অবশেষে বহু টালবাহানার পর বর্ধমান পৌরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আর্বজনা থেকে ভয়াবহ দূষণ কমাতে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া হলো। জঞ্জাল ও জমে থাকা আর্বজনা থেকে এবার কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য জৈব সার তৈরি হবে। এ ব্যাপারে বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রকল্পের কাজ শুরু করলো পৌরসভা। একটি সংস্থার মাধ্যমে ওই কাজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে দরপত্র ডাকার কাজও হয়েছে। খুব শীঘ্রই সার তৈরির যাবতীয় কাজ শুরু করা হবে। দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা পাহাড় প্রমাণ ওই জঞ্জালের স্তুপ সড়িয়ে ফেলার পর একদিকে যেমন দূষণ কমবে, তেমন একই সঙ্গে পৌরসভার বাড়তি আয় সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বর্ধমান শহরের অদূরে কৃষি খামারের কাছে পৌরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ড। বর্ধমান-কালনা রাজ্য সড়কের ধারে থাকা এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড ঘিরে আশপাশের এলাকার মানুষের অভিযোগ ভূরি ভূরি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ওই সময় রাস্তার ধারে থাকা জঞ্জাল ঢাকতে নীল-সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলেও কৃষি খামারে আয়োজিত সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় পৌরসভার আধিকারিকদের ধমক দেন। তার পরেও কয়েক বছর ধরে বিশাল এলাকা জুড়ে জঞ্জালের পাহাড় তৈরি হয়ে আছে। কোন রকম পাঁচিল না থাকায় ওই জঞ্জাল আর্বজনা এখন রাস্তায় চলে আসে। বৃষ্টি হলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। যানবাহন চলাচলেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা দূর্গন্ধ এতটাই ছড়ায় যে আশপাশের বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে বার বার অভিযোগ করেন। সারা বছরই রাস্তায় যাতায়াতের সময় নাকে রুমাল চাপা দিয়ে ছাড়া যাওয়া আসা করা যায় না। বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার বলেছেন, এ সব সমস্যারই সমাধান হতে চলেছে, যা শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা।
মোট ২১ বিঘে জমিতে গড়ে তোলা ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে নোংরা সরিয়ে এবার জৈব সার তৈরি করা হবে। এর জন্য প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে পৌরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। সর্বপ্রথম চারদিকে পাঁচিল দেওয়ার কাজ শুরু করেছে পৌরসভা। পাশে বাঁকা নদীর ভাঙন রোধে বোল্ডার দেওয়ার কাজও হবে। এই কাজে ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। এর পর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জমে থাকা নোংরা আর্বজনা পরিষ্কার করা হবে। জমে থাকা আর্বজনা ছাড়াও প্রতিদিন গড়ে বর্ধমানের ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে প্রায় ১৭০ টনের মতো নোংরা আর্বজনা জমা হয়। আগেকার জমে থাকা প্রায় ৫ লক্ষ টন নোংরা জঞ্জাল কাজে লাগানো হবে। এর জন্য দরপত্র ডেকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার থেকে জৈব ও অজৈব আর্বজনা আলাদা করা হবে। তার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি আর্বজনা সংগ্রহ করার সময়ই আলাদা করে নেওয়া হতে পারে। আর পুরো কাজের তদারকির দায়িত্বে ‘সুডা’ বা রাজ্য নগর উন্নয়ন সংস্থা। সুডা-ই এক ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের বরাত দিয়েছে। এখানেই জৈব ও অজৈব আর্বজনা বাছাই করে পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে। সেখানে জৈব আর্বজনা থেকে বিশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে প্রয়োজনীয় জৈব সার তৈরি হবে। আর অজৈব আর্বজনা থেকে হবে সিমেন্টের প্লাস্টিক বস্তা তৈরি করার কাজ।