স্বপনকুমার মণ্ডল
শিল্পী-সাহিত্যিকের ক্ষেত্রে সৃষ্ট শিল্প-সাহিত্যে আত্মগোপন করার বিষয়টি মহান গৌরবের মনে করা হয়। কিন্তু লেখকের মধ্যে তাঁর ব্যক্তিসত্তাকে কখনওই অস্বীকার করা যায় না। কেননা ব্যক্তিসত্তার ভিতেই লেখকসত্তা দাঁড়িয়ে থাকে। এজন্য একজন লেখকের মধ্যে ব্যক্তি ও লেখকের দ্বৈতসত্তা কখনও প্রচ্ছন্ন থাকে, কখনও প্রকট হয়ে ওঠে। শিল্পী বঙ্কিমের সঙ্গে নীতিবাগীশ বঙ্কিমের কথা সুবিদিত। আবার লেখকসত্তার মধ্যেই একাধিক সত্তা নিবিড় হয়ে ওঠে। বঙ্কিমের মধ্যেই কমলাকান্ত সজীব হয়ে উঠেছেন, রবীন্দ্রনাথের সোপানে ভানুসিংহ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন। শরৎচন্দ্র অনিলা দেবীতে আত্মগোপন করেছেন। ফলে একই লেখকের অস্তিত্বে একাধিক লেখকসত্তা নিবিড় হয়ে ওঠে। অবশ্য এক্ষেত্রেও স্রষ্টার এক থেকে বহু হওয়ার বাসনাই সংগুপ্ত থাকে। এই বহু হওয়ার পথে লেখককে তাই ছদ্মনামে আশ্রয় নিতে হয়। আবার এই ছদ্মনামে নিজেকে আবৃত করার জন্য প্রয়োজন হয় ছদ্মবেশের। এই ছদ্মবেশের প্রকৃতির উপরেই সেই লেখকের একাধিক সত্তার স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রকট-প্রচ্ছন্নতার বিষয়টি নির্ভর করে।
সেদিক থেকে বাংলা সাহিত্যে কথাসাহিত্যিক সমরেশ বসু(১১.১২. ১৯২৪-১২.০৩.১৯৮৮) ‘কালকূট’ ছদ্মনামে সুপ্রতিষ্ঠিত। শুধু তাই নয়, ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে'(‘দেশ’-এ ১৯৫৪-র ২৭ জুন থেকে ধারাবাহিক) উপন্যাসটির মাধ্যমে ছদ্মনামটি বাঙালিমানসে পবিত্র প্রয়াগের তীর্থভূমির সঙ্গে সমার্থক হয়ে উঠেছে। আজও তাই বাৎসরিক কুস্তমেলার প্রতিবেদনে কালকূটের নাম স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চারিত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সমরেশ বসুর সমুদ্রমন্থনজাত তীব্র বিষার্থক এই কালকূট ছদ্মনামটি রসিক পাঠকমানসে অমৃতময় হয়ে উঠেছে। এজন্য অবশ্য এই বিষামৃতের বিষয়টি আলোচনার অগ্রসর হওয়ার পূর্বে তাঁর ছয়নামটির নেপথ্যে একবার অনুপ্রবেশ (কেননা প্রবেশের সদর দরজাটি এক্ষেত্রে সুগম নয়।) করা প্রয়োজন।
সমরেশ বসু ১৯৫২-তে ‘প্রবাহ’ পত্রিকায় ‘ভোটদর্পণ’ রচনায় কালকূট ছদ্মনাম নিয়েছিলেন। রচনাটিতে চটকল এলাকায় সাধারণ নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাঙালি-অবাঙালির মধ্যে দাঙ্গা বাঁধানোর বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ফলে রচনাটি নেহাতই তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ামূলক, তা