নাগরিকত্ব বিল আইনে পরিণত হওয়ার সময় বিজেপিকে সমর্থন করেছিল অসমে তাদের জোটসঙ্গী অসম গণ পরিষদ । কিন্তু এখন তাদের মনে হয়েছে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের ভুল হয়েছে। আর তাই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে তারা। এমনকী এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনাও করেছে অসম গণ পরিষদের নেতৃত্ব।
সুত্রের খবর, শনিবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে অসম গণ পরিষদ । এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, অসমের মানুষের মন বুঝতে ভুল করেছেন তারা। মােদি-শাহের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা। নিজেদের ভুল শােধরানাের জন্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে অসম গণ পরিষদের তাবড় নেতৃত্ব।
একই সঙ্গে অসম গণ পরিষদের তরফে জানানাে হয়েছে, নরেন্দ্র মােদি এবং অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে যদি কোনও সমাধানসূত্র বের না হয়, তাহলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানাের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে অসমের এই রাজনৈতিক দলটি।
অসমে সর্বানন্দ সােনােয়ালের নেতৃত্বাধীন সরকারের জোটসঙ্গী অসম গণ পরিষদ। অসমের মন্ত্রিসভায় তাঁদেন তিনজন মন্ত্রীও আছেন। জানা গিয়েছে নাগরিকত্ব আইনের ক্ষেত্রে বিজেপিকে সমর্থন করার পরে অসম গণ পরিষদের মধ্যে বিরােধিতা তৈরি হয়েছে। অসম গণ পরিষদ সুত্রে খবর, ক্রমশ বাড়ছে এই বিরােধ। প্রতিদিনই এই বিলে সমর্থন জানানাের সিদ্ধান্তের প্রতি অনাস্থা এবং বিরােধিতা প্রকাশ করছেন দলের একাংশের নেতৃত্বসহ সদস্য-সমর্থকরা।
এমনকী দলের অনেক নেতাই দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছে। তাদের অভিযােগ, অসমের মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে দল। দলের মধ্যেই এই বিক্ষোভ বাড়তে দেখে তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠকে বসে অসম গণ পরিষদ। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় এবার সরাসরি নামবে দল।
শুধু অসম গণ পরিষদই নয়, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিজেপি’র মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এই রাজ্যে। অসম পেট্রোকেমিকেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ভুইঞা এই আইনের প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করেছেন। অসম ছবির জনপ্রিয় নায়ক তথা অসমের ফিল্ম ফিনান্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান যতীন বােরা বিজেপি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি নাগরিকত্ব আইন মানি না।
আজ আমার পরিচয় অসমের মানুষর জন্য হয়েছে। তাই এই বিষয়ে আমি তাঁদের সঙ্গে আছি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বিজেপিতে যােগ দিয়েছিলেন এই অভিনেতা। কয়েকদিন আগে অসমের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা রবি শর্মাও বিজেপি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
নাগরিকত্ব বিল লােকসভায় পাশ হওয়ার পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে অসমে। এই বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হয়ে আইনে পরিণত হওয়ার পরেই সেই বিক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারন করে। পরিস্থিতি মােকাবিলা করতে নামানাে হয় সেনা। বেশ কয়েকটি জেলায় জারি করে দিতে হয় ১৪৪ ধারা। পুলিশের গুলিতে তিনজন মারা যান। সঙঘর্ষে আহত হয় পুলিশও। এই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এক হাজার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য বিক্ষোভ কমে গিয়েছে এবং অসমের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে গেল তাদের জোটসঙ্গী।