ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে গত তিনদিন ধরে সংসদে তোলপাড় চলছে। মনে করা হচ্ছে, আগামী বছর বাজেট অধিবেশনে এই বিল পেশ করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংসদে জানিয়েছেন, সারা দেশে ওয়াকফ বোর্ডের ৫৮ হাজারেরও বেশি সম্পত্তি বর্তমানে জবরদখলের কবলে।
বুধবার লোকসভায় বিজেপি সদস্য বাসভরাজ বোমাইয়ের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, মন্ত্রক এবং দেশের কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল (সিডব্লিউসি) বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ পেয়েছে। বর্তমানে দেশের ওয়াকফ বোর্ডের ৫৮ হাজার ৯২৯টি সম্পত্তির উপর দখল রয়েছে। এই সম্পত্তিগুলির মধ্যে ৮৬৯টি কর্ণাটকে রয়েছে।
কিরেণ রিজিজু বলেন, মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল (সিডব্লিউসি) বিভিন্ন সময় ওয়াকফ সম্পত্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছে। এই সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপের জন্য রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট সরকারগুলিতে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ওয়াকফ আইনের ৫৪ এবং ৫৫ ধারা অনুসারে, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসারের। ওয়াকফ সম্পত্তির অননুমোদিত দখল এবং দখলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওয়াকফ সম্পত্তি কোনও অবস্থাতেই ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। ওয়াকফ সম্পত্তিও হস্তান্তর করা যাবে না।
ওয়াকফ আইনে তৃতীয় সংশোধনী করতে দুটি বিল এনেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওয়াকফ বিল ১৯৫৪ বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং এর জায়গায় একটি নতুন বিল আনা হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনটিও সংশোধন করা হচ্ছে। মোদী সরকার এই ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়া সীমাহীন ক্ষমতা রোধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংশোধনের পরে, বোর্ডকে যে কোনও জমিকে ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করার আগে যাচাই করতে হবে।
ওয়াকফ অর্থ আল্লাহর নামে জমি, অর্থাৎ যে সব জমি কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নয়, বরং মুসলিম সমাজের অন্তর্গত সেগুলোই ওয়াকফ জমি। এর মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, ইদগাহ, সমাধি এবং প্রদর্শনী স্থান ইত্যাদি। কিন্তু দেখা গিয়েছে, এ ধরনের জমির অপব্যবহার এমনকী বিক্রিও হচ্ছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জমি নিয়ন্ত্রণের জন্য ওয়াকফ বোর্ড তৈরি করা হয়েছিল। ওয়াকফ জমির ব্যবহার বন্ধ করতে এবং অবৈধ উপায়ে জমি বিক্রি হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ওয়াকফ বোর্ড তৈরি করা হয়েছিল।
ওয়াকফ আইন ১৯৫৪ সালে পাশ হয়। এরপর থেকে এটি বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধন করে, ওয়াকফ বোর্ডকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এই অনুসারে, ওয়াকফ বোর্ড যদি কোনও সম্পত্তি দাবি করে তবে তা তার সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। দাবি মিথ্যা হলে সম্পত্তির মালিককে তা প্রমাণ করতে হবে।