সহজেই অনুমেয়। প্রসঙ্গত স্মরণীয়, সমরেশ বসুও চটকলের কর্মী ছিলেন। সেক্ষেত্রে তাঁর সংবেদনশীল কমিউনিস্ট ব্যক্তিত্বের পক্ষে রচনাটি অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। দারিদ্রের সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও তিনি নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শকে আঁকড়ে ছিলেন বহুদিন। এজন্য তিনি জেলও খেটেছেন। এই আদর্শের নিষ্ঠায় ১৯৬২-তে চিন-ভারত যুদ্ধের সময় ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘শিল্পীর স্বাধীনতা’য় লেখনী চালনা থেকে বিরত ছিলেন। অর্থাৎ মনে সায় ছিল না বলেই তিনি তা থেকে বিরত থেকেছেন।
অন্যদিকে নৈহাটি কমিউনিস্ট নেতৃত্বের কাছে উপেক্ষা আর বঞ্চনার শিকার হয়েও কমিউনিস্ট আদর্শ থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেননি। এরকম আদর্শব্রতীর পক্ষে ‘ভোটদর্পণ’ রচনাটি অস্বাভাবিক নয়। এমনকি, এজন্য ছদ্মনাম গ্রহণও স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু তাঁর কালকূট ছদ্মনামটি সেক্ষেত্রে মনে খটকা লাগায়। কেননা যা রাজনৈতিক রচনার ক্ষেত্রে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাই অন্য ধরনের রচনার ক্ষেত্রে তা কতটা সাযুজ্য পূর্ণ, তা নিয়ে আপনাতেই বিতর্কের অবকাশ তৈরি করে। অথচ সমরেশ বসু সচেতনভাবেই তা করেছেন এবং এজন্য তিনি রীতিমতো নানা রচনায় তার জবাবদিহিও করেন। ‘প্রসাদ’-এ (এপ্রিল ১৯৭৪) ধারাবাহিকভাবে (যদিও তা অসম্পূর্ণ) লিখেছেন ‘কালকুটের চোখে সমরেশ বসু’। আবার ‘দেশ’-এ (সাহিত্য সংখ্যা ১৩৮২) ‘গাহে অচিন পাখি’-তে তিনি বিস্তৃত ব্যাখ্যায় নিবিড় হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ‘দেশ’-এর সুবর্ণজয়ন্তী সংখ্যাতে “দেশ’ ও ‘আমি’ রচনায় সে বিষয়ে আবার ফিরে এসেছেন। আসলে সমরেশ তাঁর আত্মমুদ্রার অন্যপিঠে কালকূটকে সুচিহ্নিত করে আমৃত্যু সচল থাকায় আপনাতেই দ্বৈতসত্তায় নিবিড়তা লাভ করেছেন এবং এজন্য কৌতূহলী পাঠকসমীপে তাঁর অস্তিত্বকে বার-বারই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার স্বতন্ত্রতাকে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছেন। অবশ্য তাতে তিনি স্পষ্ট ধারণা সৃষ্টিতে সফল হয়েছেন, একথা সর্বাংশে বলা যায় না। আর তাঁর পক্ষে তা সম্ভবও ছিল না বলে মনে হয়। বিষয়টি একটু আলোচনা করা প্রয়োজন।
