আশঙ্কাই সত্যি হল, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকুকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই। সোমবার ভার্চুয়ালি আদালতে হাজিরা দেন সুজয়কৃষ্ণ। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তারের নথি আদালতে পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আদালতে সিবিআই জানায়, তাঁরা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে হেফাজতে নিতে চায়। সুজয়কৃষ্ণর আইনজীবী অবশ্য ইডির মামলায় জামিনের সূত্র ধরে সিবিআই হেফাজতের বিরোধিতা করেন।
গত ৬ ডিসেম্বর নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ইডির মামলা থেকে জামিনে পেয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। যদিও তিনি জেল থেকে ছাড়া পাননি। ২০২৩ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন কালীঘাটের কাকু। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি জোকা ইএসআই হাসপাতালে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ‘ভয়েস স্যাম্পেল টেস্ট’ হয়।
১০ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে বলেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র অলরেডি অ্যারেস্টড। তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য আমাদের অনুমতির দরকার নেই! তখনই বিভিন্ন মহলের তরফে ধারণা করা হয়েছিল, যে ইডি মামলায় জামিন পেলেও ফের সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
এরপর গত সোমবার ইডির মামলায় বিচার ভবনে ভার্চুয়ালি হাজিরা দেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। জেল হাসপাতালের বিছানা থেকে লাল কম্বল গায়ে, মাথায় মাফলার জড়িয়ে ভার্চুয়ালি হাজির হন তিনি। শুয়ে শুয়ে পিঠে ব্যথা হয়ে গিয়েছে বলেও আদালতে জানান সুজয়। চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থার উপর নজর রাখছেন বলে আদালতে জানানো হয়।
তবে সোমবার সুজয়ের আগাম জামিনের আর্জিতে সাড়া দেয়নি হাইকোর্ট। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই মামলায় আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, অন্য মামলায় হেফাজতে আছেন, প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। ওয়ারেন্ট যখন হাতে পেয়েছেন, তার মানে আপনাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সিবিআই বা এটা গ্রেপ্তারের সমতুল্য। তাই আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।
২০২৩ সালের মে মাসে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। ইডি-র মামলায় জামিন পাওয়ার পর, সিবিআই নতুন করে তাঁকে হেফাজতে নিতে চেয়েছিল, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং আরও তদন্ত করতে পারে। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৫ বার নিম্ন আদালতে হাজিরার নির্দেশ অমান্য করেন।
এরপরেই সিবিআইয়ের গ্রেপ্তঋ ঠেকানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন কাকু। কিন্তু কালীঘাটের কাকুর আগাম জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।
ইডির দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন সুজয়। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। তদন্তকারী আধিকারিকদের আরও দাবি, কুন্তল জানিয়েছেন, পার্থর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে তাঁর কাছ থেকে প্রথমে ৭০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন সুজয়। সুজয়ের কথাতেই তিনি পার্থকে আরও ১০ লক্ষ টাকা দেন।
ইডির তদন্তে উঠে আসে, হাওয়ালার মাধ্যমে প্রায় ১১ কোটি টাকা নিজের বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, হাওয়ালার কোটি টাকার বিনিময়ে প্রচুর জমি, সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। তাঁর নামে ১০০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ মিলেছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের।
তদন্তকারীদের দাবি, টাকার বিনিময়ে বহু প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন কালীঘাটের কাকু। সেই প্রার্থীদের টেটের অ্যাডমিট কার্ড, রেজাল্ট পাঠিয়েছিলেন মানিককে। কিন্তু সেই তথ্য অস্বীকার করেন সুজয় ভদ্র।