• facebook
  • twitter
Sunday, 22 December, 2024

পুলিশ সুপারের কড়া নির্দেশ বন্ধ জুয়া-সাট্টা, খুশি বাসিন্দারা

কুমার সানি রাজ। রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার। দায়িত্ব পেয়েই কড়া হাতে দমন করেছেন জুয়া, সাট্টার আসর। খুশি বাসিন্দারা।

কুমার সানি রাজ। রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার। দায়িত্ব পেয়েই কড়া হাতে দমন করেছেন জুয়া, সাট্টার আসর। খুশি বাসিন্দারা।
কল্যাণী শহর। শিক্ষার শহর হিসেবেই পরিচিত। সেই শহরে আনাচে, কানাচে, রাস্তার ওপর, দোকানে অবাধে বসত জুয়া ও সাট্টার আসর। ফলে নিঃস্ব হতে বসেছিল বহু পরিবার। বাড়িতে ঝগড়া, অশান্তি, মারামারিও হয়েছে এই জুয়া ও সাট্টার কারণে। বহু অভিযোগ সত্ত্বেও বন্ধ করা যাচ্ছিল না। ক্ষোভ জমছিল স্থানীয়দের।

পুলিশ সুপার পরিবর্তন হতেই মেঘ না চাইতে জল পেলেন স্থানীয়রা। কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল জুয়াড়িদের। এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবারের মহিলা সদস্য বলেন, আমার স্বামী টোটো চালক। জুয়া, সাট্টা দুটোই খেলতেন। যা আয় হত বেশিরভাগটাই চলে যেত জুয়া খেলতে। শুনেছি পুলিশ নাকি জুয়া, সাট্টার আসর বন্ধ করে দিয়েছে। খুব খুশি হয়েছি। এখন অনেকটাই শান্তি ফিরেছে সংসারে।

পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজের পাশাপাশি জুয়া ও সাট্টার ঠেক ভাঙতে বদ্ধপরিকর হন গোটা পুলিশ ফোর্স। রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ ধাপোলা, ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) শেখ সামসুদ্দিন, কল্যাণী থানার আইসি দেবাশীষ পণ্ডা মিলে তৈরি করলেন টিম। শুরু হল টিম ওয়ার্ক। পুলিশের জালে ধরা পড়ল একের পর এক জুয়াড়িরা। ভাঙ্গা হল জুয়া,সাট্টার ঠেক। আনন্দে আত্মহারা হলেন স্থানীয়রা।

কল্যাণী সেন্ট্রাল পার্কের এক মহিলা বাসিন্দা সানন্দা মুখার্জি বলেন, সেন্ট্রাল পার্ক অঞ্চলে রাস্তার ওপর সাট্টা খেলা হত। যাতায়াত করার সময় শুনতে হত কটূক্তি। অস্বস্তি হত ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটতে। এখন আর ওই রাস্তার ওপর সাট্টা খেলা হয় না। পুলিশ সাট্টার ঠেক বন্ধ করে দিয়েছে। নিশ্চিন্তে যাতায়াত করি। কল্যাণী পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। শুনেছি, কল্যাণী শহরে পুরোপুরি জুয়া, সাট্টার আসর বন্ধ। খুব খুশি।

তপন চক্রবর্তী। কল্যাণীর প্রবীণ বাসিন্দা। তিনি বলেন, কল্যাণী শিক্ষার শহর। সেই শহরে জুয়া, সাট্টার ঠেক সত্যি নিন্দনীয় ছিল। কিন্তু এখন জুয়া, সাট্টার ঠেক পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে অজস্র ধন্যবাদ। এই ধারা যেন বজায় থাকে সেটাই পুলিশ প্রশাসনকে বলব।

পুলিশ সূত্রে খবর, কল্যাণী শহরের ঘোষপাড়া, সেন্ট্রাল পার্ক, কল্যাণী সীমান্ত, মাঝেরচর, শিল্পাঞ্চল সহ বিভিন্ন জায়গায় জুয়া ও সাট্টার ঠেক বসত। সবকটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে না হয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কপালে রীতিমত চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জুয়া ও সাট্টা ঠেকের মালিকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাট্টা ঠেকের মালিক বলেন, পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ দায়িত্ব পাওয়ার পরই শুরু হয়েছে চাপ। কল্যাণী থানার পুলিশ জুয়া, সাট্টার ঠেক আর চালাতে দিচ্ছে না। ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ। যারা লুকিয়ে ব্যবসা করতেন সেগুলিতেও রেইড হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনেকেই। পুলিশের ভয়ে কেউ আর জুয়া ও সাট্টার ঠেক চালাচ্ছে না।

রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ অফিসার ও কল্যাণী থানার পুলিশদের চাপে এলাকায় জুয়া ও সাট্টার ঠেক চালাতে ভয় পাচ্ছেন সাট্টার মালিকরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও কোথাও কোথাও লুকিয়ে জুয়ার আসর বসে। সংখ্যাটা নেহাতই খুবই কম। প্রতিদিন কল্যাণী শহরের বিভিন্ন জায়গায় জুয়া ও সাট্টার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। প্রতিদিন গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধৃতদের।

পুলিশ সূত্রে আরো খবর, গত এক মাসে জুয়া ও সাট্টার ঠেকে হানা দিয়ে ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ৮৬ হাজার টাকা। আগামী দিনেও জুয়া ও সাট্টার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।

আর পুলিশের এই উদ্যোগেই খুশি এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা সাধুবাদ জানিয়েছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার পুলিশ অফিসার ও কল্যাণী থানার পুলিশ অফিসারদের।