সমরেশ বসু তাঁর কালকূট নাম গ্রহণ প্রসঙ্গে ‘গাহে অচিন পাখি’ রচনায় জানিয়েছেন : ‘কিন্তু এমন নামটি কেন? তাহলে প্রাণটি খুলে দেখাতে হয়। দেখলেই বোঝা যাবে, বুক ভরে আছে গরলে, আপনাকে খুঁজে ফেরা, আসলে তো হা অমৃত তা অমৃত। বিষে অঙ্গ জর্জর, কোথা হা অমৃত !……. কালকূট ছাড়া আমার নাম কী হতে পারে?’ অথচ আবার এই কালকুটের মাধ্যমেই সমরেশ নিজেকে স্বতন্ত্র করে তোলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ‘কালকূটের চোখে সমরেশ বসু’ রচনায় : ‘… কিন্তু এক বৃন্তে থেকেও আমরা ভিন্ন। আমাদের রঙ, রস, গন্ধ সবই আলাদা। ওর সঙ্গে আমার ভাবের থেকে অভাব বেশি। কিন্তু ওর গন্ধটা আমি পাই। বৃন্তের ডালে শিরায় শিরায় ওর জীবনে যে বেগ প্রবাহিত হচ্ছে, আমি তা অনুভব করি। ওকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। অথচ, আমার দিকে ও ফিরে তাকায় না। আমার প্রবাহটা ও অনুভব করে না। তার কারণ, ওর বেগটা এতই প্রবল যে আমার দিকে ফিরে তাকাবার ওর অবকাশ নেই।’ ফলে একদিকে যেমন সমরেশের মধ্যেই ‘আপনাকে খুঁজে ফেরা’র সূত্রে কালকূটের আবির্ভাব হয়েছে, অন্যদিকে তেমনই তাঁর মধ্যে তাঁকে সযত্নে স্বতন্ত্র করার প্রয়াসও বর্তমান।
কিন্তু এতে অবশ্য জট কাটেনি, আরও জড়িয়ে গেছে। একদিকে একাধিক সত্তায় মেলে ধরার সদিচ্ছায় সমরেশ কালকূট হয়ে উঠেছেন, তা যেমন সত্য, অন্যদিকে তেমনই তার স্বতন্ত্রতা প্রতিস্থাপনে সমরেশের অস্তিত্বকেই অস্বীকারের সক্রিয়তায় কালকূটকে প্রতিষ্ঠা প্রদানের পথ আপনাতেই অন্তরায় হয়ে ওঠে, তাও অসত্য নয়। একই মনের রসদের মাধ্যমে মনন প্রকৃতির স্বতন্ত্রতায় একজন সমরেশ বসু, অন্যজন কালকূট হয়ে ওঠেন। সেক্ষেত্রে দুই সত্তার চেয়ে দুই প্রকৃতিই স্বতন্ত্রতা লাভ করে। ফলে এজন্য দুই সত্তার মধ্যে বিভেদ রেখাকে প্রভেদ করতে যাওয়া মানেই জটিলতা ও ধোঁয়াশার জালকে সুবিস্তৃত করে চলা। সমরেশ ও কালকূটের মধ্যেও তা নিবিড় হয়ে উঠেছে । ‘কালকূটের চোখে সমরেশ বসু’ রচনাতেই তা প্রকট হয়ে উঠেছে : ‘…..ওর সঙ্গে আমার কী যে সম্পর্ক, তা আমি জানি না । ওকে চিনি, একথা তো বলাই যাবে না। তবে হ্যাঁ, একটা কথা মানতে হবে আমার জন্মকাল থেকেই দেখছি, ওর সঙ্গে কোথায় আমার একটা অচ্ছেদ্য বন্ধন হয়েছে। যেন মনে হয়, মাতৃগর্ভের এক নাড়িতে, এক মূলেই আমাদের জন্ম। কিন্তু দুই বিপরীত দিকে আমাদের মুখ, আমার কেউ কারোকে চিনি না। মুখ ফিরিয়ে, ওকে যদি না আমি দেখে থাকি, ও কখনও ফিরে তাকায়নি।’
