• facebook
  • twitter
Sunday, 27 April, 2025

বাঙ্গালীর সংস্কৃতি

সিপিএমের নেতারা আশায় বুক বাঁধছে যে, আসন্ন ২০২৬ বিধানসভার নির্বাচনে ফ্রন্টের প্রার্থীরা ভালো ফলই করবে। অতীতে কী ঘটেছে, তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।

সিপিএম এবার বাস্তবটা বুঝতে পেরেছে। তাই ২০২৬ সালের বিধানসভার প্রস্তুতি শুরু করে দিল তাদের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে। গত দু’টি বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে সিপিএম ভোটে নেমেছিল শরিকদের সঙ্গে তেমন আলোচনা না করে। বিশেষ করে ফরওয়ার্ড ব্লক আপত্তি জানিয়েছিল। ফল ভালো হয়নি। কংগ্রেসের ঝুলিও শূন্য। শূন্য সিপিএমের ঝুলিও। অর্থাৎ ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে মিত্রতা করে। ফলে বিধানসভায় এই দলের কোনও মুখ নেই। কংগ্রেসেরও সেই দশা। গত উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা ছয়টি আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। সিপিএম তথা বামফ্রন্ট যেমন এই নির্বাচনে ভালো কিছু করতে পারেনি, তেমনই শোচনীয় পরাজয় হয়েছে বিজেপি প্রার্থীদের। উপনির্বাচনে সাধারণত শাসক দলই বাজিমাত করে এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।

তৃণমূল কংগ্রেস দুই দফায় ১০ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিপুল জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই আগামী বিধানসভা ভোটের সলতে পাকানো শুরু করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেত্রী হিসেবে ঘাসফুলের নেতা-কর্মীদের ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। উপনির্বাচনের ফলাফলে শাসক দল উজ্জীবিত হয়ে পরবর্তী বিধানসভার নির্বাচনে নামবে। তেমনই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বাম শিবিরেও। অতীতে যা ঘটেছে, তাকে ভুলে গিয়ে শরিকদের সঙ্গে আসন বাগে এবার বাস্তবসম্মত সূত্র নিতে চাইছে বামফ্রন্ট। বিধানসভার নির্বাচনে কোন কোন আসনে তারা লড়তে চায় এবং সাংগঠনিক শক্তি যে যে আসনে বেশি হিসেব করে তার একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে শরিকদের কাছে। সেই তালিকা যাচাই করে আসন বণ্টন ও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজে হাত দেওয়া হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালি করে নির্বাচনে লড়ার ফল যে একেবারেই ভালো হয়নি, তাই বাস্তব জিনিসটা বুঝতে পেরেছে সিপিএম সহ শরিকরা। এটা ভাবাই যায় না যে বামফ্রন্ট— আটটি দলে বিভক্ত, তার কোনও মুখ নেই বিধানসভায় এবং লোকসভায়।

বামফ্রন্ট দীর্ঘদিন রাজত্ব করে এখন প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই তাদের প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে বাম নেতাদের। ফ্রন্টের জমানায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু গর্ব করে বলতেন, সিপিএম এবং তার শরিক দলগুলির মধ্যে ঐক্য এবং সমন্বয়ের জন্য তারা গর্বিত। আর এই ঐক্যের জন্যই তারা প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসছে। বামফ্রন্টের এই ঐক্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, ২০১১ সালে বিধানসভার নির্বাচনে বামফ্রন্টের পরাজয় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয় একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা।

আসলে কংগ্রেসের হাত ধরে বামফ্রন্টের বিশেষ করে সিপিএমের নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে লড়া রাজ্যের সাধারণ মানুষ এমন কি সিপিএমের এক শ্রেণির বর্ষীয়ান নেতারা মেনে নেননি। কারণ কংগ্রেস একদা সিপিএমের বড় রাজনৈতিক শত্রু ছিল— আর সেই কংগ্রেসের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলে নির্বাচনে লড়ে তার ফল হল বিষময়। এই সম্পর্ককে ভালোভাবে নেয়নি সিপিএম ও শরিকদলগুলির নীচিতলার কর্মীরা। তারা আশাহত হয়ে পড়ে। তাদের তখন বলতে শোনা যেত কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের বন্ধুত্ব সে যে ভাবেই হোক, মানা যায় না। সিপিএমের অনেক কর্মী তারপর দলের হয়ে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে এই দল দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ে। পরিণামে দেখা গেল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নির্বাচনের লড়ার ফল প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়।

এইভাবে পরাজয় দেখে মনে হয় শিক্ষা নিয়েছে সিপিএম। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রার্থী তালিকা তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সব শরিকদলকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আসনের প্রার্থী তালিকা জমা দিতে বলেছে ফ্রন্ট। তারপর সাধারণ মানুষের কাছ যাওয়া হবে তাদের সমর্থন আদায় করতে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, গত ৪০ বা ৩৫ বছর ধরে যে যে আসনে বামপ্রার্থীরা লড়েছে, সেই সব আসনে লড়েই যেতে হবে— এই ধারণা আকড়ে ধরে রাখলে চলবে না। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং বাস্তবসম্মত উপায় ভাবতে হবে। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, ২০২৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।

সিপিএমের নেতারা আশায় বুক বাঁধছে যে, আসন্ন ২০২৬ বিধানসভার নির্বাচনে ফ্রন্টের প্রার্থীরা ভালো ফলই করবে। অতীতে কী ঘটেছে, তা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট খুশি এই কারণে যে, প্রচুর সংখ্যক যুবক-যুবতীরা সিপিএমের দলে এসেছে। এই যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। মিটিং-মিছিলে সিপিএমের ডাকে প্রচুর সংখ্যায় মানুষ যোগ দিচ্ছে, তা দেখে আশান্বিত হয়ে বিধানসভার নির্বাচনের প্রার্থীরা ভালো ফল করবে, তা ভাবেলে চলবে না। বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই মানুষের কাছে যেতে হবে, তাঁদের সুখ-দুঃখের ভাগী হতে হবে। শাসক দল তৃণমূলের ভুলভ্রান্তি এবং পাহাড় সমান দুর্নীতি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাছাড়া, বিপদে-আপদে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে হবে— তাহলে তাঁদের সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের আশা।