সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়
গত ১২ নভেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারিয়েছিল তৃতীয় শ্রেণির এক খুদে পড়ুয়া। মানিকতলার বাসিন্দা বছর এগারোর আয়ুষ পাইকের মৃত্যু মনে করিয়ে দিয়েছিল এক বছর আগের বেহালার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্মৃতি। মাটিবোঝাই লরি সরাসরি ধাক্কা দেয় পড়ুয়া সৌরনীল সরকার ও তার বাবাকে। আর তার জেরে প্রাণ গিয়েছিল বড়িশা হাইস্কুলের প্রাইমারি সেকশনের খুদে পড়ুয়ার। অন্যদিকে সম্প্রতি গত অক্টোবরে মহালয়ার দিন সকালে টিউশন পড়তে বেরিয়ে পে লোডারের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা সৌম্য শীলের। সবকটি মর্মান্তিক পরিণতির নেপথ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতির উল্লেখ। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১২ নভেম্বরের ঘটনার পরেই রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অবিলম্বে রাজ্যে বাসের রেষারেষি বন্ধ না হলে আইনই পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। আর এবার শহরে বিপজ্জনক ড্রাইভিং রুখতে তৎপর হল কলকাতা পুলিশ। তা ছাড়া শহরে যেন কোনও ভাবেই বাসের রেষারেষি না হয়, সে দিকেও নজর দিচ্ছে লালবাজার।
কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সুত্রে খবর, শহরে যেন কোনও ভাবেই বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চলাচল না করে সে জন্য ইতিমধ্যেই বৈঠক করা হয়েছে শহরের বাস সংগঠন থেকে শুরু করে পুলকার সংগঠনগুলির সঙ্গে। সে বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তা জানান, ‘আমাদের মোট ২৬টি ট্রাফিক গার্ড রয়েছে। তাদের সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। শহরের যে কোনও প্রান্তে যদি র্যাশ ড্রাইভিং চোখে পড়ে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। ওই ট্রাফিক কর্তার কথায়, ‘শহরের বাস মালিক সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে। বেপরোয়া গতি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যাবেনা বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে স্পষ্ট’।
ইতিমধ্যেই শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে উত্তুরে হাওয়া। প্রতিদিনই কুয়াশার চাদরে মুখ ঢাকছে শহর। সেক্ষেত্রে কমছে দৃশ্যমানতাও। তাই বিশেষ করে রাত থেকে ভোরের মধ্যে যেন কোনও গাড়ি বেপরোয়া গতিতে শহরে বুক চিরে না ছোটে, সে দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে ট্রাফিক গার্ডগুলিকে। লালবাজার সূত্রে খবর, রাতের শহরে থাকছে অতিরিক্ত নাকা চেকিং পয়েন্ট। অন্যদিকে শহরে শীত জাঁকিয়ে পড়তেই শুরু হবে বিভিন্ন স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে ভিড় বাড়তে শুরু করবে আলিপুর চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো দর্শনীয় স্থানগুলিতেও। তাই বেপরোয়া গতির রাশ টানতে নজর থাকছে সেদিকেও। লালবাজারের ট্রাফিক বিভাগের ওই কর্তার কথায়, ‘শীতের মরশুমে যেহেতু শহরের স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে, তাই শিশুদের সুরক্ষা আমাদের কাছে বড় বিষয়। সে জন্য পুলকার সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে’।
যদিও কলকাতা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০২৩ সালে র্যাশ ড্রাইভিংয়ের অভিযোগ সবথেকে বেশি উঠেছে মোটরবাইকের বিরুদ্ধে। সংখ্যার নিরিখে যা ২১২৪৭। একই শ্রেণিতে মোটরবাইকের পরেই জায়গা পেয়েছে ব্যক্তিগত চারচাকা গাড়ি। ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করার জন্য মোট ৭৭৬১টি কেস হয়েছে প্রাইভেট গাড়ির বিরুদ্ধে। বিপজ্জনক গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ সব থেকে কম স্কুল বাসের বিরুদ্ধে মাত্র ১টি।