সমরেশ বসু’র দ্বৈতসত্তা নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন সত্যজিৎ চৌধুরী তাঁর ‘কালকূট-সমরেশ : দ্বৈতাদ্বৈত’ (‘বাংলা বিভাগীয় পত্রিকা’, ১৯৯১-৯২, যাবদপুর বিশ্ববিদ্যালয়) প্রবন্ধে। তাতে প্রাবন্ধিক সমরেশের দ্বৈতসত্তার মধ্যে তাঁর অদ্বৈত প্রকৃতিকেও নিবিড় করে তুলেছেন। এজন্য সমালোচক সমরেশ ও কালকূটের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে প্রকাশভঙ্গির মধ্যে খুঁজে ফিরেছেন : ‘তাহলে বলতে হয়, সমরেশ বসু রীতিবদ্ধ সাহিত্য-চর্চার পাশে পাশে রচনা করে তুলেছিলেন ইচ্ছাসুখে কলম চালানোর উপযোগী বাঁধা রীতির দায়মুক্ত আর-একটি শৈলী। সে শৈলীতে মুখ্য ভূমিকায় রাখেন সংবেদনময় অথচ বিবিক্ত নিজেরই আন্তর-চরিত্র—যার নাম কালকূট। কোনো বাধ্যবাধকতার দায় মুক্তভাবে, চিত্রকরের স্কেচের মতো, ভাস্করের মডেলিংয়ের মতো যদৃচ্ছ সৃষ্টির আর-একটা ধারা ক্রমে তৈরি হয় কালকূটের বয়ানে।
সে ধারাও এক খাতে বয় নি। কালকূট বয়ানের লেখার মধ্যেও শৈলী ভেদ আছে। বিষয় ভাবনায়, বলার ধরনে, এবং ভাষারীতিতে এত ভেদ যে কোনোক্রমেই সব লেখাকে এক প্রবাহের মধ্যে ধরানো যায় না।’ অন্যদিকে যে-রচনার মাধ্যমে সমরেশ কালকূটে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন, সেই ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’র মধ্যেও সমালোচক অদ্বৈত সত্তা খুঁজে পেয়েছেন : ‘কালকূটের এ কলানৈপুণ্য, আর একবার বলতে হচ্ছে, সমরেশের হাতেরই কাজ। দুই ব্যক্তিত্বের পৃথক প্রকাশভূমি সত্ত্বেও মূল প্রকৃতিতে এঁরা অদ্বয়। একই জাতের কলাকৃতির ছাপ আছে দুই নামের দুই প্রস্থ রচনায়।’ শুধু তাই নয়, প্রাবন্ধিক সমরেশের দুই সত্তার বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যর মতো মৌল বিশেষত্বেও একই প্রণসত্তার হদিশ দিয়েছেন। সমালোচকের কথায় : ‘সমরেশ বসু জীবন ভরে সেই বস্তুরই সন্ধান করেছেন। সেই তাঁর অমৃত। যে নামেই লিখুন, তার সব লেখাই “বিষবাহী প্রাণের অমৃত সন্ধানের কথা।” নিজের অপূর্ণতা, নিজের মধ্যে যা-কিছু খাদ, সচেতন ভাবে সে অপূর্ণতার কথা তিনি বার বারই বলেন। সেখান থেকেই তৃষ্ণার জন্ম। সে তৃষ্ণার জ্বালা আছে, দহন আছে। নিজের মধ্যের মহাপ্রাণীটি সেই জ্বালায়, দৈন্যে তাড়িত হয়ে পূর্ণতার অভিমুখী। পূর্ণতা আসে মানুষের মহিমা অঙ্গীকারে। মানুষই তাঁকে টানে। গ্রামে গঞ্জে মেলায় তীর্থে ঘুরে মানুষ সাধেন সমরেশ কালকূট নামে। ভিন্নভাবে সেই মানুষের অপরাহত রূপ ধরেন গল্প উপন্যাসে সমরেশ বসু নামে।’
