কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বৃহস্পতিবার লােকসভা অধিবেশনে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, সরকার পেঁয়াজের বেড়ে চলা দাম নিয়ন্ত্রণে শীঘ্রই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে তিনি যে পরিবারে মানুষ হয়েছেন সেখানে রসুন ও পেঁয়াজ বেশি ব্যবহার দেখেননি।
এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের পেঁয়াজের বেড়ে চলা অস্বাভাবিক মুল্যের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্দশা অসহনীয় হয়ে পড়েছে এবং সরকার এব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিই পেঁয়াজের চাষ করে থাকেন। তাদের সুরক্ষায় সরকারি কোনও ব্যবস্থাই নেই বলে সাংসদ মন্তব্য করেন।
নির্মলা সীতারামন উত্তরে জানান, সরকার পেঁয়াজ চাষিদের জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে কাঁচা আনাজ মজুত করার পরিকাঠামাে তৈরি করা হচ্ছে। তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকেই মন্ত্রিসভার বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে তিনি যুক্ত। পেঁয়াজের দামে ওঠাপড়া দেখে আসছেন । সরকার উদ্বৃত্ত ফসলের রফতানির জন্য উদ্যেগ নিয়েছে। তিনি জানান, পেঁয়াজ চাষের এলাকা হ্রাস পেয়েছে ফলে উৎপাদনও কম হয়েছে।
দেশের অধিকাংশ স্থানেই পেঁয়াজের মূল্য একশাে টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম কমার কোনও সম্ভানা নেই, এমনটাই দাবি টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকদের একাংশের। তাঁদের কথায়, এখনই ১০০ টাকার নীচে পেঁয়াজের মূল্য নামার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ।
এদিকে পেঁয়াজের মাত্রাছাড়া মূল্যবৃদ্ধির জন্য বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারকেই দুষলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরনগরােন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পাত থেকে পেঁয়াজ রীতিমতাে ‘ভ্যানিশ’। কলকাতার বাজারগুলিতে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। কোনও কোনও বাজারে দাম আরও বেশি।
এই অগ্নিমূল্য পেঁয়াজের দরুন রাতারাতি পেঁয়াজির দামও বেড়ে কোথাও ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা আবার কোথাও কোথাও ৯ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন খাবারের দোকানে পেঁয়াজ পেলেই মুচকি হেসে দোকানদারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন অনেকে, আবার অনেকে সেই পেঁয়াজের ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে পােস্ট করছেন।
দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, তাঁর বাড়িতে পেঁয়াজ রসুন ঢােকে না। অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে পেঁয়াজ না খাওয়া হলেও দেশ তথা রাজ্যবাসীর বৃহৎ অংশের কাছেই পেঁয়াজ নিত্যদিনের প্রয়ােজন। কিন্তু পেঁয়াজের এই আকাশছোঁয়া দামে হেঁসেল চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যবাসী।
এই লাগামছাড়া মূল্যে এই মুহুর্তে রাশ টানা সম্ভব নয়, এমনটাই মন্তব্য করছেন টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা। তাদের কথায়, যদি কেন্দ্র সরকার কোনও ব্যবস্থা না নেয় সেক্ষেত্রে পেঁয়াজের মূল্য কমার কোনও সম্ভাবনা ডিসেম্বর মাস অবধি নেই। এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টাস্ক ফোর্সের তরফে বলা হয়, এই রাজ্যে মােট ৫ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু পেঁয়াজের চাহিদা থাকে কমপক্ষে ৮ লক্ষ মেট্রিক টন। ফলে বাকি ৩ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ অন্যান্য রাজ্য থেকে আমদানি করা হয়। যেহেতু জানুয়ারি মাসের আগে নতুন পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাই এখনই মুল্য কমারও কোনও সম্ভাবনা নেই, জানা গেছে এমনটাই।
এই পরিস্থিতির জন্য অপরিকল্পিত সংরক্ষণই দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, রাজ্যে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের গাফিলতির জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।