• facebook
  • twitter
Friday, 20 December, 2024

ফেলুদা শুধু আইকন নন বাঙালির আবেগ

‘ফেলুদা’ হিসেবে টোটা রায়চৌধুরীকে বেশ পছন্দ করেন দর্শকরা। ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ সিরিজটির গায়ে গায়ে মুক্তি পাচ্ছে টোটা অভিনীত ‘চালচিত্র’ ছবিটি। দুটি কাজের প্রচারে ব্যস্ত অভিনেতার সাক্ষাৎকার নিলেন অবন্তী সিনহা।

দার্জিলিং-এর পর ফেলুদার কেরামতি এবার দেখা যাবে কাশ্মীরে। সত্যজিৎ রায়ের ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ গল্পটি অবলম্বনেই এই নতুন সিরিজ তৈরি করছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। আবার ‘ফেলুদা’কে নিয়ে ফিরলেন নির্দেশক। ২০২০ সালে প্রথম ‘ফেলুদা ফেরত’ তৈরি করেন তিনি। দর্শকদের প্রশংসা পায় ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে মতবিরোধে মুক্তি পায়নি ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডু’তে। তবে তারপরই হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সৃজিত আনেন ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ সিরিজ। প্রথম গল্প ছিল ‘দার্জিলিং জমজমাট।’ এই সিরিজেররই অন্তর্গত ফেলুদার পরবর্তী সিজনটি, সত্যজিতের ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ গল্প অলম্বনে তৈরি হয়েছে।

‘ফেলুদা’ হিসেবে টোটা রায়চৌধুরীকে বেশ পছন্দ করেন দর্শকরা। ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’ সিরিজটির গায়ে গায়ে মুক্তি পাচ্ছে টোটা অভিনীত ‘চালচিত্র’ ছবিটিও। দুটি কাজের প্রচারের মাঝেই, সময় করে কথা বললেন অভিনেতা।

আপনার ম্যাচো ইমেজের ফ্যান কলকাতার মানুষ।

থ্যাংক ইউ ( হাসি)

এক সঙ্গে দু’ দুটো প্রোজেক্ট রিলিজের মানসিক চাপ কীভাবে সামলাচ্ছেন?

সত্যি বলতে কী, এই চাপের অভিজ্ঞতা আমার জন্যে নতুন। আমার এত লম্বা কেরিয়ারে কোনও দিনই দুটো কাজ একসঙ্গে রিলিজ হয়নি। ফলে এটাতে মানসিক চাপ যত না হচ্ছে, একজন অভিনেতা হিসেবে আনন্দ হচ্ছে বেশি। তবে পরিশ্রমের কথা যদি বলেন, এখন তো প্রমোশনস অনেকটা বেড়ে গেছে, সেদিক থেকে চাপ বা ব্যস্ততাও অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু এই চাপটা হ্যান্ডেল করতে ভালোই লাগছে। প্রমোশনের সময় অনেকের সঙ্গে দেখা হয় যেটা সচরাচর হয় না। আমার কাজের সঙ্গে যুক্ত কোনও কিছুকেই আমার বোঝা মনে হয় না কারণ আমার কাজটাকে আমি খুব উপভোগ করি।

বাঙালিদের কাছে ‘ফেলুদা’ একটা আইকন। বহুজন ওই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। টোটা নিজেকে তাদের থেকে আলাদা করেন কীভাবে?

ফেলুদা শুধু আইকন নন আমার তো মনে হয় তিনি বাঙালির আবেগ। সেই আবেগের চরিত্রে আমি মন প্রাণ সঁপে অভিনয় করি। তাছাড়া আমি সম্পূর্ণরূপে একজন ডিরেক্টরস অ্যাক্টর। পরিচালক যেভাবে যা করতে বলেন, সেটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। সুতরাং আমার করা ফেলুদা আমারই মতো। তবে আমি একটু বেছে কাজ করি এই কারণে যে, যাঁদের সঙ্গে কাজ করব তাঁদের প্রতি যেন আমার সেই বিশ্বাসটা থাকে। অর্থাৎ সেই পরিচালক যেন আমার সেরাটা আমার মধ্যে থেকে বের করে নিতে পারেন।

‘ভূস্বর্গ ভয়ংকর’ শ্যুটিং করার সময় কোনও উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলুন।

আমার মনে হয় ফেলুদা হয়ে কাজ করাটাই যথেষ্ট একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কাশ্মীরে শ্যুট করাটা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। খুব ব্যয়বহুল। ১৫ দিন কাশ্মীরের শ্রীনগর, পহেলগাম-সহ নানা লোকেশনে শ্যুটিং যয়েছে। যখন সোনমার্গে কাজ করেছি, তখন তাপমাত্রা ছিল মাইনাসে।

আপনি বাংলা ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন মাঝের বেশ কিছুটা সময়। সেটা কি অভিমানবশত, নাকি জোরালো একটা কামব্যকের জন্য?

আমি মুখ ঘুরিয়ে নিইনি (হাসি)। আমাকে কাজ দিচ্ছিলেন না বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কেউ। তবে আমি মনে করি সব দেশের সব অভিনেতার জীবনেই এই ফেজগুলো থাকে। একটা সময় আসে যখন কাজ একেবারেই কমে যায়। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে যদি অবিচল থাকা যায়, নিজের কাজের প্রতি যদি সৎ থাকি এবং আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে আবার ফিরে আসা যায়। আমি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিরই প্রোডাক্ট, এই ইন্ডাস্ট্রিই আমার কাছে ফার্স্ট প্রেফারেন্স।

সব মানুষের জীবনেই ব্যর্থতা আসে, উত্থান পতন আছে। সেই ডাউন টাইমগুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন?

প্রথম কথা হচ্ছে নিজেকে বিশ্বাস করাতে হবে যে এটা হচ্ছে একটা টেম্পোরারি ফেজ। সুতরাং খুব বিচলিত হওয়া বা ভেঙে পড়ার কারণ নেই। ডাউন টাইমে হাতে কিছুটা ফাঁকা সময় এসে পড়ে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই সময়টাকেই কীভাবে সদর্থকভাবে কাজে লাগানো যায়। নিজের শরীরের আর মনের যত্ন নিতে হবে এই পর্যায়ে, কিছু স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। খারাপ সময়টাতে ভালো ছবি দেখা, গান শোনা, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো- সবই খুব সাহায্য করেছে আমায় ব্যক্তিগত জীবনে।

মুম্বই এবং কলকাতা দু’ জায়গাতেই আপনি কাজ করেছেন। কী তফাত নজরে এসেছে?

তফাত আর কিছুতে নয়, ওদের বাজেট অনেকটা বেশি। সেই কারণে ওরা সুযোগ সুবিধাটা অনেক বেশি পায়। রিসোর্স বেশি বলে শ্যুটিংয়ের দিন অনেক বেশি থাকে। ফলে কাজটা সময় নিয়ে অনেক সুন্দর করে করতে পারে। এটা এখানে সম্ভব হয় না।

পুলিশ নাকি গোয়েন্দা, কোন চরিত্র বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে?

এটা আসলে এভাবে তুলনা করা যাবে না, কারণ আমি দুটির ক্ষেত্রেই অসম্ভব মেধাবী দুজন ডিরেক্টরকে পেয়েছি। একদিকে প্রতিম দাশগুপ্ত, অন্যদিকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কাজেই তাদের কাছে বেস্ট পারফর্মেন্সটা নিয়ে যেতে হয়। আমিও নিজের বেস্টটাই দিয়েছি। দুটি কাজ নিয়েই আমি খুবই আশাবাদী।