প্রয়াত পরিচালক রাজা মিত্র। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় পরিচালক রাজা মিত্রর প্রথম ছবি ‘একটি জীবন’। প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন পরিচালক। ‘একটি জীবন’ বাংলা ছবির ইতিহাসে মাইলফলক বলে দাবি করেন অনেকে। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল – ‘নয়নতারা’, ‘যতনের জমি’। ৩২টি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছেন তিনি।
একজন পরিচালকের প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার , শ্রেষ্ঠ শর্ট ফিকশন চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার জিতেছেন রাজা মিত্র। তিনি ১৯৮৯ সালে ভারতের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৯২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসব এবং ১৯৯০ সালে ভারতীয় প্যানোরামার জন্য নির্বাচন প্যানেল এবং অনেক সময় জুড়ির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
রাজা মিত্রের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন তিনি। রাজা বেশ কিছু সাহিত্য ও চলচ্চিত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৭৮-৮০ সময়কালে গৌতম ঘোষকে সহায়তা করেছিলেন। তাঁর পরিচালিত কিছু তথ্যচিত্র হল – ক্যালকাটা ফুটপাথ ডুয়েলার, একটি জীবন, আশ্রয়, বিদ্যাসাগর, দৃষ্টি প্রদীপ, আনন্দযাত্রা।
রাজা মিত্রর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে সোশাল মিডিয়ায় পরিচালক অতনু ঘোষ লিখেছেন, রাজাদা চলে গেলেন। রাজা মিত্র। যাঁর ‘একটি জীবন’ বাংলা ছবির ইতিহাসে মাইলফলক। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরও কত কাজ- নয়নতারা, যতনের জমি, বীরভূমের স্ক্রোল পেইন্টার্স বা কালীঘাট পেইন্টিং তথ্যচিত্র। খুব সম্ভবত দূরদর্শনে প্রথম আলাপ। এমনিতেই আমি জাত মুখচোরা, আর উনি অত নামী মানুষ। তারপর বুঝি বড় পরিচালকের কোনও ভার নেই, দিব্যি সহজে কথা বলা যায়, প্রশ্ন করা যায়। পরে যখন যেখানে দেখা হয়েছে, অনায়াসে কাঁধে হাত তুলে দিয়েছেন- ‘ওটা দেখলাম। বেশ করেছো, এখন কী ভাবছ?’ অনেকটা অক্সিজেন পেয়েছি। আমার মত আনকোরার কাজ রাজা মিত্র দেখেছেন, দেখেন? একবার গোর্কি সদনের গৌতমদা (ঘোষ) নতুন টেলিফিল্ম করিয়েদের উৎসাহ দিতে এক সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেছেন। আমার সেশন শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ দেখি রাজাদা দর্শকদের মধ্যে এসে বসলেন।আমি অবাক, হতবম্ব। ভাবলাম হয়তো কোনও কাজে এসেছেন। ‘না না, তোমার কথা শুনতেই এলাম!’ অকপট, স্পষ্টবাদী। সেদিন বুঝেছিলাম, যিনি প্রকৃত শিল্পী, তিনি কাঁচাদের পাশে দাঁড়ান, রাস্তা দেখান, এগিয়ে দেন…সশ্রদ্ধ প্রণাম, ভালোবাসা রাজাদা।