ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার হাজির ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একঝাঁক শীর্ষস্তরের নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাঁচিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, ‘ধর্মের নামে হিংসা আমরা সমর্থন করিনা। যে কোনও হিংসার ঘটনাই নিন্দনীয়।কিন্তু আমাদের কেন্দ্রের সরকারও একটা বিশেষ ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্বেষ পোষণ করে। এটা ঠিক নয়। মন্দির থাকবে, মসজিদও থাকবে। ধর্ম যার যার। আমরা শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে। মানুষ যাতে তাঁর ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করতে পারেন তা সরকারের দেখা উচিত।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে মমতা বলেন, ‘ এই বিষয়ে রাজ্যের ক্ষমতা সীমিত। এটি দুটি দেশের বিষয়। এক্ষেত্রে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই। আমরা যেমন বাংলাদেশকে ভালোবাসি, তেমনই বাংলাদেশের মানুষও আমাদের ভালোবাসেন। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, পোশাক সবই এক। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও ধর্মে ধর্মে বিভেদ কারও কাম্য নয়।’ তিনি বলেন’ যে কোনও ধর্মের উপর হিংসার ঘটনা নিন্দার। হিন্দু হোক বা মুসলমান আমরা সবাই সমান, এটাই আমাদের নীতি।’
এদিনের অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, পঞ্জাবের আপ মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, হিমাচল প্রদেশের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু, হেমন্ত সোরেনের শরিক দল সিপিআইএমএল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, আম আদমি পার্টির আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শিবসেনা ঠাকরে গোষ্ঠীর নেতা উদ্ধব ঠাকরে, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ও মহাগাঁটবন্ধনের শরিক দল আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পুত্র উদয়নিধি স্ট্যালিন ও কর্নাটকের কংগ্রেসের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার প্রমুখ। এককথায় বলতে গেলে চাঁদের হাট।
লোকসভা ও চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে ইন্ডিয়া বনাম এনডিএ জোটের। নির্বাচনী ফলাফলের পর তথাকথিত কংগ্রেসের প্রভাব অনেকটাই স্তিমিত। জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডে জিতেছে ইন্ডিয়া জোট জিতেছে। অন্যদিকে, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র দখল করেছে মোদী নেতৃত্বাধীন এনডিএ। ভোটের ফলাফলে কংগ্রেসের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। লোকসভা ভোটে ৯৯ আসনে জিতে কংগ্রেস জোটের প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করলেও বিভিন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়ে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বও বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে।চাপের মুখে রয়েছে অন্য দলগুলিও।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় কার্যত জোটের মূল চালিকা শক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় তৃণমূল নেত্রী অনেকটাই এগিয়ে। ফলে ইন্ডিয়া জোটের রাশ এখন আর কংগ্রেসের হাতে নেই বললেই চলে।জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের জয় থমকে যাওয়ায় যথেষ্ট চাপের মুখে রয়েছে রাহুল।
বৃহস্পতিবার রাঁচির মোরাবাদী মাঠে হেমন্ত সোরেনকে শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল সন্তোষকুমার গঙ্গোয়ার। এদিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সেজে ওঠে রাঁচি। কারণ গত লোকসভা ভোটে বিজেপিকে যথেষ্ট চাপ দিয়েছে ইন্ডিয়া জোট। সব থেকে বড় কথা একক সংখ্যাগরিষ্ঠ জায়গায় পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। তাই অন্ধ্রপ্রদেশের তেলুগু দেশম ও বিহারের জেডিইউয়ের কাঁধে ভর রেখে সরকার গড়তে হয়েছে। সেই হিসাবে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের সদস্যদের উপস্থিতি এদিন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন তাঁর বাবা এবং তিনবারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেনও । এবার জেএমএম কংগ্রেস, আরজেডি এবং বামদের সঙ্গে জোট করে ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট ৫৬টি আসন জেতে। ঝাড়খণ্ড বিধানসভার মোট সদস্য সংখ্যা ৮১। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ছিল ৪১।