• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

পথে নামছেন মমতা, নবান্নে জরুরি বৈঠক

রবিবার থেকেই এনআরসি এবং ক্যাব-এর প্রতিবাদে জেলা ও ব্লকস্তরে আন্দোলন সংগঠিত হবে। বুধবারের মিছিল শুরু হবে হাওড়া ময়দানে, শেষ হবে ধর্মতলায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

জাতীয় পঞ্জীকরণ এবং নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলের প্রতিবাদে অসম, ত্রিপুরা সহ উত্তরপূর্ব ভারত অশান্ত হয়ে উঠতেই এই রাজ্যে গণ আন্দোলনের ডাক দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাণিজ্য সমাবেশ শেষে শুক্রবার দিঘা থেকে ফেরার পথে হেলিপ্যাডেই আন্দোলনের সুর বেঁধে দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বললেন, এই রাজ্যে ‘নাে এনআরসি, নাে ক্যাব’। জানিয়ে দিলেন, এই ইস্যুতে আগামী সােমবার থেকে শহরের বিভিন্ন রাজপথে নেমে মিছিলে হাঁটবেন তিনি।

সােমবার বেলা একটায় সংবিধানের স্থপতি আম্বেদকরের মূর্তি থেকে মিছিল শুরু হয়ে গান্ধিমূর্তির পাদদেশ ছুঁয়ে থামবে জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরবাড়িতে। মঙ্গলবার যাদবপুর এইট বি বাসস্টপ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শেষ হবে গান্ধি মূর্তি পাদদেশে। এই পদযাত্রায় সামিল হতে নিজের দলের কর্মী ছাড়াও, অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলের কর্মী এমনকী নাগরিক সমাজকেও আহ্বান জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। রবিবার থেকেই এনআরসি এবং ক্যাব-এর প্রতিবাদে জেলা ও ব্লকস্তরে আন্দোলন সংগঠিত হবে।

বুধবারের মিছিল শুরু হবে হাওড়া ময়দানে, শেষ হবে ধর্মতলায়। নেত্রীর চারদিনের এই গণ আন্দোলনের কর্মসূচির কথা ঘােষণার পরপরই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান শুরু করে সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন সংগঠন। এইসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দীঘা থেকে ফিরেই মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, এডিজি (আইন শৃঙ্খলা), কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে যাতে কোনওভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেদিকে নজর দিতে বলেন। শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যবাসীর কাছে। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘােষণা করেছিলেন, বিজেপি’র মতাে দাঙ্গা বাঁধানাের উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সকলকে নিয়ে আন্দোলন করতে চাই। শুক্রবারও জানিয়ে দেন, কোনও সাম্প্রদায়িক মনােভাব নিয়ে রাজ্যে এই গণ আন্দোলন হবে না। একই সঙ্গে সকলকে আশ্বস্ত করতে তৃণমূল নেত্রী বলেন, এই রাজ্যে কখনই বিজেপি সরকার গড়তে পারবে না। সবাই জানে, বিজেপি এই বাংলার পাপ, দেশের অভিশাপ। ডিটেনশান ক্যাম্প তৈরির বিষয়টি রাজ্যেরই হাতে থাকে। অসমে ওদের সরকার ছিল, তাই ওখানে ডিটেনশান ক্যাম্প তৈরি করতে পেরেছে। কিন্তু কেন্দ্র চাইলেও এই রাজ্যে জাতীয় পঞ্জীকরণ চালু করা সহজ হবে না। নেত্রী জানিয়ে দেন, প্রতিরােধী আন্দোলনের জন্য যত অত্যাচারই নেমে আসুক, তা সত্ত্বেও তিনি পিছপা হবেন না। যদিও সকলেরই জানা, বিজেপির বিরুদ্ধাচরণ করলেই তার বিরুদ্ধে আঘাত নেমে আসে। মুখ্যমন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন, বিজেপি হল ওয়াশিং মেশিন ইন্ডাস্ট্রি। সব দুর্নীতিগ্রস্তই বিজেপিতে গেলে সাফসুতরাে হয়ে যায়। তাই বিজেপিকে নিয়ে মমতার তির্যক মন্তব্য, হয় বিজেপিতে গেলে, নয় তাে যাবে জেলে।

মমতা এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের অসাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। জিএসটি কাউন্সিলের নিয়ম না মেনে তা চালু করার জন্য দেশের মানুষের বিপাকে পড়া, জিএসটি’র ক্ষতিপূরণ রাজ্যকে না দেওয়া, নােটবন্দির ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি, একশােরও বেশি মানুষের প্রাণহানির প্রসঙ্গ, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি, লাগামহীনভাবে বেকারি বেড়ে চলা ইত্যাদির প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরেন। এগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষকে সামিল করার একটা জমি প্রস্তুত করার মতাে। তবে এই পর্যায়ে বিজেপির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন সংগঠিত করতে যথেষ্ট কৌশলী মমতা।

শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের প্রহরায় থাকতে, যাতে কোনও বিক্ষোভই মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। অন্যদিকে তৃণমূল সুপ্রিমাে হিসেবে আহ্বান জানিয়েছেন, জাতীয় পঞ্জীকরণ এবং নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল রুখতে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ করুন। আমি নিজে সেই আন্দোলনের পাশে থাকব। শুক্রবার মােদি সরকারকে আক্রমণ করে নেত্রী বলেন, ওরা গায়ের জোরে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে যা খুশি করছে। কিন্তু সংগরিষ্ঠতা কোনও স্থায়িত্ব নেই। কুর্সির সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে যায়। কিন্তু বিজেপি এখন যা করছে, তাতে দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে।

শুক্রবার দীঘা থেকেই নেত্রী বলেন, আমরা প্রথম থেকেই এই এনআরসি এবং ক্যাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি। সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট না করার জন্য বােঝানাের চেষ্টা করেছি। বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার কাজটা প্রথম আমরাই করে আসছি। পরিস্থিতির দিকে লক্ষ রাখছি। কিন্তু বিজেপি ধর্মের নামাবলি গায়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে খেলা করছে। কিন্তু তারা সংখ্যাগরষ্ঠিতার জন্য যা খুশি করতে পারে না। এইসব ইস্যু তৈরি করে বিজেপি। তার নিজের রাজনৈতিক ইস্তেহারকে সফল করতে চাইছে।

সাম্প্রতিক ইস্যুর প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশ হওয়ার পর অসম, ত্রিপুরা জ্বলছে। বাংলাদেশের সীমান্তেও অশান্তি তৈরি হয়েছে। আগুন যখন লাগে তখন সবাই গায়েই তার আঁচ এসে পড়ে। বন্যা যখন হয়, তখন সবাই তার তােড়ে ভেসে যায়। কাজেই অসমসহ উত্তর পূর্ব ভারত যখন অশান্ত হয়ে উঠেছে, এই রাজ্যের মানুষও আতঙ্কে ভুগছে, তখন মানুষের স্বার্থেই তৃণমূল সরকার আন্দোলনে নামবে স্পষ্ট জানিয়ে দেন নেত্রী।