• facebook
  • twitter
Wednesday, 18 December, 2024

বেজিং ওলিকে কাছে টানল

নেপালের প্রধানমন্ত্রী চিন সফর করে বেজিংয়ের সঙ্গে নেপালের বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যের সম্পর্কে আরও পাকাপোক্ত করে সম্প্রতি ফিরে এলেন।

একদিকে বাংলাদেশে যখন সংখ্যালঘুদের পীড়ন চলছে, তখন ভারতের আরও অস্বস্তি বাড়িয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি চারদিনের চিন সফর করে বেজিংয়ের সঙ্গে নেপালের বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যের সম্পর্কে আরও পাকাপোক্ত করে সম্প্রতি ফিরে এলেন। লোকসভা নির্বাচন শেষে তৃতীয় বারের জন্য যখন নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন, তখন ওলির ভারত সফরের কথা ছিল, কিন্তু তা না করে তিনি চিন চলে গেলেন সে দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে। বাংলাদেশ যেমন ভারতের নিকটতম বন্ধু প্রতিবেশী, তেমনই নেপালও বন্ধু দেশ এবং নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ওলির সফরের ফলে, বেজিং নেপালকে আরও কাছে টেনে নিল। ওলির এই সফর এবং নেপাল ও চিনের মধে মাখামাখি ভারতকে একটি দুর্ভাবনার মধ্যে ফেলে দিল। ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে রয়েছে নেপাল, তার সঙ্গে বন্ধুত্বে চির ধরবে না বলে মোদী সরকার বিশ্বাস করে। কিন্তু নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলির যে মতিগতি, তাতে বোঝা যায় তিনি বেজিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাকে ভারতকে ভালো চোখে দেখার কথা নয়।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনওদিনই মসৃণ হল না এই দেশের জন্মের পর থেকেই। ভারত তিনটি বড় লড়াইয়ে সামল হয়েছে এই দেশটির সঙ্গে এবং প্রত্যেকটিতে পাকিস্তান পর্য্যুদস্ত হয়েছে। শেষের লড়াইয়ে ভারত পাকিস্তানকে দুই টুকরো করে দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দিয়েছে। নেপাল ভারতের বড় বন্ধু, কিন্তু নেপাল এখন বেশি ঝুঁকে পড়েছে চিনের সঙ্গে মহব্বত বাড়াতে, যা ভারতের সুখপ্রদ নয়। অপরদিকে ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের পর সেখানে একটি তদারকি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের ওপর চরম অত্যাচার চলছে। তাঁদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, মন্দির অপবিত্র ও মূর্ত্তি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে কট্টর মৌলবাদী ও পাকিস্তানপন্থীরা ভারত বিরোধী প্রচার চালাচ্ছে পুরোদমে। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক একটা বিরাট ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে চিন এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশ চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত করার দিকে ঝুঁকছে— স্বাধীন হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের অবদান না মেনে অথবা বর্তমান প্রজন্মকে তা বুঝিয়ে দিয়ে। সুতরাং ভারত এখন বাংলাদেশ ও নেপালের বন্ধুত্ব হারানোর মুখে। যদিও বাংলাদেশে যে সরকারই ভবিষ্যতে আসুক না কেন, তাকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছাড়া উপায় নেই। মৌলবাদীরা ভারত বিরোধিতা যে স্তরেই নিয়ে যাক না কেন, ভারতের সখ্য ছাড়া বাংলাদেশের চলা কঠিন।

বেজিং সফর করে নেপালের প্রধানমন্ত্রী খুব খুশি। তিনি সফর শেষে দেশে পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর চিন সফর সে দেশের সঙ্গে নেপালের বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় করবে। বেজিংয়ের সঙ্গে নেপালের দশটি প্রকল্প-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তার মধ্যে চিনের বেল্ট অ্যান্ড বেয়ত ইনিশিয়েটিভ অন্যতম। নেপাল ২০১৭ সালে চিনের এই প্রকল্পে যোগ দেয়। এই প্রকল্পে যোগদানের ফলে নেপালের তৈরি হবে নতুন সড়ক, রেল ও বিমানপথ। এই প্রকল্প মারফত চিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এমন কি ইউরোপ পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে চায়। কিন্তু চিন ও নেপাল এই প্রকল্পকে গুরুত্ব দিলেও, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এই প্রকল্পের কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। সেই জট কীভাবে কাটানো যায়, তা নিয়ে ওলি ও বেজিংয়ের শীর্ষ নেতদের আলোচনা হয়েছে। এই সফরে ওলি চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে।

বি আর আই প্রকল্প ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্প্রচার নিয়েও ওলি কথা বলেছেন অন্যান্য চিনা নেতৃবর্গের সঙ্গেও। কথা হয়েছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়েও। ২০২৫ থেকে ২০২৯ পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে চিন সর্বতোভাবে নেপালকে সাহায্য করবে। তাছাড়া চিনের বিনিয়োগকারীদের নেপালে বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করার আহ্বান জানিয়েছেন ওলি। রাজনৈতিক মহল মনে করে বি আর আই প্রকল্প বাস্তবে রূপায়ন হলে অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানা হবে। তাই এই প্রকল্প বাস্তবীকরণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু বেজিং বলেছে আপত্তি যতই থাক, চিন এই বি আর আই প্রকল্প কার্যকরী না করে ছাড়বে না।

নানা কারণেই চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে ক্রমশঃ অবনতি হচ্ছে। এর আগে নয়াদিল্লির ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও পোখরা বিমান বন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নতির জন্য নেপাল চিনের কাছ থেকে ২০ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য নিয়েছিল। কারণ ভারত সরকারের আশঙ্কা, সামরিক উড়ান ঘাঁটি হিসেবে পোখরা বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারে চিন। ফলে এই কাজ ভারতের অস্বস্তি বাড়িয়েছে নেপাল সরকার। ভারত আন্তরিকভাবেই চায় নেপালের সার্বিক উন্নয়ন। প্রতিবেশী হিন্দু রাষ্ট্র নেপালের সাবেক সম্পর্কে দিন দিন উন্নতি ঘটুক তাই চায় ভারত। কিন্তু বেজিং ও নেপালের মাখামাখি ভারত পছন্দ করছে না কোনওভাবেই।