সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়
‘ঢাকা থাকুক মাথা, সুরক্ষায় শেষ কথা’। শহরের মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের হেলমেট পড়তে আগ্রহী করে তুলতে এমই প্রচার চালিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। রাস্তার ধারের হোর্ডিং থেকে শুরু করে পেট্রোল পাম্প, সর্বত্র এই প্রচার চালিয়েছিল কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এতো প্রচারের ফল কি মিলবে? সন্দেহ ছিলই। এবার তা সত্যিও হল গত এক মাসে বাইক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান থেকে। কিন্তু তাতে কী? হেলমেট পড়লে গরম লাগে, মাথা ধরে আসে, পাড়ার মোড়ে চা খেতে আসলেও হেলমেট লাগবে! পুলিশি ধরপাকড়ে চালকদের যুক্তি এমনটাই।
লালবাজার সূত্রে খবর, কলকাতা পুলিশের দশটি ডিভিশন মিলিয়ে গত নভেম্বর মাসে মোট বাইক দুর্ঘটনার কেস নথিভুক্ত হয়েছে ৫০টি। যার মধ্যে হেলমেটবিহীন অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে বাইক চালিয়ে দুর্ঘটনার কেস নথিভুক্ত হয়েছে ২০টি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে ৪জনের। আহতদের সংখ্যাটাও বেশ ভালই। তবে এতো কিছুর পরেও ফেরানো যায়নি হুঁশ। হেলমেট পড়লে গরম লাগে, মাথা ধরে আসে, পাড়ার মোড়ে চা খেতে আসলেও হেলমেট লাগবে! পুলিশি ধরপাকড়ে চালকদের যুক্তি এমনটাই। বর্তমানে হেলমেট ছাড়া রাস্তায় বেরলে মোটরযান আইনের ১২৮ এবং ১৯৪(সি) ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। জরিমানা হিসেবে খসাতে হয় করকরে ১০০০ টাকাও। অন্যদিকে একই অভিযোগ বারবার উঠলে, লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করারও নিদান রয়েছে মোটরযান আইনে। যার ফলে বাইক চালকদের একাংশের মনোভাব পরিবর্তন করা গেলেও লালবাজারের কর্তারদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তরুণ প্রজন্ম। শহরে কাদের মাথা ফাঁকা? তা জানতে সম্প্রতি বিশেষ সমীক্ষা চালিয়েছিল কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। তাতেই উঠে এসেছে কপাল কুঁচকে যাওয়ার মতো তথ্য। সমীক্ষা বলছে, হেলমেটবিহীন সওয়ারিদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্ম। যাদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে। সমীক্ষা আরও বলছে, হেলমেট না পড়ে রাস্তায় বেরনোর অভিযোগ বেশি রাতের শহরে। একদিকে শীতের ফুরফুরে বাতাস, অন্যদিকে কুয়াশা। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে বেশি। শহরের এক ট্রাফিক সার্জেন্টের কথায়, ‘রাতের দিকে রাস্তাঘাট মোটের উপর ফাঁকাই থাকে। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কম। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এমনই সব দাবি চালকদের’। এ বিষয়ে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলছেন, ‘আমরা বরাবরই মানুষের জীবনকে প্রাধান্য দিই। সেই মতো নাকা চেকিংও চলে সারা বছর। বারংবার চালকদের বোঝানো হয়। তা সত্বেও বদল ঘটে না পরিস্থিতির। আশা করি চালকরা সতর্ক হবেন’।