ডায়েট করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ হয় এটা সকলেই জানেন, কিন্তু ডায়েটিং মানেই খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেওয়া নয়। ইদানীং উপোস করাটাকে ওজন নিয়ন্ত্রণের অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু ডায়েটিং-এর অর্থ হল অল্প খাওয়া কিন্তু সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
হেলদি ডায়েট কী ?
হেলদি ডায়েটের অর্থ হল সেই খাবার যাতে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেটস, ফ্যাট ও সমস্ত ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যদি খাবারে প্রোটিনের অভাব থাকে, তাহলে শরীরে এনার্জি তৈরি হবে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। এছাড়া বিভিন্ন উপাদানের ঘাটতি থেকে আলাদা আলাদা রোগের সূত্রপাত হতে পারে। যেমন ক্যালসিয়াম শরীরের পেশির কার্যক্ষমতা সঠিক রাখার সঙ্গে সঙ্গে মেটাবলিজম-এরও সম্পূর্ণ খেয়াল রাখে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ক্ষয় পর্যন্ত হতে পারে। আবার কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট— এগুলো এনার্জি দেয় সঙ্গে হেলদি কোষ নির্মাণেও সাহায্য করে। আয়রন শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সারা শরীরে অক্সিজেন পৌঁছতে সাহায্য করে। আয়রনের অভাবে রক্তাল্পতার সমস্যা হয়। সুতরাং কম খেলেও, এমন খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, যাতে শরীর সুস্থ থাকতে পারে।
ডায়েটিং করবেন কখন ?
ওজন যদি মাত্রাছাড়া হয়ে যায়, অনেকেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যা কিনা ওজন আরও বাড়ায়। অবসাদের কারণ যে-হরমোন, সেটির সিক্রিশনের মাত্রা বেড়ে যায়। এটিই আমাদের শরীরে খিদে বৃদ্ধি করে ।
সুতরাং উচিত হচ্ছে খালি পেটে না থাকা, খাবারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সঠিক খাবার বেছে নেওয়া। খাবারে রাখুন অধিক ফাইবার-যুক্ত ডিশ এবং মিষ্টির জায়গায় রাখুন ফলের স্যালাড।
ব্রেকফাস্ট করা কিন্তু জরুরি
দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার ব্রেকফাস্ট। যদি ব্রেকফাস্ট মিস করেন, তাহলে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি লস করবেন। ডিনারের পর দীর্ঘ সময় যেহেতু পেট খালি থাকে, তাই সকালে উপযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। কারণ, সবসময়ই অ্যাসিড জাতীয় একপ্রকার পাচন রস উৎপন্ন হতে থাকে আমাদের পাকস্থলিতে।
যদি দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকে, তাহলে ওই রস স্টমাকের ক্ষতি করে। তাছাড়া, আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এবং মস্তিষ্কের জন্য প্রচুর এনার্জির প্রয়োজন হয়, যার বেশিরভাগটাই জোগায় সকালের খাবার। সারাদিন শরীর সতেজ রাখার জন্যও উপযুক্ত ব্রেকফাস্ট করা জরুরি।
খাবার স্টমাকে গিয়ে তা হজম হওয়ার পর এনার্জিতে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াই হল মেটবলিজম। তাই, যদি ব্রেকফাস্ট না করা হয় তাহলে ধীরে ধীরে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে অর্থাৎ হজমশক্তি কমবে। আর যদি হজমশক্তি কমে যায়, তাহলে খাবার এনার্জিতে রূপান্তরিত হবে না। ফলে শরীরে ফ্যাট জমতে শুরু করবে।
অর্থাৎ যারা স্লিম হওয়ার জন্য খাওয়া কমিয়ে দেন কিংবা মাঝেমধ্যে উপোস থাকেন মনে রাখুন, যদি না খেয়ে স্টমাক খালি রাখেন, তাহলে বিপরীত ফল পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, দিনের অনেকটা সময় উপোস থাকলে রোগা হওয়ার পরিবর্তে ওয়েট বাড়বে আর লিভারের অসুখ হতে পারে।
উপোসের সমস্যা
যদি দেখেন উপোস করে থাকলে আপনার গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা হচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে যে, আপনার উপোস করা চলবে না। যাঁদের গ্যাসট্রিক বা পেপটিক আলসারের সমস্যা আছে, বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়, তাঁরাও উপোস করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা জল না খেয়ে থাকলে শরীর আর্দ্রতা হারাতে আরম্ভ করে একটা সময়ে। চেষ্টা করুন গোটা ফল, ফলের রস, নিরামিষ স্যুপ বা ডালের জল খাওয়ার। কিছুক্ষণ পর ভারী খাবার খেতে পারেন, তবে হালকা রান্নাই ভালো। ডাল, ভাত, সবজি খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সবচেয়ে ভালো হয়, যদি রাতের খাওয়াটা আটটার মধ্যে সেরে ফেলতে পারেন। পরদিন সকাল আটটা বা সাড়ে আটটার আগে আর সলিড কিছু খাবেন না। জল খেতে পারেন। অতিরিক্ত কম খাওয়ার ফলে খুব দুর্বল লাগলে বা বমি ভাব হলেও বুঝতে হবে আপনার শরীর ডায়েটিং নিতে পারছে না। তাই একজন প্রফেশনালের থেকে ডায়েট চার্ট তৈরি করিয়ে সেটা মেনে চলুন।
বাড়িতে রোজ কী খাবেন?
হালকা তেল মশলায় রান্না করা খাবার, ফল বা ছানার উপর আস্থা রাখুন। ওজন কিন্তু কেবল উপোস করলে বা কম খেয়ে থাকলেই কমবে না। আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মও। ব্যায়াম করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে, জল খেতে হবে প্রচুর। তবেই ভালো থাকবেন।