শনিবারের মতো রবিবারেও জাঁকিয়ে শীত বঙ্গে। যার জেরে দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় শৈত্যপ্রবাহের হলুদ সতর্কতা জারি করে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। এদিকে সোমবারের পর ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়লেও কমবে না শীত। এভাবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীতের দাপট অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে সোমবারের পর কুয়াশার দাপটও বাড়তে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টা শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় । কুয়াশার দাপট উত্তরবঙ্গে বেশি । সোমবার পর্যন্ত একই রকম আবহাওয়া থাকবে । সোমবারের পর তাপমাত্রায় খানিক পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। রাজ্যে আংশিক মেঘলা আকাশ থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে । আগামী ৪-৫ দিন বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই ৷’ রবিবার এই তথ্য দিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, সপ্তাহের শেষে নিম্নচাপের সম্ভাবনা রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। ফলে, পারদ ফের উর্ধ্বমুখী হবে। যদিও শীতের দাপট কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। রবিবার পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা বলেন, ‘দক্ষিণ আন্দামান সাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যা নিম্নচাপে পরিণত হবে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এই নিম্নচাপের অভিমুখ থাকবে তামিলনাডু উপকূলের দিকে। সেটি পশ্চিম-উত্তর পশ্চিমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর হয়ে এই নিম্নচাপ তামিলনাড়ু উপকূলের স্থলভাগে প্রবেশ করবে। এর প্রভাবে আগামী ২-৩ দিন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বুধ ও বৃহস্পতিবার তামিলনাডু ও পুদুচেরিতে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
আপাতত উত্তর বা দক্ষিণবঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাতের তাপমাত্রায় খুব একটা হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু কম থাকবে। তার পরের তিন-চার দিনে ফের দুই থেকে তিন ডিগ্রি বাড়তে পারে তাপমাত্রা।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রবিবারের মতোই সোমবারেও পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমে শৈত্যপ্রবাহ হবে। এ ছাড়া, সকালের দিকে কুয়াশার সতর্কতা জারি করা হয়েছে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। এছাড়া উত্তরবঙ্গের সব ক’টি জেলাতেই সকালের দিকে কুয়াশা থাকবে। তার জেরে কমে যেতে পারে দৃশ্যমানতাও। তবে আপাতত বঙ্গের সর্বত্র আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক।
প্রসঙ্গত রবিবার মরশুমের শীতলতম দিন। কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই মরশুমে শহরের সবচেয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ভোরে এই তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৩.৬ ডিগ্রি কম। একইভাবে পশ্চিমের জেলাগুলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে ৭ ডিগ্রিতে। এ পর্যন্ত জেলাতে এটাই মরশুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রার নিরিখে উত্তরের জেলাগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীত বাড়ছে পশ্চিমের জেলাগুলিতেও!
রবিবার ভোরে দমদমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইভাবে ঝাড়গ্রামে ৭.৫ ডিগ্রি, কল্যাণীতে ৮.৩ ডিগ্রি, শ্রীনিকেতনে ৭.৮ ডিগ্রি, বর্ধমানে ৯.৮ ডিগ্রি, উলুবেড়িয়ায় ৯.৩ ডিগ্রি এবং বাঁকুড়ায় ৯.৫ ডিগ্রি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল। আবার দার্জিলিঙের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পুরুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে! অর্থাৎ প্রায় সমান সমান। সুতরাং ঠান্ডার নিরিখে দার্জিলিং জেলার পরেই স্থান দখল করেছে পুরুলিয়া । এমনকি, গত কয়েকদিনে কালিম্পঙের চেয়েও (৯ ডিগ্রি) পুরুলিয়ার তাপমাত্রা কমে গিয়েছে!