি দলকে রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু নেতা এখানে আসতে চাইছেন বলে জানতে পেরেছি। এই মুহূর্তে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে এখানে। ওই নেতাদের আগমনে উত্তেজনা বাড়তে পারে। তাই ওঁদের অনুমতি দেওয়া হবে না।
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে তামাম দেশজুড়ে চলা হিংসার জন্য বহিরাগতদের দিকে আঙুল তুলে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের তরফে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে– মুসলিম সংগঠন পিএফআই ও সিমি সঙ্গে জড়িত ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে গেছিল। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে লখনউ বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। তারা সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়রা বিজনােরে সংঘর্ষে নিহত দু’জনের ঘনিষ্ট আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করেন। উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় কুমার লল্লা বলেন, নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি নাথুরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
উত্তরপ্রদেশে সংঘর্ষের ঘটনায় পনেরাে জনের মৃত্য হয়েছে, শতাধিক জখম। পরিস্থিতি মােটের ওপর শান্ত হলেও মীরাট, ফিরােজাবাদ, কানপুর, বিজনােরে ইন্টারনেট পরিষেবা সাসপেন্ড রাখা হয়েছে। রাজ্যের সর্বত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷
উপ-মুখ্যমন্ত্রী দীনেশ শর্মা রাজ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে বহিরাগতদের ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এলাকা থেকে ৫০০টি ফাঁকা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট প্রতিবাদকারীরা বেআইনি অস্ত্র ব্যবহার করছেন। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযােগে ৭০৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সপা দল পরিস্থিতিকে আরও চিন্তাজনক করে তুলছে। বিরােধীরা ভুল বুঝিয়ে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করছে। তিনি বলেন, মালদা থেকে আসা ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে পিএফআইয়ের সঙ্গে জড়িত। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সিমির সঙ্গেও তাদের যােগাযােগ রয়েছে।
সিসিএস বিমানবন্দরে আটক তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সদস্য নদিমূল হক বলেন, লখনউ নামার পর বিমানবন্দরে আমাদেরকে পুলিশ ঘিরে ধরে। তারপর আমাদেরকে নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আমরা ওখানে হ্যাঙ্গারে অবস্থান বিক্ষোভ করছি। তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলে প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী, সাংসদ আবির বিশ্বাস ছিলেন।