ফু সফুসের ক্যান্সার, দীর্ঘকাল ধরে ধূমপায়ীদের উপর প্রভাব ফেলার জন্যই পরিচিত। কিন্তু বর্তমান সমীক্ষা এর ঠিক উলটো কথা বলছে। যারা ধূমপান করে না তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে লাংস ক্যানসার। চিকিৎসকরা রীতিমতো এই পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ু দূষণের এক্সপোজার এর প্রধান কারণ।
ল্যানসেটের ই-ক্লিনিকাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভারতে ফুসফুসের ক্যান্সারের বেশিরভাগ রোগী ধূমপায়ী নন। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় ভারতে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা প্রায় ১০ বছর আগে প্রকাশ পাচ্ছে।
ডা. প্রসাদ আদুসুমিলি, থোরাসিক সার্জন এবং সেলুলার থেরাপিস্ট, মেমোরিয়াল স্লোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টার (এমএসকে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বলেছেন, ‘ভারতের বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার তরুণদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সাধারণভাবে, ফুসফুসের ক্যান্সার ধূমপানের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত। কিন্তু আমরা বিশেষত শহুরে মানুষদের মধ্যে একটি পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করছি। দেখা যাচ্ছে অ-ধূমপায়ীরা, বিশেষত মহিলারা, তাদের পশ্চিমি দেশগুলির তুলনায় প্রায় ১০ বছর আগেই ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায়শই ধূমপানের কোনও ইতিহাস থাকে না। এটি পরিবেশ দূষণ, জিনগত প্রবণতা এবং জীবনযাত্রার কারণগুলির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।’
ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর প্রধান কারণ। অ-ধূমপায়ীদের মধ্যে, বিশেষত মহিলা এবং এশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান হয়ে ওঠার ঘটনাগুলি চিন্তা বাড়াচ্ছে। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৭৫,০০০ নতুন কেস রিপোর্ট করা হয়। উদ্বেগজনকভাবে, দেশে বিপুল সংখ্যক ফুসফুসের ক্যান্সার রোগী চিহ্ণিত হচ্ছেন।
হায়দ্রাবাদের একটি হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. জগদীশ্বর গৌড় গজগৌনি বলেছেন, ‘অ-ধূমপায়ীদের ফুসফুসের ক্যান্সার (এলসিআইএনএস) মূলত অ্যাডেনোকার্সিনোমা হিসাবে উপস্থিত হয়, যা পেরিফেরাল ফুসফুসের টিস্যুকে প্রভাবিত করে।
মূল ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বায়ু দূষণ, রেডনের সংস্পর্শে আসা, ঘরের রান্নার ধোঁয়া এবং শহরাঞ্চলে সূক্ষ্ম কণা পদার্থ (পিএম ২.৫)। বাড়িতে রেডনের মতো দূষিত পদার্থ, ঝুঁকির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। বায়ু চলাচলের জায়গার অভাব রয়েছে, এমন বদ্ধ পরিসরে রান্না করার কারণে ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ুর গুণমান নষ্ট হয়। বিশেষত উন্নয়নশীল অঞ্চলে তা বিপদ ডেকে আনছে। এছাড়া প্যাসিভ স্মোকিংও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের হার যেখানে বেশি, এমন অঞ্চলে।’
বর্তমানে অবশ্য ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। মাইল্ড অস্ত্রোপচার পদ্ধতি এবং বিকিরণ থেরাপি রোগীদের জন্য ভালো ফল দিচ্ছে। সেরে উঠতে সময় কম লাগছে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম হচ্ছে।