২০১৮-এর আগস্টের পর শহরে ফের এটিএম আতঙ্ক গ্রাস করল। গত দু’দিনে জালিয়াতরা হাত সাফাই করেছে ৫ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২২ জন। শনিবার রাত থেকে একের পর এক অভিযােগ দায়ের হয়েছে যাদবপুর থানায়। তদন্তে নেমেছে কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা বিভাগ। ডেটা চুরি করে ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে ডেটা বিক্রি করে থাকতে পারে অভিযুক্তরা বলে অনুমান কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মার।
১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে এক একবারে টাকা তােলা হয়েছে। দিল্লি থেকেই এই টাকা তুলে নিয়েছে অভিযুক্তরা। তিন মাস ছাড়া ছাড়া এটিএমের ওটিপি বদলের পরামর্শ দিয়েছে গােয়েন্দা প্রধান। সঙ্গে এও বলেন, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্তই দীর্ঘদিন এটিএমের ওটিপি বদল করেননি। একই সঙ্গে শহরের এটিএম কিয়স্ক পেট্রোলিং ফের শুরু করা হবে বলেও জানান যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) মুরলীধর শর্মা।
তদন্তকারী আধিকারিক জানিয়েছেন, মূলত শহরের দুটি এটিএম ব্যবহার করেই এই টাকা গায়েব হয়েছে প্রায় নিশ্চিত। এটিএম দুটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের। সেই এটিএম কিয়স্কগুলি খতিয়ে দেখেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি ব্যাঙ্ক ফ্রড শাখার আধিকারিকরা। ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের তরফ থেকে পুলিশকে জানানাে হয়েছে, ওই এটিএম মেশিনগুলিতে এখন আর কোনও স্কিমিং মেশিন লাগানাে নেই। বর্তমানে ওগুলি সুরক্ষিত। চলতি বছরের এপ্রিলে শহরের এটিএম মেশিনগুলি পরীক্ষা করে দেখার সময় যাদবপুরের ওই এটিএম থেকে স্কিমিং ডিভাইস পাওয়া যায়। যাদবপুর থানায় দায়ের হওয়া অভিযােগের মধ্যে ৮০ শতাংশই পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের গ্রাহক বলে জানান ওই গােয়েন্দা আধিকারিক।
প্রসঙ্গত, রােমানিয়ান গ্যাং’র ৮ জন ধরা পড়লেও এখনও এক অভিযুক্ত ফেরার। গােয়েন্দাদের সন্দেহ ওই দুবৃত্ত নেপালে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। গত বছর এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় চলতি বছরের অগাস্টে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করেন কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দারা। এই কাণ্ডের পর ধৃত রােমানিয়ান গ্যাংয়ের সদস্যদের জেরা করা হবে বলে জানিয়েছে এক গােয়েন্দা কর্তা। তবে এপ্রিল মাসের পর আর কোনও এটিএম কিয়স্কে স্কিমিং ডিভাইস রাখার ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি। কারণ শহরের সব এটিএম কিয়স্কে বসেছে নতুন মেশিন। তবে এপ্রিল মাসে যে দুটি কিয়স্ক থেকে স্কিমিং ডিভাইস মিলেছিল তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেছে গােয়েন্দারা।
এক গােয়েন্দা আধিকারিক পূৰ্বাভিজ্ঞতা থেকে আরও জানান, স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে অনলাইনে লাইভ ডেটা চুরি করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এটিএমে স্কিমিং ডিভাইস লাগানাে থাকলে গ্রাহক এটিএম কার্ড লাগিয়ে ওটিপি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কোনও স্থানে বসে সেই ডেটা চুরি করতে পারে জালিয়াতরা তদন্তে এমন প্রমাণও হাতে আসে কলকাতা পুলিশের গােয়েন্দাদের।
তবে এক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটেছে কিনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ধরা পড়েছে তুর্কির এক এটিএম জালিয়াতি গ্যাং। যাদের সঙ্গে এক বাংলাদেশিও ছিল। তারা ত্রিপুরা থেকে ডেটা চুরি করে নিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে আত্মগােপন করেছিল। বারাকপুর কমিশনারেটের গােয়েন্দারা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তদন্তে জানা যায়, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে তারা জাল এটিএম কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নেয়। প্রয়ােজনে তাদেরকেও জেরা করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
একই সঙ্গে শহরের এটিএম কিয়স্কগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে গত বছরই শুরু হয়েছিল নজরদারির প্রক্রিয়া। বিভিন্ন থানার তরফ থেকে দিনে একবার করে নিজেদের এলাকায় বাইক পেট্রোলিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় যে ঢিলে পড়েছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক। ফের এটিএম কিয়স্কগুলিকে পুলিশি নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে দিনে একবার করে বাইকে পুলিশকর্মীরা নিজের এলাকার এটিএম কিয়স্কগুলি ঘুরে দেখে আসবেন। প্রয়ােজনে এটিএম সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলে প্রয়ােজনীয় সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ এসেছে খােদ কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তার থেকেই।
এটিএম থেকে টাকা লুঠ হয়েছে এমন এক অভিযােগকারী জানিয়েছেন, রবিবার তার ফোনে দু’টি পর পর মেসেজ ঢােকে। সেখানে দুই খেপে ১০ হাজার করে টাকা তুলে নেওয়া হয়। দিল্লির কোনও এটিএম থেকে এই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও ওই মেসেজেই জানতে পারেন অভিযােগকারী। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন। সেখান থেকে তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানানাে হয়। এমনই প্রায় ২৫ জনের টাকা লুঠ করেছে জালিয়াতরা বলে জানা গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ছাড়াও বেসরকারি ব্যাঙ্কের কিছু গ্রাহকও প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও খবর।