ছোটপাখি
তপন কুমার বৈরাগ্য
ছোটপাখি ছোটশিশু
হয় প্রিয় যাহাদের,
পৃথিবীতে মন ভালো
জেনে রেখো তাহাদের।
ছোটপাখি ছোটশিশু
খুঁজে চলে মা-কে তারা,
যদি নাহি কাছে পায়
দুই চোখে ঝরে ধারা।
ছোটপাখি ছোটশিশু
চারিদিকে শুধু চায়,
মাতা বলে খেতে দেবো
আয় তোরা কাছে আয়।
স্বাধীনভাবে
উদয়শঙ্কর বাগ
একটা টিয়া পাখি এসে বলল আমার কাছে
আমায় কেন ধরবে বলে ফাঁদ পেতেছ গাছে?
আমরা তো বেশ উড়ে বেড়াই সারা আকাশজুড়ে
বাঁধবে কেন ডানা দুটো? রাখবে খাঁচায় পুরে?
ইংরেজের ওই অত্যাচারে টের পেয়েছ কত,
পরাধীনতার জ্বালা কেমন বুঝলে অবিরত!
বন্দিদশা বুঝেও কেন রাখবে আমায় বেঁধে?
আমার আকাশ নিও না কেড়ে, মরব সদাই কেঁদে!
উড়ে উড়ে আকাশ ঘুরে থাকি গাছে গাছে
মিষ্টি সুরে ভোর এনে দিই আমরা তোমার কাছে।
খাঁচায় পুরে রাখবে পুষে, আনন্দ কী পাও!
ওই আনন্দে আমরা মরি, দুঃখ কেন দাও?
ভোর-আকাশে সুর ছড়িয়ে আনন্দে গান গাই
বিশ্বজুড়ে স্বাধীনভাবে সবাই বাঁচতে চাই।
একটি নদী
(মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার দাদমাটি
গ্রামের ভৈরব নদীকে মনে রেখে)
আমির উল হক
একটি নদী
সীমার ধারে
আচম্বিতেই হারিয়ে গেল,
সেই নদীতে সকাল দুপুর
মিশিয়ে থাকা কিশোর বেলা,
হারিয়ে যাওয়া পাড়ের পোশাক
পাড়েই বুঝি রইলো পড়ে।
আদুল গায়ে ফিরতে বাড়ি
মায়ের কাছে কানটি মলা,
পাড়ের পোশাক সঙ্গী করে
সেই নদীতেই হারিয়ে যাওয়া।
নদীর পাড়ের ধান জমিতে
আর ফলে না সোনার ফসল,
ধানের গোলা আর ভরে না
আর ভরে না পাটের আড়ত।
গমের ক্ষেতে শিস ফোটে না
ধনচে ফলে ধান জমিতে—
লাঙল গরুর হালের ফলা
আর চষে না পাড়ের জমি।
রিভার পাম্পে জল ওঠে না
চাষের জমি শুকিয়ে মরু,
মেশিন ঘরে বসত করে
পাড়ার শতেক ছাগল গরু।
হারিয়ে যাওয়া কিশোর নদী
কিশোর বেলার বেহাগ সুরে,
সীমার ধারের সবাই ডাকে
আয় ফিরে আয় ছোট্ট নদী
বান ডেকে যাক আমার বুকে।
ভাদ্র এলেই
উৎপলকুমার ধারা
ভাদ্র এলেই আকাশ পুরো নীল
হাওয়ায় দোলে শিউলিকুঁড়ির ডাল
সাজতে থাকে পদ্মকুঁড়ির ঝিল
সবাই বলে এটাই শরৎকাল।
ভাদ্র এলেই আকাশ ভরা তুলো
তুলো তো নয়, তুলোর মত মেঘ
যায় পালিয়ে বর্ষার মেঘগুলো
যায় কমে যায় ঝড়-বাতাসের বেগ।
ভাদ্র এলেই ঢাকির ছেলের ঢাকে
আওয়াজ উঠে ঢ্যাঙ কুড়াকুড় তাল
পোটোর ছেলে গড়তে থাকে মা-কে
সবাই বলে এটাই শরৎকাল।
ভাদ্র এলেই খুশির ঝিলিক ঠোঁটে
রূপ-সোনালি রোদ ফোটে ঝলমলে
পুজোর বাজার করতে সবাই ছোটে
কলকাতা ওই হরেক শপিংমলে।
সবার মনে আনন্দ-গান বাজে
নাচ জুড়ে দেয় শালুক ফোটার খাল
সবাই যে-যার মতন করেই সাজে
সবাই বলে এটাই শরৎকাল।।
লাফিয়ে চলে
দেবাশিস তেওয়ারী
রঙিন পানসি উড়িয়ে ছোটে
পাখপাখালির ঝাঁক,
স্তব্ধতাতে কাটছে বেলা
ডাকছে কাছে কাক।
আস্তাকুঁড়ের নোংরা নালায়
ভিড় জমিয়ে ওরা,
সকাল থেকে বিকেল শুধু
এদিক-ওদিক ঘোরা।
ছোঁ-মেরে কী নেবে কখন
ওদের জানা আছে,
লাফিয়ে চলে শালিক পাখি
এ-গাছ থেকে গাছে।
মেনির বিয়ে
রমা মহান্তী
সেজেগুজে আসছে সবাই,
মেনির আজ বিয়ে,
আসবে হুলো টোপর পরে
অ্যামবাসাডর গাড়ি করে,
মেনির গলায় পরাবে হার
খুশিতে তার ধরে না আর,
শালিক এলো, চড়ুই এলো,
আর এলো টিয়ে।
পরের মুখে ঝাল
সংগ্রাম সাহা
মাছের ঝাল খাবে খুকু
বলেছে গতকাল
সাধ করে মা রেঁধেছে তাই
পুঁটি মাছের ঝাল।
একটুখানি খেয়ে খুকু
সে কী চিৎকার
ঝালে কাঁটায় মিলেমিশে
হলো একাকার।
চোখে মুখে জল দিয়ে
শান্ত হল যেই
বুঝলো কেন পরের মুখে
ঝাল খেতে নেই।
দুইটা বিড়াল
শ্যামল বণিক অঞ্জন
দুইটা বিড়াল শান্তশিষ্ট
স্বভাবও খুব ভালো
একটা হলো ডোরাকাটা
আরেকটার রঙ কালো।
ডোরাকাটা বাঘের মাসি
অপরটা হয় মেসো
মাঝে মাঝে ঘুরতেও যায়
দু’জন বাঘের দেশও!
রাত্রি হলেই মোবাইল ফোনে
কথা বলেন মাসি
নানান রকম কথার ফাঁকে
করেন হাসাহাসি।