সমরেশের দ্বৈতসত্তায় অদ্বৈত বিশেষত্ব সূত্রে কালকূট ছদ্মনামের বিষয়টি আপনাতেই বিতর্কিত হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সমরেশের ‘কালকূট ছাড়া আমার নাম কী হতে পারে’র প্রশ্নটি যেমন সচল হয়ে ওঠে, তেমনই সমালোচকের ‘বিষবাহী প্রাণের অমৃত সন্ধানের কথা’য় কালকূটের স্বতন্ত্র সত্তাটি প্রকাশভঙ্গিনির্ভর মনে হবে। প্রথম কথা, রাজনৈতিক রচনায় নিজেকে কালকূট অভিধায় ব্যক্ত করার মধ্যে যে তিক্ত মানসিকতা প্রকট হয়ে ওঠে, তাই অন্য ধরনের রচনার ক্ষেত্রে বিসদৃশ মনে হবে। যেখানে অমৃত সন্ধানী মনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র, সেখানে বিষধরের প্রবেশ হতেই পারে, কিন্তু বিষের মতো অবাঞ্ছিত বস্তুর গমন স্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে সমরেশ কালকূটকে ধারণ করে অনায়াসেই গরলপায়ী ‘নীলকণ্ঠ’ হতে পারতেন। পার্থিব জীবনে বিষে জর্জরিত অমৃতপিয়াসী সমরেশ শুধু নিজের জন্য নয় (তাহলে তিনি লিখে প্রকাশ করতেন না।), অপরের মনে অমৃতের সন্ধান প্রদানে সক্রিয় হতে চেয়েছিলেন। এজন্য তাঁর ব্যক্তিগত অমৃতের জন্য হাহাকার এবং তজ্জনিত অমিয় সাগরের সন্ধানে অগ্রসর হওয়ার সর্বজনীন মঙ্গলকামনার বিষয়টি নীলকণ্ঠের মাধ্যমে সুগভীর বাঞ্ছনাবহ হয়ে উঠতে পারত। কেননা নীলকণ্ঠই গরলমুক্ত জগতের নিবেদিত প্রাণশক্তির সবচেয়ে বড় আধার। এজন্য কালকূট অনায়াসেই সেই আধারে আশ্রয় নিতে পারতেন।
আর তাতে একদিকে যেমন তাঁর বিষে জর্জরিত জীবনও ব্যক্ত হত, অন্যদিকে তেমনই কালকূটকে ধারণ করে অন্য সকলের অমৃত আস্বাদ প্রদানে পথ চলাও স্বাভাবিক হয়ে উঠত। শুধু তাই নয়, তাতে তাঁর ব্যাখ্যার অবকাশটিও সহজ হয়ে যেত। সমরেশের হলাহলস্নাত জীবনে অমৃতের অতৃপ্তিবোধের ব্যঞ্জনা সেদিক থেকে উপাদেয় হয়ে উঠত। আর হয়েছেও তাই। কিন্তু ছদ্মনামের ছদ্মবেশটি সেক্ষেত্রে তাঁর অমৃত অন্বেষণী মনের মর্মসহচর না হয়ে মর্মবিদারক হয়ে উঠেছে। কেননা নীলকণ্ঠই কালকূটকে কণ্ঠে ধারণ করে জগৎবাসীকে রক্ষা করে অমৃতময় জীবনের হাতছানিকে জিইয়ে রেখেছিলেন। কালকূটের যাত্রাও সেই অভিমুখে। অমৃতের সন্ধানে তাঁর নিরন্তর পথ চলা। সেক্ষেত্রে সমরেশ নিজে নীলকন্ঠের মতো কালকূটকে অঙ্গে ধারণ করে অপরের মঙ্গলকামনায় অমৃতের সন্ধানে অমৃতবিহারী হয়ে উঠতে পারতেন। আর তাই হতে পারত তাঁর পক্ষে যথার্থ এবং সঙ্গতিপূর্ণ। সেদিক থেকে বুক ভরা গরল নিয়ে তাকে ধারণ করার ব্যর্থতার ‘হা অমৃত হা অমৃত’ করার মধ্যে কালকূট জেগে ওঠে কিন্তু তাতে তাঁর অমৃতের সন্ধানে পথ চলার সার্থকতার বিষয়টি আপনাতেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, ‘বিষবাহী প্রাণ’টি নীলকণ্ঠ হতে পারে না।