গত আগস্টে বাংলাদেশে পতন ঘটেছিল শেখ হাসিনার সরকারের। তবে তাতেও শান্ত হয়নি পরিবেশ। উলটে তার পর থেকেই সে দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস ঘেরাওয়ের ডাক দেয় ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’। মিছিলকে ঘিরে সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় কলকাতা পুলিশ। মিছিল বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় পুলিশকর্মীদেরও। মাথা ফাটে কড়েয়া থানার এক কর্তব্যরত এসআইয়ের।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মাঝে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন মিলে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ গঠন করেছে। এই মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে ঢাকার শহিদ মিনার চত্বরে এবং চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার সংখ্যালঘু মানুষ সমবেত হন। এরপর এক বিএনপি নেতা চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে সে দেশের পুলিশ। সেই মামলার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবিতে একটি মামলা দায়ের হয়, যা অবশ্য বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেয় সে দেশের হাইকোর্ট।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার ‘বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ শিয়ালদহ থেকে বেকবাগানে অবস্থিত বাংলাদেশ উপদূতাবাস পর্যন্ত একটি মিছিলের আয়োজন করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপদূতাবাসের বাইরে আগেই মোতায়েন ছিল পুলিশ। ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকানোর চেষ্টা করা হয়, কিন্তু আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। তাতেই আহত হন কড়েয়া থানার এসআই কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস। মাথায় চোট লাগে তাঁর। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি। উল্লেখ্য, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর উপর হামলার অভিযোগ এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, ‘কারা হামলা চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। খুব দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতির জেরে কলকাতার নিরাপত্তা বাড়িয়েছে পুলিশ। সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নিউমার্কেট, রুবি এবং আনন্দপুরের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন হোটেল ও গেস্ট হাউসে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
পুলিশ ওই হোটেলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিটি ব্যক্তির নথিপত্র যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতেও চালানো হচ্ছে বাড়তি নজরদারি । অশান্তি এড়াতে বাড়ানো হয়েছে টহলদারিও।
এ দিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি ইসকনের সঙ্গে দু’বার কথা বলেছি। তবে এটি দুই দেশের বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তার সঙ্গেই থাকব।’